লাদাখ হিংসার আবহে গ্রেফতার পরিবেশকর্মী সোনাম ওয়াংচুক, লে শহরে বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবা, জারি কার্ফু
বর্তমান | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ফিরদৌস হাসান, শ্রীনগর: অল ইজ নট ওয়েল! লাদাখে হিংসা ছড়ানোর দু’দিনের মাথায় জাতীয় নিরাপত্তা আইনে (এনএসএ) গ্রেফতার সোনাম ওয়াংচুক। তাঁকে রাজস্থানের যোধপুরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে খবর। কেন্দ্রীয় সরকারের অভিযোগ, বুধবারের প্রাণঘাতী হিংসার নেপথ্যে পর্দার ‘র্যাঞ্চো’র উস্কানিমূলক ভাষণ দায়ী। বিদেশি যোগের অভিযোগ নিয়েও শুরু হয়েছে তদন্ত। যদিও জেন জি-র বিক্ষোভ থেকে অশান্তি ছড়ানোর দিনই হিংসার নিন্দা করেছিলেন ওয়াংচুক। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত হওয়া লাদাখের জন্য রাজ্যের মর্যাদা ফেরানো ও ষষ্ঠ তপশিলে অন্তর্ভুক্তি— জোড়া দাবিতে ১৫ দিনের অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহারও করে নিয়েছিলেন। এই শিক্ষাবিদ তথা পরিবেশকর্মীর বক্তব্য ছিল, হিংসাত্মক আন্দোলনে তাঁর সায় নেই। ওয়াংচুকের গ্রেফতার হওয়ার মধ্যেই শুক্রবার সুর চড়িয়েছেন লাদাখের সাংসদ মহম্মদ হানিফা জান। তাঁর দাবি, ‘বুধবারের বিক্ষোভে পুলিসের গুলি চালানোর ঘটনা নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত হওয়া উচিত। বুধবারের ওই ঘটনা ছিল বেকারত্ব নিয়ে লাদাখের যুব সমাজের মধ্যে দীর্ঘদিনের জমে থাকা হতাশার বহিঃপ্রকাশ।’ ওয়াংচুকের গ্রেফতারির বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বিরোধী দল ও নাগরিক সমাজও। তাঁদের অভিযোগ, সোনামকে বন্দি করার ফলে পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পরিবর্তে উত্তেজনা বাড়বে। থমথমে লে-তে এদিনও কার্ফু জারি ছিল। রাস্তায় টহল দিতে দেখা গিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীকে। ওয়াংচুক গ্রেফতার হওয়ার পরই বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট পরিষেবা।
সরকারি সূত্রে খবর, এদিন দুপুর আড়াইটে নাগাদ লাদাখের ডিজিপি এস ডি সিং জামওয়ালের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম ওয়াংচুককে তাঁর বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় নিকটবর্তী থানায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অভিযোগ, লাদাখের নেতৃত্বের সঙ্গে সরকারের আলোচনার প্রক্রিয়া চলা সত্ত্বেও জনরোষ সৃষ্টির লক্ষ্যে উস্কানিমূলক ভাষণ দিয়েছেন সোনাম। অনশন কর্মসূচি থেকে আরব বসন্ত ও নেপালের ছাত্র বিক্ষোভের উদাহরণ টেনে হিংসায় প্ররোচনা দিয়েছেন তিনি। এই পরিবেশকর্মীকে গ্রেফতার করার একদিন আগেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক তাঁর অলাভজনক সংস্থা ‘স্টুডেন্টস এডুকেশনাল অ্যান্ড কালচারাল মুভমেন্ট অব লাদাখ’ (সেকমল)-এর রেজিস্ট্রেশন বাতিল করেছিল। সরকারের অভিযোগ, ২০১০ সালের বিদেশি অনুদান নিয়ন্ত্রণ আইন (এফসিআরএ) লঙ্ঘন করেছে ওয়াংচুকের সংস্থা। তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই। ফেব্রুয়ারি মাসে পরিবেশ সম্মেলন উপলক্ষ্যে সোনামের পাকিস্তান সফরও কেন্দ্রের রেডারে রয়েছে বলে খবর। লাদাখের হিংসার নেপথ্যে বিদেশি যোগ রয়েছে কি না, সরকার তাও তদন্ত করে দেখছে বলে সূত্রের খবর। যদিও সরকারের অভিযোগ খারিজ করেই দিচ্ছেন ওয়াংচুক। গ্রেফতার হওয়ার আগে গতকাল এই পরিবেশকর্মীর দাবি ছিল, তাঁর অলাভজনক সংগঠন কোনও রকম বিদেশি অনুদান গ্রহণ করেনি। তবে রাষ্ট্রসংঘ এবং সুইজারল্যান্ড ও ইতালির সংস্থার কাজ করার পারিশ্রমিক নেওয়া হয়েছে। সরকার সেটাকেই বিদেশি অনুদান ভেবে ভুল করছে।
লে শহরে কার্ফু জারি থাকার মধ্যেই সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এদিন একাধিক বৈঠক করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একটি টিম। তবে নতুন করে অপ্রীতিকর কোনও ঘটনা আর ঘটেনি। পুলিশ জানিয়েছে, সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ ৫০ জনের বেশি অভিযুক্তকে আটক করা হয়েছে। লে ছাড়াও কার্গিল সহ অন্যান্য শহরগুলিতেও একসঙ্গে পাঁচ জনের বেশি মানুষের জমায়েতে বিধিনিষেধ জারি রয়েছে। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, তাঁদের কাছে রেশন, দুধ ও সবজি শেষ।