হিন্দু-মুসলমান, সকলেই প্রসাদ খান, দেওয়া হয় মাসকলাই বলি, আন্ধারুপাড়া ঘোষবাড়ির দুর্গাপুজোয় সম্প্রীতির আবহ
বর্তমান | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
মঙ্গল ঘোষ, পুরাতন মালদহ: ইংলিশবাজার শহরের আন্ধারুপাড়ার ঘোষবাড়ির দুর্গাপুজোর এবার ২৬০তম বছর। এই পুজো প্রতি বছরই সর্ব ধর্মের মিলন মেলায় পরিণত হয়। শুধু তাই নয়, সপ্তমী থেকে নবমী সবাই একসঙ্গে বসে প্রসাদ খান। এই ঐতিহ্য প্রথম থেকেই ধরে রেখেছেন পরিবারের সদস্যরা। পুজোর দিনগুলিতে মণ্ডপে কোনও ভিক্ষুক বা আগন্তুক এলে তাঁকেও মায়ের প্রসাদ না খেয়ে যেতে দেওয়া হয় না। পরিবারের তরফে যথাসাধ্য আপ্যায়ন করা হয়। নবমীর দিন হয় অন্নকূট। ওইদিন আরও ভিড় উপচে পড়ে। সব মিলে পুজোকে ঘিরে হিন্দু, মুসলিম সহ অন্য ধর্মের মিলন মেলায় পরিণত হয়। সেই ঐতিহ্য আজও অমলিন রয়েছে।
পুজোর নিয়ম একই থাকলেও ৬২ বছর ধরে মহিষ বলি আর হয় না। তার বদলে বর্তমানে মাসকলাই বলি দেওয়া হয়। ঘোষ পরিবারের অন্যতম সদস্য দিলীপ ঘোষ এবং দীপঙ্কর ঘোষ বলেন, আমাদের বাড়ির ২৬০ বছরের পুজো। অবিভক্ত ভারতের বর্তমানে বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার নওগাঁ এলাকায় এই পুজো হতো। মায়ের স্বপাদেশে পুজো প্রচলন হয়। আগে মহিষ বলি দেওয়া হতো। ১৯৬৩ সালের পর আমরা ইংলিশবাজারে চলে আসি। তারপর থেকে মহিষ বলি বন্ধ হয়ে যায়। আগে কুমড়ো বলি দেওয়া হতো, এখন মাসকলাই বলি দেওয়া হয়।
পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, পুজোয় নিয়ম নিষ্ঠা ও ঐতিহ্য আজও অটুট। রথের দিন কাঠামো পুজো হয় দুধ ও গঙ্গার জল দিয়ে। তারপর মূর্তি গড়ার কাজ শুরু হয়। মহালয়াতেই মায়ের চক্ষু দান হয়। পুজোর দিনে ১০৮টি বেলপাতা, পদ্মের পাতা, সন্ধিপুজোয় ১০৮টি জবাফুলের মালা দেওয়া হয়। ভোগে সপ্তমীতে থাকে সাদা অন্ন, ঘি, ডাল, শাক, তরকারি, দই, মিষ্টি, ডাবের জল, অষ্টমীতে লুচি, ডাল, ভাজা, পনির, মিষ্টি, সন্ধিপুজোয় খিচুড়ি, ডাল, তালের বড়া, নবমীতে হয় মহাযজ্ঞ এবং অন্নকূট।
পরিবারের সদস্যরা বলেন, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। পূর্ব পুরুষদের ধারা বজায় রেখে সব ধর্মকে আমরা আমন্ত্রণ জানাই। মানুষের মধ্যেই ভগবান রয়েছেন। কয়েকদিন মহামিলন মেলা হয়ে থাকে। কাউকে খালি মুখে ফেরানো হয় না। নিজস্ব চিত্র