• উৎসবের মরসুমে কলকাতার বিভিন্ন উচ্চবিত্ত পরিবারে মাদক সরবরাহ! পুলিশি অভিযানে পর্দা ফাঁস ...
    আজকাল | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: দুর্গাপুজোর ঢাকে পড়ে গিয়েছে কাঠি। গোটা রাজ্য জুড়ে বাঙালি এখন দুর্গাপুজোর উৎসবে মাতোয়ারা। এই উৎসবের মরশুমে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে নেশার জন্য ব্যবহৃত মাদক, হেরোইন, পাচার করতে গিয়ে মুর্শিদাবাদের লালগোলা থানার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হল দুই ভাই। 

    মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার অতিরিক্ত সুপার (লালবাগ) রাসপ্রীত সিং বলেন,' ধৃত দুই ব্যক্তির হেফাজত থেকে মোট ১ কেজি ৫০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার হয়েছে। ধৃতরা কোথা থেকে এত বিপুল পরিমাণ হেরোইন পেয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।' হেরোইন পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া দুই ব্যক্তিকে শুক্রবার মুর্শিদাবাদের বিশেষ এনডিপিএস আদালতে দশ দিনের পুলিশ হেফাজতের আবেদন করে পেশ করা হচ্ছে। 

    জেলা পুলিশের এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন, ধৃত দুই ভাইয়ের হেফাজত থেকে যে হেরোইন উদ্ধার রয়েছে তার গুণমান অত্যন্ত উন্নত। আন্তর্জাতিক বাজারে উদ্ধার হওয়া হেরোইনের দাম প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা। 

    লালগোলা থানার এক আধিকারিক জানান, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে দক্ষিণ লতিবেরপাড়া এলাকায়  জাইদুর রহমান  এবং তার ভাই সাইদুর রহমানের বাড়িতে হানা দেওয়া হয়। পুলিশের কাছে খবর ছিল, ধৃত দুই ভাই প্রায় তিন কেজির বেশি হেরোইন নিজেদের বাড়িতে গোপনে মজুত করে রেখেছে। যদিও পুলিশে অভিযানে দু'জনের বাড়ি থেকে  ১ কেজির কিছু বেশি হেরোইন উদ্ধার হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। 

    জেলা পুলিশের আধিকারিক জানান, জাইদুর এবং সাইদুরের বাড়ি থেকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত মাত্র ৫০০ মিটার দূরে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে ভিন রাজ্যের কোনও মাদক মাফিয়ার কাছ থেকে এই দুই ভাই নিয়মিত হেরোইন নিয়ে আসত। এরপর আন্তর্জাতিক সীমান্তে বিএসএফের নজরদারি এড়িয়ে তারা বাংলাদেশে সেই মাদক পাচার করে দিত। 

    ওই আধিকারিক আরও বলেন ,উৎসবের মরশুমে কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকার বেশ কিছু হোটেলে 'পার্টি'র জন্য উন্নত গুণমানের হেরোইনের চাহিদা প্রতি বছর থাকে। পুলিশের অনুমান এই দুই ভাই কলকাতার বিভিন্ন  হোটেলগুলোতে এবং বেশ কিছু উচ্চবিত্ত পরিবারে নিয়মিত  হেরোইন সরবরাহ করত। 

    লালগোলা থানার এক আধিকারিক যদিও জানিয়েছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দুই ভাই দাবি করেছে তারা হেরোইন পাচারের সঙ্গে  জড়িত নন। দু'জনেই দাবি করেছেন তারা রাজমিস্ত্রির কাজ করে। ওই আধিকারিকের দাবি, সাম্প্রতিক সময়ে লালগোলা থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে যতজন পুরুষ ধরা পড়েছে অদ্ভুতভাবে তাদের সকলের দাবি প্রত্যেকেই রাজমিস্ত্রির কাজ করে।  পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে মাদক পাচারের মামলায় এর আগেও সাইদুর রহমান একবার গ্রেপ্তার হয়েছে এবং বর্তমানে আদালত থেকে জামিন পেয়ে বাইরে রয়েছে। 

    লালগোলা থানার অন্তর্গত বিভিন্ন গ্রাম দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে হেরোইনের কারবারের জন্য কুখ্যাত। আশির দশকে  লালগোলা এলাকার কিছু ব্যক্তি রাজমিস্ত্রির কাজ করার জন্য রাজস্থানে গিয়েছিল। অনেক পুলিশ আধিকারিক দাবি করেন, সেখানে কাজ করার সময় কিছু মাদক মাফিয়ার সঙ্গে পরিচয় হয় মুর্শিদাবাদের পরিযায়ী শ্রমিকদের। এরপর সেখানেই তারা হেরোইন তৈরির কৌশল রপ্ত করে। এরপর মুর্শিদাবাদে ফিরে এসে সেই মাদক তৈরির কৌশল আরও বহু লোককে শিখিয়ে দেয়। একটা সময় লালগোলার প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে হেরোইন তৈরি একপ্রকার কুটির শিল্পে পরিণত হয়েছিল বলে অভিযোগ। এই মাদক বাংলাদেশে  পাচার করে লালগোলা এলাকার বহু মানুষ একদিকে যেমন কোটিপতি হয়েছে ,তেমনই মারণ এই নেশার কবলে পড়ে বহু পরিবার সর্বস্বান্ত হয়ে গিয়েছে। 

    মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার ওই আধিকারিক জানিয়েছেন, গত কয়েক মাসে কেবলমাত্র লালগোলা থানা এলাকা থেকে ৬-৭ কোটি টাকার উন্নতমানের হেরোইন উদ্ধার হয়েছে।  বর্তমানে লালগোলায় হেরোইন তৈরির কারবার সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেলেও  এই এলাকায় এখনও কিছু মাদক মাফিয়া সক্রিয় রয়েছে বলে খবর।  তারা ভিন রাজ্যের মাদক মাফিয়াদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে লালগোলাতে হেরোইন নিয়ে আসে এবং তারপর সেই মাদক আন্তর্জাতিক সীমানা পার করে বিভিন্ন দেশে পৌঁছে যায়। 

    তবে দুর্গাপুজোর আগে লালগোলা থানা এলাকায় কোটি টাকার বেশি মাদক উদ্ধারের ঘটনা পুলিশ কর্তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ বাড়িয়েছে। পুলিশকর্তাদের একাংশের অনুমান,উৎসবের মরশুমে অনেকের হাতেই কিছু কাঁচা টাকা আসে। যেহেতু এই মাদকের ব্যবহার এখনও সমাজ থেকে সম্পূর্ণ নির্মূল করা সম্ভব  হয়নি তাই অনেক পুলিশকর্তা মনে করছেন উৎসবের মরশুমে  এই রাজ্যের বাজারেই উদ্ধার হওয়া হেরোইন বিক্রির পরিকল্পনা করেছিল মাদক মাফিয়ারা। 

    লালগোলা থানার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ধৃত দুই ব্যক্তিকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে আমরা জানার চেষ্টা করব এই মাদক তৈরির চক্রের সঙ্গে আর কারা জড়িয়ে রয়েছে। এর পাশাপাশি এই মাদক তৈরির কাঁচামাল কোথা থেকে আসছে পুলিশ তাও খতিয়ে দেখছে।
  • Link to this news (আজকাল)