• শুকিয়ে যাবে গঙ্গা! হাতে আর কত সময় আছে
    আজকাল | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক:  ভারতের প্রাণ, প্রায় ৬০০ মিলিয়ন মানুষের জীবনরেখা গঙ্গা নদী আজ এক অভূতপূর্ব সংকটের মুখে। নতুন গবেষণা বলছে, নদীটি গত ১,৩০০ বছরে সবচেয়ে ভয়াবহ শুষ্কতার সম্মুখীন হয়েছে এবং বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আগামী দিনে এর জলের প্রবাহে আরও বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটতে পারে। এর সরাসরি প্রভাব পড়বে ভারত, নেপাল এবং বাংলাদেশের জলনিরাপত্তা, কৃষি এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের উপর।

    এই গবেষণা পরিচালনা করেছেন আইআইটি গান্ধীনগরের বিজ্ঞানীরা। তাঁরা মনসুন এশিয়া ড্রট অল্টাস এবং প্রাচীন জলবায়ুর নথি ব্যবহার করে ৭০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত গঙ্গার প্রবাহের ইতিহাস পুনর্গঠন করেছেন। গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক জার্নালে। ফলাফলে দেখা যায়, সাম্প্রতিক দশকগুলোতে নদীর প্রবাহ নাটকীয়ভাবে কমেছে—বিশেষত ১৯৯১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে।

    আইআইটি গান্ধীনগরের অধ্যাপক বিমল মিশ্র বলেন, “১৯৯০-এর দশক থেকে গঙ্গার প্রবাহ মারাত্মকভাবে হ্রাস পাচ্ছে। এই সময়ে প্রবাহের ঘাটতি ১৬শ শতকের সবচেয়ে বড় খরার তুলনায় ৭৬ শতাংশ বেশি ছিল। এত অস্বাভাবিক শুষ্কতা কেবল প্রাকৃতিক কারণেই ঘটতে পারে না, বরং মৌসুমী বায়ুর পরিবর্তন ও মানবসৃষ্ট কার্যকলাপের যৌথ প্রভাব এর পেছনে রয়েছে।”

    এই পরিবর্তনের প্রভাব ইতিমধ্যেই স্পষ্ট। ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে গঙ্গার মধ্য ও নিম্ন অববাহিকায় জলস্তর ইতিহাসে সর্বনিম্নে নেমে যায়। এর ফলে পানীয় জল সরবরাহ, বিদ্যুৎ উৎপাদন, সেচ এবং নৌপরিবহনে ব্যাপক সমস্যা দেখা দেয়। সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ১২ কোটিরও বেশি মানুষ।অবাক করার মতো বিষয় হল, এই গবেষণা সাম্প্রতিক জলবায়ু মডেলের পূর্বাভাসকে চ্যালেঞ্জ করছে। অনেক মডেল উষ্ণায়নের সঙ্গে প্রবাহ বাড়ার কথা বললেও বাস্তবে গঙ্গা অববাহিকায় প্রবাহ ক্রমেই কমছে। বিজ্ঞানীরা একমত যে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর পরিবর্তিত বৃষ্টিপাতের ধরণই এই অঞ্চলের জল সরবরাহে সবচেয়ে বড় প্রভাব ফেলবে।

    ২০২৪ সালে আইআইএসইআর ভোপালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৬০ সালের পর থেকে গঙ্গা অববাহিকায় হঠাৎ তীব্র বর্ষণের প্রবণতা বেড়েছে, ফলে আকস্মিক বন্যার ঝুঁকি বাড়ছে। কিন্তু একই সঙ্গে মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমেছে, বিশেষ করে পূর্ব ভারতের ইন্দো-গাঙ্গেয় সমভূমি এবং দক্ষিণের উপ-বেসিনগুলোতে (চম্বল, বেতওয়া, টনস, সোন ইত্যাদি)। অন্যদিকে, হিমালয় ঘেঁষা উপরের গঙ্গা ও যমুনা অববাহিকায় বৃষ্টি এবং এর স্থায়িত্ব উভয়ই বেড়েছে।

    এছাড়া ২০১৫ সালে আইআইটিএম পুনের এক গবেষণায় উঠে আসে ভারত মহাসাগরের দ্রুত উষ্ণায়ন এবং স্থলভাগের তুলনামূলক ধীর উষ্ণতা। এর ফলে ভূমি-সমুদ্র তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাচ্ছে, যা মৌসুমি বায়ুর দুর্বলতায় ভূমিকা রাখছে এবং কেন্দ্রীয়-পূর্ব ও উত্তর ভারতে গ্রীষ্মকালের বৃষ্টিপাত কমিয়ে দিচ্ছে। সামগ্রিকভাবে নদী অববাহিকা অভূতপূর্ব শুষ্কতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।

    বিজ্ঞানীরা সতর্ক করছেন, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু—যা গঙ্গা অববাহিকার ৭৫ শতাংশের বেশি বৃষ্টিপাত সরবরাহ করে—এর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। তাই গঙ্গার প্রবাহ হ্রাসের আসল কারণ খুঁজে বের করা এবং কার্যকর জলসম্পদ ব্যবস্থাপনা শুরু করাই এখন সবচেয়ে জরুরি।গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি বায়ুকে প্রভাবিত করে এমন জলবায়ু প্যাটার্ন, মানবসৃষ্ট কার্যকলাপ, এয়ারোসোল নিঃসরণ, সেচ—সবকিছুকেই জলবায়ু মডেলে গুরুত্ব দিয়ে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তাহলেই আমরা ভবিষ্যতের জন্য সঠিক পূর্বাভাস দিতে পারব এবং গঙ্গার মতো গুরুত্বপূর্ণ জলসম্পদ রক্ষা করতে পারব।
  • Link to this news (আজকাল)