বর্ধমানের কাঞ্চননগরে ১২ বছর ধরে গঙ্গার পলি জমিয়ে তৈরি হয় দুর্গামূর্তি
এই সময় | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
রূপক মজুমদার, বর্ধমান
প্রতি ১২ বছর অন্তর বর্ধমানের কাঞ্চননগরে তাঁতিপাড়ায় আসে নতুন দুর্গা। এখানে তিনি পরিচিত শুভচণ্ডী হিসেবে। কথিত রয়েছে, কোনও কারণে কারও মন খারাপ হলে অথবা পারিবারিক অশান্তিতে মন বিক্ষিপ্ত হয়ে গেলে মায়ের মুখের দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থাকলে মন নাকি ভালো হয়ে যায়।
১২ বছর ধরে মাটির তৈরি এই প্রতিমা থাকলেও, অদ্ভুত ভাবে তার কোনও পরিবর্তন হয় না। নতুনের মতো উজ্জ্বল থাকে গায়ের রং। প্রতিমা তৈরি হয় শুধুমাত্র গঙ্গামাটি আর গঙ্গার পলি সংগ্রহ করে। প্রতিমা তৈরির সঙ্গে বংশ পরম্পরায় যুক্ত মৃৎশিল্পী পলি জোগাড় করেন দীর্ঘদিন ধরে। সেই পলি জমিয়ে তৈরি হয় শুভচণ্ডী।
১৩৪০ সাল থেকে পুজো চলে আসছে। তা শুরু করেছিলেন হরিপদ পাল ও তাঁর স্ত্রী হরিমতি পাল। সেই সময়ে মূর্তি ছিল সোনার তৈরি, উচ্চতা চার ফুট। ১২ বছর পরে সেই মূর্তির সোনা গলিয়ে তা এলাকার গরিবদের মধ্যে বিতরণ করতেন পেশায় সোনা ব্যবসায়ী হরিপদ। তাঁদের কোনও বংশধর না-থাকায় সেবাইত ভবতারণ বিদ্যাভূষণকে পুজোর দায়িত্ব দিয়ে যান হরিপদ। দান করে যান কিছু জমিও। তখন কাঞ্চননগরের পোদ্দারপাড়ায় পুজো হতো। পরে মন্দিরের তালা ভেঙে চুরি হয়ে যায় সোনার দুর্গা।
একইসঙ্গে রায়না থানা এলাকার হিজলনা, বড় কয়রাপুর এলাকার হরিপদর দান করা জমিও জোর করে দখল করে নেন এলাকার কিছু লোক। তার পরেই ভবতারণের নিজের বাড়ি তাঁতিপাড়ায় পুজো সরিয়ে আনা হয়। প্রতিমার শাড়ি, অলঙ্কার থেকে অন্য সব কিছুই মাটির তৈরি। পুজো হয় বৈষ্ণব মতেই। পরিবারের প্রবীণ সদস্য সুচিত্রা বিদ্যাভূষণ বলছিলেন, 'এখনও রায়না এলাকার হিজলনা, বড় কয়রাপুর এলাকায় দেবীর নামে বিঘে ৪০ জমি রয়েছে। কিন্তু আমাদের সে ভাবে কোনও ভাগ দেয় না। সামান্য যা দেয়, তা দিয়ে পুজোর খরচ চালানো কষ্টকর। যত দিন পারব, পুজো চালাব।'
পুজোর নানা কাহিনি জানাতে গিয়েই টুম্পা বিদ্যাভূষণ বলেন, 'শুভচণ্ডী মায়ের গায়ের রং প্রথম থেকে একই রকমের। কোনও পরিবর্তন হয় না। ১২ বছর অন্তর তার পরিবর্তন হয়। গঙ্গার পলি জমিয়ে তৈরি হওয়া মাটি থেকেই প্রতিমা গড়া হয়। ছ'বছর আগে হয়েছিল প্রতিমা। আরও ছ'বছর পরে নতুন প্রতিমা তৈরি হবে।'