নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বাঙালি হয়ে ওঠার মরিয়া চেষ্টা? নাকি শাপমোচনের আকুতি? ২০১৯ সালের ১৫ মে, লোকসভা নির্বাচন পর্বে রোড শো করেছিলেন বিজেপির সেকেন্ড-ইন-কমান্ড অমিত শাহ। সেই কর্মসূচি শেষে বাঙালি অস্মিতার অন্যতম প্রতীক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল পদ্মপার্টির কর্মী-সমর্থকরা। শুক্রবার সকালে সল্টলেকে পূর্বাঞ্চলীয় সংস্কৃতি কেন্দ্রে (ইজেডসিসি) পুজো উদ্বোধনে গিয়ে সেই বিদ্যাসাগরের প্রতিকৃতির সামনে নতমস্তক হলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ‘বর্ণপরিচয়’-স্রষ্টার জন্মদিনে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে যেন ছ’বছর আগের ‘শাপমোচন’ করতে চাইলেন বিজেপির।
সেদিন উত্তর কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজে ঢুকে গেরুয়া শিবিরের লোকজন রীতিমতো তাণ্ডব চালিয়েছিল। যদিও সেজন্য বিজেপির ছোটো-বড়ো বা মাঝারি কোনও নেতা এখনও অনুশোচনা প্রকাশ করেননি। চাননি ক্ষমাও। ভাঙা সেই মূর্তি আজও রয়েছে কলেজেই। কিন্তু ভোট বড় জ্বালা! তাই এদিন সল্টলেকে দেখা গেল সেই বিরল দৃশ্য। ঘটা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় তা পোস্টও করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সেই ছবি সামনে আসতেই গর্জে উঠেছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো বটেই, প্রতিবাদে কড়া প্রতিক্রিয়া অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। সমাজমাধ্যমে মমতা লিখেছেন, ‘এই বাংলায় বিদ্যাসাগরের ধর্মনিরপেক্ষ মানবিকতার আদর্শকে যারা বিশ্বাস করে না, কলকাতার বুকে তাঁরই মূর্তি যারা ভূলুণ্ঠিত করে, বাংলা ভাষা-সংস্কৃতিকে যারা প্রতিনিয়ত অপমান করে, তাদের কোনও স্থান নেই।’
এদিন ইজেডসিসিতে অমিত শাহ আরও বলেছেন, ‘বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি, ব্যাকরণ তথা মহিলা শিক্ষার জন্য ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নিজের সমগ্র জীবন সমর্পিত করেছেন। তিনি ছিলেন মহান শিক্ষাবিদ এবং সমাজ সংস্কারক। কেবল বাংলা নয়, বরং সারা দেশ যখন পরাধীন ছিল, তখন শিক্ষার জন্য তিনি যা করেছিলেন, তা কেউ ভুলতে পারবে না।’ ভোটের আগে এই বিলম্বিত বোধোদয়, বাঙালি সাজার মরিয়া চেষ্টায় তাই অনেকে রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছেন। অমিত শাহ যে বাংলার সংস্কৃতি সম্পর্কে ন্যূনতম খোঁজ রাখেন না, তার উদাহরণও সামনে এসেছে এদিন। নবরাত্রির সঙ্গে তিনি মিলিয়ে দিয়েছেন কলকাতার দুর্গাপুজোকে। বলেছেন, ‘বাংলার প্রত্যেক ব্যক্তি ৯ দিন ধরে শক্তিপুজোয় নিজেকে সমর্পিত করেছে।’ বাঙালির দুর্গাপুজোর বোধন যে ষষ্ঠীর দিন হয় এবং সেদিন থেকেই পুজো শুরু, সেই হোমওয়ার্কটুকু পর্যন্ত করে আসেননি তিনি।
পদ্ম-তাণ্ডবের কথা স্মরণ করে এদিন বিদ্যাসাগর কলেজে ওই ভাঙা মূর্তিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতে গিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক। তিনি বলেছেন, ‘ওদের (বিজেপি) আগে বিদ্যাসাগরের মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে ক্ষমা চাইতে হবে। আশ্চর্যের বিষয় হল, ওই মূর্তি ভাঙা কাণ্ডে জড়িতরা আজও বিজেপিতেই আছে। তাদের বিরুদ্ধে কেন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, জানতে চায় গোটা বাংলা!’