• নবতিপর ম্যাডক্সের ম্যাজিক, সম্মোহিত ষোলো থেকে আশি, দুর্গার রূপ আর মায়াবী আলো রাঙিয়ে তুলছে পুজোর প্রেম
    বর্তমান | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • সোহম কর, কলকাতা: নবতিপর ম্যাডক্স স্কোয়ার আজও অষ্টাদশীদের মনে মাদকতা তৈরি করে। সব মণ্ডপ ঘুরে একবার ম্যাডক্স স্কোয়ারে না এলে, কি যেন একটা হল না! এই টানের জন্য থিম তৈরি করতে হয় না ম্যাডক্সকে। ঘটা করে উদ্বোধন করতে লাগে না। দুর্গার মৃন্ময়ী রূপ, ঝাড়বাতির মায়াবী আলো, সামনের মাঠের সঙ্গীতানুষ্ঠান ইত্যাদি মিলিয়ে ম্যাডক্স মাতামাতির এমন এক জায়গা, যেখানে না মাতলে বাঙালির চলে না। এর সঙ্গে অবশ্যই স্টল থেকে কিনে খাওয়া-দাওয়া। বছরের পর বছর এই ছবিই ফুটিয়ে তুলছে ম্যাডক্স। এই মাঠেই বহুবার প্রেমে পড়েছে বহু বাঙালি। এই মাঠেই কত শত প্রেম ভেঙেছে। পুরনো প্রেমিক-প্রেমিকা ধরা পড়েছে সস্ত্রীক, সন্তান কোলে নিয়ে। ম্যাডক্সের মহিমা কম নয়।

    ‘সকালে বাগবাজার আর সন্ধ্যায় ম্যাডক্সে যাবি? নাকি সকালেই ম্যাডক্স?’ এই আলোচনা চলছে বছরের পর বছর। এই করতে করতে নব্বইয়ে পা। বৃষ্টি-বাদলার ঝাপটা সামলে কাদা মাঠ আড্ডার জন্য উপযুক্ত করে তোলার পরিকল্পনা করছেন উদ্যোক্তারা। পুজো কমিটির সম্পাদক অনিমেষ চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘এমনিতে আমাদের পুজো দেখতে এসে প্রবেশপথে কোনও সমস্যা হবে না। পুরোটাই র‌্যাম্প করা। আর মাঠের কাদা ঢাকতে পঞ্চাশ বস্তা বালি নিয়ে আসা হয়েছে। তা ছড়িয়ে দিলে মাঠে বসতে সমস্যা হবে না।’ তৃতীয়ার সন্ধ্যাতেই ঠাকুরের সাজ সম্পূর্ণ। তরুণ-তরুণীদের আনাগোনা শুরু হয়ে গিয়েছে। মাঠে কাদা আছে বলে মণ্ডপের সামনে বসে চলেছে আড্ডা। পার্কের বেঞ্চেও ভিড়। তাতে বসে আইসক্রিম হাতে গল্প কলেজ পড়ুয়াদের। কিন্তু এতকিছুর মধ্যে ভিলেনও হানা দিয়েছে। তাই মন খারাপ সকলের। মন খারাপের কারণ বৃষ্টি। স্থানীয় এক তরুণের কথায়, ‘আমাদের আর অন্যান্য কোথাও ঘুরতে হয় না। আমরা এখানেই বসে থাকি। আসলে ম্যাডক্সেই তো লন্ডন থেকে লেবুতলা, সব জায়গার বাঙালিরা এসে উপস্থিত হন। তাই এখানেই সকলের সঙ্গেই দেখা হয়ে যায়।’

    ম্যাডক্সে আসার পর বোঝা যায়, আসলে বাঙালির কাছে দুর্গাপুজো বাস্তবিকই মিলনের উত্সব। অন্যান্য পুজো যখন উদ্বোধনের জাঁকজমকে মেতে তখন অনিমেষবাবু বলেন, ‘আমরা সেভাবে ঘটা করে উদ্বোধন করি না। মহালয়ার দিন একটা অনুষ্ঠান করে প্রতিমা মণ্ডপে নিয়ে আসা হয়। ওটাই আমাদের কাছে পুজো শুরু।’ সেরকমভাবেই পুজোর দিনগুলি ম্যাডক্স হয়ে ওঠে পৃথিবীর সমস্ত প্রান্তের বাঙালির মিলনোত্সব। এই মাঠই শেখায় বাঙালির পুজোর প্রেম। গোল করে বসে আড্ডা দেওয়ার মাঝে কোনও তরুণের চোখ তরুণীর চোখে আটকায়। হয়তো সে ভালো লাগা হাল ছেড়ে দেয় দশমীর রাতে। হয়তো আবার অনেক বছর বাদে এই ম্যাডক্সেই দেখা হয়ে যায় সেই চোখের সঙ্গে। নব্বই বছর ধরে এরকম অনেক কিছুই নিয়েছে ম্যাডক্স। আবার বহু কিছু ফিরিয়েও দিয়েছে। যার জন্য এখনও ভিড় জমায় ১৬ থেকে ৮০।-নিজস্ব চিত্র 
  • Link to this news (বর্তমান)