• টাকার অভাব, দুর্গাপুজোতে গ্রামবাসীদের খাওয়াতে পারছেন না অনুব্রত মণ্ডল...
    আজকাল | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: বঙ্গ রাজনীতিতে দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা হিসেবেই পরিচিত বীরভূমের তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল। রাজনীতির পাশাপাশি নিজের গ্রাম নানুরের হাটসেরান্দিতে দুর্গাপুজোও বহুদিন ধরে তাঁর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। প্রতি বছর তিনি এই সময়েই ছুটে যেতেন গ্রামে। শুধু তাই নয়, গ্রামবাসীদের জন্য পাত পেতে খাওয়ানোর ঐতিহ্যও গড়ে তুলেছিলেন তিনি।

    তবে সময় বদলেছে। ২০২২ সালের ১১ আগস্ট গরু পাচার মামলায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তারের পর থেকে সেই ধারাবাহিকতা ভেঙে যায়। টানা দুই বছর—২০২২ এবং ২০২৩, গ্রামবাসীদের আর খাওয়াতে পারেননি তিনি। যদিও গত বছর দুর্গাপুজোর ঠিক মুখে জামিনে মুক্ত হয়ে ফিরে এসেছিলেন নিজের গ্রামে। সেবারও তিনি স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, আর্থিক সমস্যার কারণে আর খাওয়াতে পারবেন না।

    তারপর কেটে গিয়েছে আরও একটি বছর। রাজনীতিতে ফের ‘কামব্যাক’ করেছেন অনুব্রত। বীরভূম জেলা সভাপতির পদে না থাকলেও বর্তমানে তিনি জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির কনভেনার। ফলে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় থাকলেও দুর্গাপুজোয় সেই পুরনো 'আভিজাত্য' আর ফেরাতে পারছেন না কেষ্ট। হাটসেরান্দির বহু মানুষই আশা করেছিলেন, এ বছর হয়ত আবার শুরু হবে সেই  খাওয়া দাওয়া। কিন্তু অনুব্রতের বক্তব্যে স্পষ্ট হল, এখনও তাঁর সেই আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য ফেরেনি।

    তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, 'আমার কোনও অ্যাকাউন্টই খোলেনি। খাওয়ার আয়োজন করব কোথা থেকে!'  উল্লেখযোগ্য, গরু পাচার মামলায় গ্রেপ্তারির পর অনুব্রতের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ় করেছিল ইডি এবং সিবিআই। জামিনে মুক্ত হলেও সেই অ্যাকাউন্ট আজও বন্ধ রয়েছে বলে দাবি তাঁর।

    তবে পুজোতে গ্রাম ছেড়ে থাকার প্রশ্নই ওঠে না। অনুব্রত জানিয়েছেন, হাটসেরান্দির শতাব্দী প্রাচীন বাড়ির দুর্গাপুজোই তাঁর কাছে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। 'আমি প্রতি বছরই আগে বাড়ির প্রতিমা দর্শন করি। তারপর অন্য ঠাকুর দেখি। আমাদের পূর্বপুরুষের পুজো। ওই পুজোর প্রতি অমোঘ টান রয়েছে,' বলেন তিনি।

    গ্রামবাসীরাও জানাচ্ছেন, হাটসেরান্দিতে মোট ১৮টি দুর্গাপুজো হলেও কেষ্ট মণ্ডলের বাড়ির পুজোর আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। যদিও আগের মতো জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন আর নেই, তবুও পুজোর সময় প্রভাবশালী নেতাকে কাছে পাওয়ার আনন্দে মাতোয়ারা থাকেন স্থানীয়রা।

    অতএব, এবারের দুর্গাপুজোতেও অনুব্রত মণ্ডলের গ্রামের মানুষজনকে পাত পেড়ে খাওয়ানোর আয়োজন থাকছে না। তবে নিজের গ্রামেই পুজো কাটাবেন তিনি—এই আশ্বাসেই খুশি হাটসেরান্দির বাসিন্দারা।  উল্লেখ্য়, বর্তমানে গত জুলাই মাসে বীরভূমে দলের কোর কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি। তারপরেই অনুব্রতকে দলের কোর কমিটির কনভেনার করা হয়।

    এর আগে গত মে মাসে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে জেলায় জেলায় দলের সভাপতি ও চেয়ারম্যানদের যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল সেখানে দেখা গিয়েছিল বীরভূম জেলায় দলের সভাপতি হিসেবে অনুব্রত মণ্ডলের নাম নেই। যদিও সেই কোর কমিটির সদস্য হিসেবে অনুব্রতর নাম অন্তর্ভুক্ত করেছিল দল। অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে দলের সাংসদদেরও কমিটিতে 'এক্স অফিসিও' হিসেবে রাখা হয়। স্বাভাবিকভাবেই ঘাসফুল শিবিরের এই সিদ্ধান্তে বার্তা যায় বীরভূমের সকলের কাছেই, 'দলে কেউই অপরিহার্য নয়।' সূত্র অনুযায়ী জানা গিয়েছিল, তৃণমূলের এই সিদ্ধান্তে স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা ভেঙে পড়ে দলে অনুব্রতর অনুগামীরা। 

    এরপর বীরভূম সফরে যান তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি। সেখানে পৌঁছনোর পর জেলার অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে নেত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যান অনুব্রতও। এরপরেই একান্ত সাক্ষাৎকার হয় মমতা ও অনুব্রতর মধ্যে। সাক্ষাৎকার শেষে অনুব্রত বেরিয়ে যান। সংবাদ মাধ্যমের কোনো প্রশ্নেরই তিনি জবাব দেননি। তবে কিছু যে একটা হতে চলেছে সেটা বোঝা যায় যখন সোমবার দুপুরে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকে অতিথিদের তালিকায় একেবারে এক নম্বরে অনুব্রতর নাম দেখা যায়। যদিও এই সভায় অনুব্রত এসেছিলেন WBSRDA-এর চেয়ারম্যান হিসেবে। কিন্তু মুখে মুখে শুরু হয় আলোচনা। তবে কি আবার অনুব্রত ফিরতে চলেছেন স্বমহিমায়। সোমবার দুপুরের পরেই যেটা স্পষ্ট হয়ে যায়। কোর কমিটির কনভেনার করা হয় অনুব্রতকে। 
  • Link to this news (আজকাল)