• পুজোর সময় দুঃসংবাদ! গুজরাটে দুর্ঘটনায় মৃত্যু কালনার পরিযায়ী শ্রমিকের
    প্রতিদিন | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • অভিষেক চৌধুরী, কালনা: পুজোর আনন্দ নিমেষে বদলে গেল বিষাদে। বিজেপি শাসিত গুজরাটে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন বাংলার পরিযায়ী শ্রমিক। এর পিছনে রাজ্যের পরিবহণ ব্যবস্থায় চরম গাফিলতি ও প্রশাসনিক উদাসীনতার অভিযোগ তুলছে কালনার মৃত শ্রমিকের পরিবার। সহায়সম্বলহীন হয়ে পড়ল দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারটিকে। অথৈ জলে পাঁচ সদস্যের গরিব পরিবারটি।

    জানা যাচ্ছে, মৃতের নাম হারাধন দেবনাথ, বয়স ৫২ বছর। বাড়ি কালনার নান্দাই আশ্রমপাড়া এলাকায়। পরিবার সূত্রে খবর, চারমাস আগে গুজরাটের ভুজে পাড়ি দেন হারাধন দেবনাথ। সেখানে একটি বেসরকারি কারখানায় তিনি কাজ করতেন। শুক্রবার বিকেলে কাজের শেষে তিনি কোম্পানির গাড়িতে চেপে বাসায় ফিরছিলেন। শ্রমিক বেশি থাকায় গাড়ির ভিতরে বসার জায়গা হয়নি। জানা গিয়েছে, হারাধন-সহ তিন শ্রমিক গাড়ির পিছনে বাদুড় ঝোলার মত ঝুলতে ঝুলতে ফিরছিলেন। গাড়ি চলছিল তীব্র গতিতে। বেহাল রাস্তার তীব্র ঝাঁকুনিতে ছিটকে পড়েন তিনজনেই। পিছন থেকে আসা একটি গাড়ি তখন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা হারাধনকে পিষে দেয়।

    সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। ঘটনায় গুরুতর জখম বিহার ও ত্রিপুরার ২ শ্রমিক স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শুক্রবার রাতেই নান্দাই আশ্রমপাড়ায় হারাধনের মৃত্যুর খবর পৌঁছতেই শোকের ছায়া নামে। শোকে পাথর হয়ে পড়ে তাঁর পরিবার। হারাধনের স্ত্রী রত্না দেবনাথ জানান, ”২ সন্তান ও বাবা-মাকে নিয়ে ৬ জনের সংসার টানতে হিমশিম খাচ্ছিলেন হারাধন। গুজরাটের ভুজে একটা কারখানায় কাজে যোগ দেন। রোজই কাজ সেরে গাড়ির পিছনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঝুলতে ঝুলতেই ফিরতে হত শ্রমিকদের। গাড়ির ভিতরে জায়গা জুটত না। এই বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ জানিয়েও ফল মেলেনি। শেষমেশ প্রাণটাই চলে গেল।”

    হারাধনের ছেলে অমিতকে ফ্যাক্টরি মালিক ফোন করে জানিয়েছেন, অ্যাম্বুল্যান্সে ব্যবস্থা করে ভুজ থেকে হারাধনের দেহ নান্দাই গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে। সপ্তমী পুজোর দিন সেই দেহ নান্দাইয়ে পৌঁছনোর কথা। স্থানীয় পুজো উদ্যোক্তারা পুজোর আগে ঘরের মানুষকে হারিয়ে শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। আর কোনও পুজো মণ্ডপে পা রাখবেন না হারাধনবাবু। বরং নিথর দেহ এসে পৌঁছবে গ্রামের বাড়িতে। এই ঘটনায় স্থানীয়দের অনেকেই প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, শ্রমিকদের মানুষ না ভেবে গবাদি পশুর মতো করে নিয়ে যাওয়ার কারণেই এই ঘটনা। পরিবহণ ব্যবস্থায় পুলিশ প্রশাসনের নজরদারি যে নেই, এই ঘটনাই তা প্রমাণ করে দেয়।
  • Link to this news (প্রতিদিন)