নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের বিজয় দশমী পালন প্রতি বছরই হয়। সংঘ প্রতিষ্ঠার বর্ষপূর্তি হিসেবে ওই দিনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল সরসংঘচালকের ভাষণ। ২০২৫ সালের বিজয়া দশমী পালন এবং সরসংঘচালকের ভাষণের তাৎপর্য অন্য বছরের তুলনায় পৃথক। কারণ এদিন থেকেই শুরু হবে সংঘের শতবর্ষ পালন উৎসব। ১৯২৫ থেকে ২০২৫। সংঘের শতবর্ষ সম্পূর্ণ হচ্ছে। আর সেই উৎসব এক বছর ধরে চলবে। কিন্তু সংঘের নীতি, আদর্শ ও ভাবধারার মন্ত্রশিষ্য বিজেপির কাছে সংঘের এই গৌরবজনক অধ্যায়ের দিন কিছুটা যেন ধর্মসঙ্কট নিয়ে এসেছে। কারণসংঘের শতবর্ষ যেদিন হচ্ছে, সেই ২ অক্টোবর মহাত্মা গান্ধীর জন্মজয়ন্তী। অর্থাৎ সম্পূর্ণ বিপরীত ভাবধারার দুই সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থানের গুরুত্বপূর্ণ বার্ষিকী একই দিনে। আর সেটাই হয়েছে নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপির কাছে ঘোর দ্বিধার কারণ। বিজয়া দশমীতে দিল্লিতে একঝাঁক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন মোদি। নাগপুরে সংঘের শতবর্ষ অনুষ্ঠানে সম্ভবত যাচ্ছেন না। কিন্তু বহু বিজেপি নেতারাই সেখানে যাওয়ার কথা। আরএসএসের শতবর্ষ অনুষ্ঠানে প্রত্যক্ষভাবে বিজেপি নেতাদের নানাবিধ ভূমিকায় দেখা যাবে। কিন্তু ২ অক্টোবর কোন অনুষ্ঠানকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে এবং কীভাবে এই দুই জয়ন্তীকে ভারসাম্য রক্ষা করা হবে, আপাতত বিজেপির অন্দরে সেটা নিয়েই সবথেকে বড় চর্চা চলছে। স্বাধীনতা, দেশভাগ, দাঙ্গা, উদ্বাস্তু সমস্যা নিয়ে মহাত্মা গান্ধী ও সংঘের সম্পূর্ণ পরস্পরবিরোধী তিক্ততা ও মনোভাব ইতিহাসে স্পষ্ট। এমনকী ১৯৪৭ সালে দাঙ্গা থামাতে কলকাতায় মহাত্মা গান্ধীর উপবাসকে কটাক্ষ করে আরএসএসের মুখপত্র অর্গানাইজারে লেখা হয়েছিল রোম যখন পুড়ছিল, তখন নিরো বেহালা বাজাচ্ছিলেন। আমাদের এখানেও সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে আরএসএসের দ্বিতীয় সরসংঘচালক এম এস গোলওয়ালকরের বৈঠকও হয়েছিল। কিন্তু আরএসএস মহাত্মা গান্ধীর মুসলিম নীতির চরম বিরুদ্ধাচারণ করে প্রথম থেকেই। এবার সংঘের শতবর্ষ অনুষ্ঠান বড়সড় কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। সংঘ যে নিছক হিন্দুত্ববাদী সামাজিক সংগঠন নয়, তার পরিধি দেশ ও সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে রয়েছে, সেই বার্তা দিতে সংঘ বেশ কিছু বছর ধরেই চেষ্টা করছে। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে বিশেষ বক্তৃতা সিরিজের প্রধান বক্তা হিসেবেও আমন্ত্রণ জানিয়ে নাগপুরে নিয়ে আসা হয়েছিল। শতবর্ষ অনুষ্ঠানে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ছাড়াও সঙ্গীত, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি, শিক্ষা জগতের বিখ্যাত ও প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিত্বকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে। রবিবার খ্যাতনামা গায়ক শংকর মহাদেবনের গাওয়া আরএসএসের প্রতিষ্ঠান সঙ্গীতের একটি অ্যালবাম প্রকাশ করবেন ভাগবত। থাকবেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতীন গাদকারি, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশও। কিন্তু ২ অক্টোবর দেশজুড়ে সকাল থেকে চলবে গান্ধীবন্দনা এবং গান্ধীর জন্মজয়ন্তী পালন। আবার সকাল ৭ টা ৪০ মিনিটে শুরু হবে সংঘের শতবর্ষ অনুষ্ঠান ও ভাষণ। প্রধানমন্ত্রী সহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও বিজেপি নেতৃত্ব তথা জনপ্রতিনিধিরা দিল্লির রাজঘাটে উপস্থিত হবেন গান্ধীকে শ্রদ্ধা জানাতে। এটা নিয়েও সংশয় নেই যে, আরএসএসের শতবর্ষকেও তাঁদের পক্ষে উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। বরং বিজেপির কাছে এই দিনটি সবথেকে তাৎপর্যপূর্ণ।