বাংলা-বাঙালি বিতর্কের মধ্যে অখণ্ড ভারতের বার্তা দিল্লি-এনসিআরের পুজোয়, নয়ডায় থিম ‘ইউরোপ’
বর্তমান | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
দিব্যেন্দু বিশ্বাস, নয়াদিল্লি: বাংলা ও বাংলাভাষী বিতর্কে ইতিমধ্যে সরগরম বঙ্গ তথা জাতীয় রাজনীতি। বিরোধীদের অভিযোগ, ধর্ম-বর্ণ তো বটেই, এমনকী ভাষার ভিত্তিতেও বিভাজনের রাজনীতি করতে চাইছে বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন প্রদেশের নৃত্যশৈলীকে এক মঞ্চে এনে অখণ্ড ভারতের বার্তা দিচ্ছে ‘প্রান্তিক’ পুজো কমিটি। ‘বঙ্গতরু’র ২৫ বছরে স্বপ্নের উড়ানে পাড়ি জমাচ্ছেন পুজো উদ্যোক্তারা। ‘বলাকা’র পুজোয় উঠে আসছে ইউরোপের খণ্ডদৃশ্য। তাদের প্রতিমায় থাকছে গ্রিক দেবদেবীর আদল। ‘বঙ্গীয় পরিষদে’ আবার তৈরি হচ্ছে এক টুকরো শান্তিনিকেতন। থাকছে প্রার্থনা গৃহ। সেখানে শতকণ্ঠে সমবেত সঙ্গীতের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত পুজো কমিটির সদস্যরা। দিল্লির উপকণ্ঠে ইন্দিরাপুরম, নয়ডা বা গুরুগ্রামের পুজোয় এই বছর অভিনব চমকের টক্কর।
নয়াদিল্লি থেকে দূরত্ব মেরেকেটে ২৫ কিলোমিটার। দিল্লি-উত্তরপ্রদেশের সীমানা পেরিয়ে গেলেই গাজিয়াবাদের ইন্দিরাপুরম। এখানেই ধারে ও ভারে অনন্য হয়ে উঠেছে বঙ্গতরু, শিপ্রা রিভেরা বা প্রান্তিকের পুজোগুলি। প্রান্তিকের পুজোর এবার ১৭ বছর। ফি বছর নিত্যনতুন চমক নিয়ে হাজির হন পুজো উদ্যোক্তারা। সেইমতো দেশের মোট ২০টি নৃত্যশৈলী নিয়ে হাজির হয়েছেন তাঁরা। এর মধ্যে অন্যতম বাংলার ছৌ ও ঝুমুর নৃত্য। পুজো কমিটির সভাপতি দেবযানী সামন্ত বলেন, ‘মণ্ডপসজ্জায় মোট ২০টি প্যানেল থাকছে। সেখানেই ব্যবহৃত হবে বিভিন্ন নৃত্যশৈলী। কোনওটি পেইন্টিং, কোনওটি স্ট্রাকচার। তবে মণ্ডপের মাথায় নৃত্যরত নটরাজ আছেন। সেটি ধরলে মোট ২১টি ডান্স ফর্ম ব্যবহার করছি আমরা।’
ইন্দিরাপুরমের অপর এক পুজো কমিটি ‘বঙ্গতরু’র এবার ২৫ বছর। প্রায় দু’যুগ আগে জনাকয়েক তরুণ-যুবক যখন এর সূচনা করেছিলেন, তখন পুরোটাই ছিল স্বপ্নের মতো। ‘কিন্তু সেই অসম্ভবও সম্ভব হয়েছে। ২৫ বছরের পুজোয় আমরা তাই স্বপ্নের পঁচিশ ছাড়া অন্য কোনও থিম ভাবতেই পারিনি।’ জানালেন পুজোর সভাপতি সুরজিৎ দে পুরকায়স্থ। পুঞ্জীভূত মেঘরাশি, শান্ত হয়ে বসে থাকা হরিণ, ময়ূর দিয়ে মণ্ডপজুড়ে একটি স্বপ্নের জগৎ তৈরি করেছেন উদ্যোক্তারা। কৃষ্ণনগর থেকে আসা শিল্পীর হাতে তৈরি হচ্ছে ‘নবদুর্গা’।
শিপ্রা রিভেরার পুজো আদতে ইন্দিরাপুরমের এক আবাসনের পুজো। শিপ্রা রিভেরা ইন্দিরাপুরমের অন্যতম পুরনো আবাসন হিসেবে পরিচিত। পুজোর বয়স এবার ২৭ বছর। সাবেকি মতে পুজো হয় এখানে। কমিটির সাধারণ সম্পাদক মৌসুমী দাস জানালেন, পুজোয় আমাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখতে বরাবরই প্রচুর ভিড় হয়। ওটাই আমাদের ইউএসপি। গাজিয়াবাদ বৈশালীর সর্বজনীন শ্রীশ্রী কালীপুজো সমিতির ২০ বছরের পুজোয় এবারের থিম ‘মা’। পুজো কমিটির সভাপতি চন্দন রাই জানালেন, ‘প্রবীণাদের বিশেষভাবে সম্মানিত করব আমরা।’ অন্যদিকে, এবার পুজোয় দর্শনার্থীদের ইউরোপের খোঁজ দিতে কোমর বেঁধেছে নয়ডা সেক্টর ৬১-এর ‘বলাকা’। পুজোর ১৭ বছরে তাদের চমক ‘নয়ডায় ইউরোপ’। পুজো কমিটির অন্যতম সদস্য অনুজ চক্রবর্তী জানালেন, ৭০ ফুট উঁচু এবং ৬০ ফুট চওড়া মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে মাদ্রিদের সিবেলস প্রাসাদের আদলে। প্রতিমায় থাকবে গ্রিক স্থাপত্যশৈলীর ছোঁয়া।
গুরুগ্রাম সেক্টর ৫৬-এর ‘বঙ্গীয় পরিষদ’ ফিরে গিয়েছে শান্তিনিকেতনে। পুজোর সভাপতি মলয় নন্দী বললেন, ‘প্লাইউড এবং অ্যাক্রোলিক ফাইবার দিয়ে প্রার্থনা গৃহ তৈরি করছি আমরা। পুজোয় ঢাকের বাদ্যি তো সকলেই শোনেন। কিন্তু শান্তিনিকেতনের সমবেত প্রার্থনা সঙ্গীত উপভোগ করেন ক’জন? এই অভিজ্ঞতা এবার বঙ্গীয় পরিষদে হবে।’ পুজোর ২০ বছরে তাদের আরেক চমক আলপনা। গুরুগ্রামের ব্যস্ত রাস্তায় রাতের পাঁচ ঘণ্টায় ইতিমধ্যেই বারোশো স্কোয়ার ফুটে আলপনা দিয়েছেন পুজো কমিটির সদস্যরা।