বোরো টেরিটোরিয়াল রিজিয়ন কাউন্সিল ভোটে বিরাট ধাক্কা খেল বিজেপি! মাত্র পাঁচ আসনে কোনোমতে জয় ...
আজকাল | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার জন্য বড় ধাক্কা বয়ে আনল বোরো টেরিটোরিয়াল রিজিয়ন (বিটিআর) স্বশাসিত কাউন্সিলের ভোট ফলাফল। ৪০ আসনের এই নির্বাচনে বিজেপি মাত্র পাঁচটি আসন জিততে সক্ষম হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং একাধিক জনসভা ও প্রচারে নেতৃত্ব দিলেও দল আশানুরূপ ফল করতে পারেনি।
গণনার ফল অনুযায়ী, বিরোধী দল বোরো পিপলস ফ্রন্ট (বিপিএফ) এককভাবে ২৯টি আসন দখল করে কার্যত কাউন্সিল দখল করেছে। অপর আঞ্চলিক শক্তি, যাদের সঙ্গে বিজেপি গতবার জোট বেঁধেছিল—ইউনাইটেড পিপলস পার্টি-লিবারেল (ইউপিপিএল)—সেখানে মাত্র সাত আসন পেয়েছে। বিজেপির আসন সংখ্যা পাঁচে নেমে গেছে।
গত নির্বাচনে বিজেপি নয়টি আসন জিতেছিল, ইউপিপিএল পেয়েছিল ১২টি। বিপিএফ সেই সময়ও ছিল একক বৃহত্তম দল—১৯ আসন পেয়েছিল। অর্থাৎ এবারের ফলাফল বিপিএফের বড় ধরনের প্রত্যাবর্তনকে নির্দেশ করছে। বিটিআর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় (অসমের পশ্চিম প্রান্তে, ভুটান সীমান্ত সংলগ্ন) এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২২ সেপ্টেম্বর। পুরো ভোট প্রক্রিয়া হয়েছিল কাগজের ব্যালটে। ২৬ সেপ্টেম্বর গণনা শুরু হওয়ার পর থেকেই বিপিএফের দাপট স্পষ্ট হয়ে যায়।
মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এবার ইউপিপিএলের সঙ্গে পুরনো জোট চালিয়ে না গিয়ে স্বতন্ত্রভাবে বিজেপিকে লড়াইয়ে নামান। তাঁর হিসাব ছিল—স্থানীয় দলগুলির অ্যান্টি-ইনকামবেন্সি থেকে বিজেপিকে দূরে রাখা এবং নির্বাচনের পর বিজয়ী শক্তির সঙ্গে হাত মেলানো। নির্বাচনী প্রচারে শর্মা প্রকাশ্যে বলেছিলেন, যে দলই জিতুক, বিজেপি তার সঙ্গে জোট করবে। কিন্তু ভোটারদের রায়ে বিপিএফ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে এবং বিজেপি কার্যত প্রান্তিক অবস্থানে চলে গেছে।
২০২০ সালে কেন্দ্র সরকার তৎকালীন অল বোরো স্টুডেন্টস ইউনিয়নের নেতা প্রমোদ বোরো, এনডিএফবি নেতা রঞ্জন দাইমারি ও অন্যান্য সংগঠনের সঙ্গে একটি নতুন শান্তিচুক্তি করে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দাবি করেছিলেন যে চুক্তির “৮২ শতাংশ” বাস্তবায়িত হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে বহু প্রতিশ্রুতি আজও অপূর্ণ থেকে যাওয়ায় স্থানীয় ক্ষোভ বাড়ছে। এর প্রভাব ভোটে পড়েছে বলেই রাজনৈতিক মহলের অভিমত।
বিপিএফ প্রধান হাগ্রামা মহিলারি নির্বাচনী প্রচারের সময় স্পষ্ট বলেছিলেন—২০২০ সালের শান্তিচুক্তি অঞ্চলের জন্য কোনও বাস্তব সুবিধা আনতে পারেনি। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বিটিআর এলাকায় বিজেপি সরকারের উচ্ছেদ অভিযান চলতে দেবেন না, বরং ভূমিহীনদের জমি প্রদান নিশ্চিত করবেন। জয়ের পর তিনি ফের সেই প্রতিশ্রুতি পুনরাবৃত্তি করেছেন।
২০০৫ সালে হওয়া শান্তিচুক্তির ভিত্তিতে বিপিএফ প্রথমে কংগ্রেসের সঙ্গে দশ বছর ক্ষমতা ভাগ করে। ২০১৬ সালে হাগ্রামা বিজেপির সঙ্গে হাত মেলান এবং সোনোয়াল সরকারের অংশ হন। তবে হিমন্ত বিশ্ব শর্মার শাসনকালে বিজেপি নতুন বোরো চুক্তি আনে এবং হাগ্রামাকে কার্যত উপেক্ষা করে ইউপিপিএলকে সামনে আনে। ফলে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এবার ভোটাররা যেন সেই ঘটনারও জবাব দিলেন।
অসমে ২০২৬ সালের গোড়াতেই বিধানসভা নির্বাচন। সাম্প্রতিক সীমা পুনর্নির্ধারণে বিটিআর অঞ্চলের আসন বেড়ে ১৫ হয়েছে, যদিও রাজ্যের মোট আসন সংখ্যা ১২৬-ই রয়ে গেছে। ফলে বিটিআর অঞ্চলে বিপিএফের এই পুনরুত্থান হিমন্ত সরকারের জন্য বড় রাজনৈতিক বার্তা বহন করছে। বিটিআর কাউন্সিলের নির্বাচনে বিপিএফের সাফল্য এবং বিজেপির দুর্বল পারফরম্যান্স আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে শাসক দলের জন্য একটি বড় সতর্কবার্তা। হিমন্ত বিশ্ব শর্মার ব্যক্তিগত মর্যাদাও এতে বড় ধাক্কা খেল।