• সাহচর্যের মাধ্যমে ডিমেনশিয়া রোগীদের মনোজগতে নতুন আলো
    আনন্দবাজার | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • একটু আগে কী খেলেন, মনে করতে অসুবিধা হত। মায়ের এমন অবস্থা দেখে ডাক্তার দেখান মেয়ে। ডিমেনশিয়ার চিকিৎসা শুরু হয়। কিন্তু গড়িয়ার বাসিন্দা, মা আলপনা দাসের কোনও উন্নতি দেখতে পাচ্ছিলেন না মেয়ে শম্পা ঘোষ। বরং এক রাতে স্বামীকে চিনতে পারছিলেন না বছর আটাত্তরের আলপনা। বারান্দা থেকে লোক ডেকে বলেছিলেন, ‘‘আমার স্বামী কোথায় বেরিয়ে গিয়েছে! দেখুন, একটা বুড়ো লোক ঘরে ঢুকে পড়েছে।’’ দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর এক পাড়ার বাসিন্দা, তাই পরিচিত এক জন বুঝতে পারেন, অসুস্থতার কারণেই সম্ভবত বৃদ্ধা অসংলগ্ন কথা বলছেন।

    বাবার থেকে খবর পেয়ে যোধপুর পার্কের বাসিন্দা শম্পা বাড়ি এসে মাকে ধাতস্থ করেন সে রাতে। অবশেষে বোনঝির থেকে সন্ধান মেলে একটি ডে-কেয়ার সেন্টারের। ‘অ্যালঝাইমার’স অ্যান্ড রিলেটেড ডিজ়অর্ডার্স সোসাইটি অব ইন্ডিয়া’ (এআরডিএসআই) পরিচালিত ওই সেন্টারে ডিমেনশিয়া, অ্যালঝাইমার'স এবং পার্কিনসন'স রোগীদের নানা ধরনের কাজে ব্যস্ত রেখে মস্তিষ্ক সক্রিয় করানোর চেষ্টা চলে। খাওয়াদাওয়া, আড্ডা তো সঙ্গে থাকেই। সেখানে এক বছর দু’মাস ধরে সপ্তাহে তিন দিন যান আলপনা। শম্পার কথায়, ‘‘ডাক্তার বদলে আর এই সেন্টারে গিয়ে আমূল পরিবর্তন টের পাচ্ছি। গত ছ’মাস ধরে মা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। আর কখনও চিনতে না পারার ভুল করেননি।’’

    দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা অসীমা বক্সীর ডিমেনশিয়ার চিকিৎসা প্রথমে শুরু হলেও পরে ধরা পড়ে পার্কিনসন'স রোগে আক্রান্ত তিনি। ছেলে কৌস্তভ বক্সী খুব কাছ থেকে দেখছিলেন, মায়ের চারিত্রিক বদল। সব সময়ে রাগ, অস্থিরতা, অনিচ্ছা আর বিরক্তি দেখা যেত অসীমার মধ্যে। কৌস্তভ বহু কষ্টে মাকে এআরডিএসআই-এর সেন্টারে নিয়ে যান। সপ্তাহে দু’দিন করে গত দেড় বছর সেখানে নিয়মিত যাচ্ছেন অসীমা। কৌস্তভ বলেন, ‘‘ওখানে যেতে মা ভালবাসেন। অথচ আগে যেতে রাজিই হতেন না। সব থেকে বড় কথা, মা এখন নিজেই রান্নাকরেন, আমাকে পরামর্শ দেন, সব দিক সামলে চলেন। যে মানুষটাসাজগোজ নিয়ে উৎসাহী ছিলেন না, সেই তিনিই পছন্দ করে শাড়ি, সালোয়ার পরেন। বিভিন্ন ধরনের হাতের কাজ করানো, সদস্যদের সিনেমা দেখানো, গান শোনা, গল্প করা, সার্কাসে, ইকো পার্কে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সব ওঁদের জীবনে টনিকেরমতো কাজ করে।’’

    ডিমেনশিয়ার বিভিন্ন কারণের একটি হল, অ্যালঝাইমার’স। চিকিৎসকদের মতে, এই রোগ কেন হয়, তার অনেকটাই অজানা। অন্য কারণ, বার্ধক্য। সেপ্টেম্বর হল ‘বিশ্ব অ্যালঝাইমার’স মাস। সেইউপলক্ষে এআরডিএসআই, কলকাতা চ্যাপ্টারের আয়োজনে সম্প্রতি হয়ে গেল দু’দিনের অনুষ্ঠান। ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত রোগী, যাঁরা ডে-কেয়ারে থাকেন, তাঁদের বিভিন্ন হাতের কাজ নিয়ে প্রথম দিন ভারতীয় জাদুঘরে এক প্রদর্শনীর আয়োজন হয়েছিল। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনে ছিল রোগ নিয়ে সচেতনতার প্রসারে আলোচনাসভা। যেখানে জীবনযাত্রা, খাওয়াদাওয়া, যোগ ব্যায়াম, ব্রেন গেম, চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রের চিকিৎসকেরা আলোচনা করেন। এ ছাড়াও একটি দিন ১০০ জন প্রশিক্ষককে নিয়ে কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল।

    এআরডিএসআই-এর সেক্রেটারি জেনারেল নীলাঞ্জনা মৌলিক বলেন, ‘‘ওয়ার্ল্ড হেল্‌থ অর্গানাইজ়েশন এবং অ্যালঝাইমার’স ডিজ়িজ় ইন্টারন্যাশনাল যৌথ ভাবে ২০২৫ সালে ডিমেনশিয়া রোগীদের পুনর্বাসনে জোর দিচ্ছে। তাঁরাও যে সুস্থ মানুষদের মতো কোনও কিছুতে অংশগ্রহণ করতে সক্ষম, সেটাই মেনে নেওয়া হয়েছে। এটা বড় জয়।এআরডিএসআই গত ১৮ বছর ধরে দক্ষিণ কলকাতায় ডে-কেয়ার সেন্টার চালাচ্ছে। শীঘ্রই নিউ টাউনেও শুরু হবে আরও একটি কেন্দ্র। এছাড়া, যোগাযোগ করা হলে দিনে দু’ঘণ্টার জন্য বাড়িতে প্রশিক্ষিত কর্মীও পাঠানো হয়।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)