• বৃষ্টি থোড়াই কেয়ার, চতুর্থীতেই মণ্ডপে জনজোয়ার
    বর্তমান | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ম্যাডক্স স্কোয়ার থেকে দেশপ্রিয় পার্কের দিকে মানুষের ঢল। চতুর্থী। বেলা দুপুর। আকাশের তিরিক্ষি মেজাজ। এই বোধহয় শরতে নেমে এল শ্রাবণের ধারা। এরকম আশঙ্কা ছিলই। সত্যিও হলো। প্রথমে টিপটিপ, তারপর ঝিরঝির, শেষে একেবারে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামল। ফাঁকা স্টলে মা আর মাসির হাত ধরে এসে আশ্রয় নিল এক খুদে। মুখ কাঁদো কাঁদো। রাস্তার নাম লেখা পোস্টে মাথা ঠেকিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আকাশের দিকে। মা ভেবেছেন, বিদ্যুতের খুঁটি। এক ঝটকায় সরাতে গিয়ে চোখে চোখ। মেয়ের চোখ জলে ভরে গিয়েছে একেবারে। ‘মন খারাপ?’ উত্তর, ‘বৃষ্টি বলে কালকের মতো বাড়ি চলে যাব না আমি। বাড়ি ঢুকলেই বৃষ্টি থেমে যায়।’ শিশুগলায় দৃপ্ত বার্তার পরই রোদের ঝলকানি। 

    ভেজা রাস্তায় রোদ পড়ে চকচক করছে। ভিড় আচমকা নেমে এল রাস্তায়। কারও জামা ভিজেছে। কারও চুল থেকে টপটপ করে জল ঝরছে। তরুণীরা হেয়ার ব্যান্ড খুলে চুল এলো করেই চললেন। ব্যান্ড-ক্লিপ চলে গেল প্রেমিকদের দায়িত্বে। ভিড় যখন ত্রিধারা থেকে বালিগঞ্জ কালচারালের দিকে এগচ্ছে কেউ বললেন, ‘এমন ফুরফুরে ঠান্ডা হাওয়ায় ঠাকুর দেখার কিন্তু মজা আছে বস।’ সমর্থনের উত্তর এল পাশ থেকে। একদল ভেঁপু বাজিয়ে দিল। একদিকে দেশপ্রিয় পার্কে তালা দেওয়া গেটের সামনে হতাশ দর্শনার্থীদের ভিড়। তখনই আবার উৎসাহী ভিড়ের উল্টো চিত্র হাতিবাগান সর্বজনীন, সিকদার বাগান, কুমোরটুলি পার্ক, আহিরীটোলা, নলিন সরকার স্ট্রিটে। কিন্তু নর্থ ক্যালকাটায় যে বৃষ্টি! ব্যাগ থেকে বেরচ্ছে ছাতা। কারও গায়ে রেনকোট। তারপর ঠাকুরের সামনে হাতজোড় করে প্রার্থনা, ‘জল যেন না জমে মা।’ বৃষ্টির ঠেলায় লোকে জুতো ছেড়ে চটি পরেছে। শোভাবাজার রাজবাড়িতে এক পশলা বৃষ্টিতেই জল দাঁড়িয়ে। কিন্তু জমা জলকে থোড়াই কেয়ার, চটি খুলে জমা জলে পা দিয়ে শাড়ির আঁচল কোমরে পেঁচিয়ে, প্যান্ট গুটিয়ে চলল ঠাকুর দেখা। শ্রীভূমিতে টিপটিপ বৃষ্টি চলছেই। ছাতা হাতে প্রেমিকাকে প্রায় ঢেকে দিয়েছে প্রেমিক। মেকআপ যদি একবার বৃষ্টির জলে ধুয়ে যায়, তাহলে সর্বনাশ। বাড়ি চলে যাবে বলে হুমকি দিয়ে রেখেছে সদ্য কলেজে ভর্তি হওয়া বান্ধবী।

    চতুর্থীর সকাল থেকেই ভিড়। উত্তর কলকাতা যদি বলে ‘আমায় দেখ’, তাহলে দক্ষিণ বলছে, ‘বৃষ্টি মাথায় হলেও পুজোর আমেজ তো ধরে রেখেছি আমরাই।’ ফুচকা মুখে অনেকে বলল, ‘এবার পুজোয় ভিলেন হল জমা জল’। গলায় ঠান্ডা পানীয় ঢেলে কেউ বলল, ‘বৃষ্টি পড়ে পড়ুক, জল জমে জমুক, বাড়ি কিছুতেই ফিরব না। চলে যাব সিনেমায়।’ প্রবীণরা বললেন, দুর্গা তো দুর্গতিনাশিনী। চিন্তা কী?’
  • Link to this news (বর্তমান)