দেবীর আরাধনায় বুদ্ধি প্রদর্শন, দাবায় মজেছে বেঙ্গালুরু ও পুনের দুই পুজো
বর্তমান | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা: জ্ঞান, বুদ্ধি আর আতিথেয়তার কারণে বাঙালির সর্বত্র সমাদর। আর দেশের মধ্যে দক্ষিণের শহরগুলির ক্ষেত্রে আমরা সকলেই জানি, শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে তাদের জুড়ি মেলা ভার। এমনই শহর বেঙ্গালুরু এখন বাঙালিদের আর এক ঘাঁটি। পুজোর সময় সেই শহরে কমবেশি কলকাতার মতোই উৎসবের আমেজ থাকে তুঙ্গে। সেখানে পুজো করে বিভিন্ন বাঙালি সংগঠন। তার মধ্যে একটি হল ‘নর্থ বেঙ্গালুরু কালচারাল সমিতি’। শহরের উত্তরে নন্দিনী লে আউটে প্রথম কয়েকজন প্রবাসী বাঙালির প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছিল এই ক্লাব। ধীরে ধীরে বহরে বেড়ে আজ ৪৮ বর্ষের পুজোয় পা দিতে চলেছে সমিতি। ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে দুই অক্টোবর পর্যন্ত নাগাপুরা মহালক্ষ্মীপুরম হিন্দু সাদারা ক্ষেমাবিভ্রুধি সংঘ প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয়েছে এই উৎসবের। শিল্পী তরুণ পালের হাতে তৈরি সাবেকি ঢঙের ডাকের সাজের প্রতিমা। পাশাপাশি মণ্ডপসজ্জাতেও রয়েছে অভিনবত্ব। দাবার বোর্ডের আদলে তৈরি প্যান্ডেল মনে করিয়ে দেবে চৌষট যোগীনী মন্দিরের কথা। পুজোর ক’টা দিন থাকছে নানা ধরনের অনুষ্ঠান। এলাকার যুব গ্র্যান্ড মাস্টারদের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি চলছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়া পঞ্চমীতে আনন্দমেলা আর ষষ্ঠীতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে লাইট-সাউন্ড-লেজার শো এই পুজোর বিশেষ আকর্ষণ। সপ্তাহব্যাপী এই উৎসবে চলবে ডান্ডিয়া নাচ থেকে শুরু করে গান, আবৃত্তি, নাটক ও নবমীতে ধুনুচি নাচ। সান্ধ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি সকালেও রয়েছে নানা বয়সের মানুষের জন্য প্রতিযোগিতা। পুজো প্রাঙ্গণে থাকছে শাড়ি, গয়না, হাতে তৈরি বিভিন্ন খাবার ও শিল্পকর্মের স্টল। ক্লাবের অন্যতম কর্মকর্তা কল্যাণ পাঠক জানালেন, সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী তিনদিনই কমিটির তরফে ভোগ প্রসাদের আয়োজন করা হয়। প্রতিদিনই অন্তত তিন হাজার মানুষ মধ্যাহ্নভোজ করেন।
বেঙ্গালুরুর মতো আরও এক শহর পুনে। সেখানেও দুর্গোৎসবের আয়োজন তুঙ্গে। শহরের ৫১ বি টি কাওয়াডে রোডে এবছর ১৭তম পুজোর আয়োজন করতে চলেছে ‘আমন্ত্রণ’। ক্লাবের নামের মতোই তাঁরা গোটা শহরকেই উৎসবে যোগদানের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ক্লাবের সভাপতির দায়িত্ব সামলাচ্ছেন শুভদীপ ঘোষ। ক্লাবের অন্যতম শীর্ষকর্তা প্রবাল বোস জানালেন, ক্লাবে জনা পঞ্চাশেক সদস্য আছে। সকলেই বাঙালি। বাঙালির ঐতিহ্যকে ভিন রাজ্যে ধরে রাখতেই তাঁদের পুজো শুরু। সাবেকি প্রতিমা আর পুজোয় থিমের আড়ম্বর না থাকলেও আছে শুধুমাত্র বাংলার টান। তাই পুরোহিত, ঢাকি এমনকী ঠাকুরের ভোগ রান্নার ঠাকুরও আসেন কলকাতা থেকে। সপ্তমী থেকে নবমী প্রতিদিন অন্তত ৭০০ থেকে হাজার মানুষ প্রসাদ পান। এলাকার প্রবীণদের খাবার পরিবেশন করেন ক্লাবের সদস্য এবং তাঁদের বাড়ির লোকজন। এবার পুজো উপলক্ষ্যে তাঁদের মূল আকর্ষণ, দাবা প্রতিযোগিতা। ষষ্ঠীতে আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় সব বয়সের মানুষই যোগদান করতে পারবেন।
অন্যদিকে পুজোর চারদিনই সন্ধ্যাবেলা বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মূলত বাঙালি উৎসব হলেও স্থানীয় মারাঠিদের যে কোনও একদিন সাংস্কৃতিক পরিবেশনার সুযোগ দেওয়া হয়। পুনে শহর এবং সংলগ্ন এলাকায় কম করে এখন ৬০ থেকে ৭০টি পুজো হচ্ছে। প্রবালবাবুর কথায়, উৎসবে মারাঠিদের উৎসাহ কম থাকে না। প্রসাদ বিতরণের সময় থেকেই ভিড় বাড়তে শুরু করে। সন্ধ্যায় বি টি কাওয়াডে মেলা প্রাঙ্গণে ঠাকুর দেখার লাইন পড়ে চোখে পড়ার মতো। উৎসবের আনন্দে গা ভাসাতে এবারও প্রস্তুত পুনে শহর। দুর্গার আরাধনায় বাঙালি থেকে মারাঠি সকলকেই সাদর আমন্ত্রণ জানাচ্ছে নানা পুজো কমিটি।