আগরতলায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার আরও উন্নতি, জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা...
আজকাল | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিতাই দে, আগরতলা: চিকিৎসকদের জন্ম হয়েছে অন্যদের জীবন রক্ষার জন্য। সাধারণ মানুষকে সঠিক পরিষেবা প্রদানের উপর ডাক্তারদের সম্মান নির্ভর করে। স্বচ্ছতার সঙ্গে এখন পর্যন্ত ডাই ইন হারনেস সহ ২০,০৩৬ জনকে সরকারি চাকরি দিয়েছে সরকার। শূন্যপদগুলি খুব সহসাই পূরণের চেষ্টা করছে সরকার। শুক্রবার আগরতলার প্রজ্ঞাভবনে জিডিএমও (জেনারেল ডিউটি মেডিকেল অফিসার) এবং লাইব্রেরিয়ান পদে চাকরি প্রার্থীদের মধ্যে অফার বিতরণ অনুষ্ঠানে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা দুর্গাপুজো উপলক্ষে সকলকে হার্দিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, আমাকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ডাক্তার নিয়োগের কথা বলা হয়। কিন্তু একজন ডাক্তার তৈরি হতে গেলে অনেক সময়ের দরকার। কারণ ডাক্তার রেডিমেড পাওয়া যায় না। তারপর তাকে পাবলিক সার্ভিস কমিশনে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করতে হবে। সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরই চাকরির অফার ও নিযুক্তি পত্র দেওয়া হয়। আমরা এরআগেও অনেক চাকরি দিয়েছে। আমাদের সরকার চাইছে যতগুলি শূন্যপদ রয়েছে সেগুলি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পূরণ করার। আজ ২১৪ জিডিএমও এর অফার বন্টন করা হচ্ছে। এরমধ্যে ১৪২ জন পুরুষ ও ৭২ জন মহিলা। যাদের কারণে আজ তারা ডাক্তার হতে পেরেছেন, মা-বাবা, ভাই-বোন, অভিভাবকদের কথা মনে রাখতে হবে তাদের। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আজ লাইব্রেরিয়ান (১২টি) পদেও অফার দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলে লাইব্রেরিয়ানের স্বল্পতা ছিল। কারণ লাইব্রেরিয়ান ছাড়া কোন স্কুল চলে না। লাইব্রেরি একটা আস্থা ও বিশ্বাসের বিষয়।
ছাত্রছাত্রীরা সেখানে গিয়ে বই পড়ে। এরমধ্যে অনেকে বই কিনতে পারে না কিংবা এত বই কেনাও সম্ভব নয়। আর এখন ই- লাইব্রেরি, ডিজিটাল লাইব্রেরি হয়ে গেছে। পড়াশুনা করার মতো একটা পরিবেশ লাইব্রেরিতে থাকে। এক্ষেত্রে লাইব্রেরি সম্পর্কে বিশেষ ভূমিকা থাকে লাইব্রেরিয়ানদের। বইপত্র তাদের নখদর্পনে থাকতে হবে। শিক্ষকদের থেকে লাইব্রেরিয়ানদের দায়িত্ব কোন অংশে কম নয়। আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সমাজে সাধারণ মানুষকে সঠিক পরিষেবা (ন্যায়) দেওয়ার উপর চিকিৎসক বা ডাক্তারদের সম্মান নির্ভর করছে। কাজের মধ্য দিয়ে নিজেদের প্রমাণ করতে হবে।
স্থেথস্কোপ হচ্ছে ডাক্তারদের অলঙ্কার। স্থেথস্কোপ আর হোয়াইট (সাদা) কোর্ট এর মধ্যে একটা সম্মানের বিষয় জড়িয়ে রয়েছে। মনে রাখতে হবে রোগীরা হচ্ছেন ভুক্তভোগী। তাই চিকিৎসকদের কাজই হচ্ছে তাদের সহ্য করা। আপনাদের ব্যবহার ভালো হলে সবসময় আপনারা বিজয়ী হবেন। যেকারণে সকলের ব্যবহার ভালো থাকা উচিত। অনেক ডাক্তার বাবু রয়েছেন যারা লিজেন্ড ব্যক্তি, তারা সমাজের জন্য নীরবেই কাজ করে গিয়েছেন। তাঁরাই সমাজে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, আমিও চাইবো তরুণ প্রজন্মের ডাক্তাররা যাতে এভাবে কাজ করেন। আপনাদের জন্ম হয়েছে অন্যদের জীবন রক্ষার জন্য। কতো বড় দায়িত্ব ভগবান আপনাদের দিয়েছেন। ডাক্তারদের সারা জীবন ভরই কাজ করতে হবে। রোগী ও ডাক্তারদের অনুপাত এনএমসি বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত অনুযায়ী করার চেষ্টা চলছে। আগামীদিনে আরো বেশি ডাক্তার নিযুক্ত করা হবে।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, রাজ্য সরকার স্বচ্ছতা বজায় রেখেই চাকরি প্রদানের চেষ্টা করছে। আজকের দিন পর্যন্ত ডাই ইন হারনেস সহ ২০,০৩৬ জনকে সরকারি চাকরি দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও অনেক চাকরি প্রদান করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্বনির্ভরতার উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। স্বচ্ছতা বজায় রেখে চলার চেষ্টা করছে রাজ্যের বর্তমান সরকার। ত্রিপুরা যে সঠিক দিশায় চলছে এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে জিএসডিপি এবং মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থান অধিকার করা। ডাঃ সাহা জানান, আগরতলা সরকারি মেডিকেল কলেজে (এজিএমসি) বর্তমানে ১৫০টি এমবিবিএস আসন সংখ্যা রয়েছে। আরো ৫০টি আসনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। সেটাও প্রায় বরাদ্দ হয়েছে। সেটা হলে ২০০টি আসন হবে। এখন পর্যন্ত সারা রাজ্যে ৪০০টি এমবিবিএস আসন রয়েছে। বিডিএস এ ৬৩টি আসন হয়েছে। ৫০ আসনের বিএসসি নার্সিং হয়েছে। ফার্মেসি কলেজ রয়েছে। সবমিলিয়ে এখানে একটা মেডিকেল হাব করার চেষ্টা চলছে।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে, স্বাস্থ্য দপ্তরের অধিকর্তা ডাঃ তপন মজুমদার, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের মিশন অধিকর্তা সাজু ওয়াহিদ এ, পরিবার কল্যাণ ও রোগ প্রতিরোধ দপ্তরের অধিকর্তা ডাঃ নির্মল সরকার, এজিএমসির অধ্যক্ষ প্রফেসর ডাঃ অনুপ কুমার সাহা, শিক্ষা অধিকর্তা এন সি শর্মা সহ অন্যান্য বিশিষ্ট চিকিৎসক ও আধিকারিকগণ।