কাঁকসার গোপালপুরের লায়েক বাড়ির দেবী বন্দনায় পুজো পাঠাতেন স্বয়ং সম্রাট জাহাঙ্গির
বর্তমান | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সংবাদদাতা, মানকর: কাঁকসা ব্লকের প্রাচীন দুর্গাপুজোগুলির মধ্যে অন্যতম গোপালপুরের লায়েকবাড়ির পুজো। এবারের পুজো ৫২৫ বছরে পদার্পণ করেছে। প্রতিমা থেকে দেবীর গয়না সবেতেই রয়েছে বিশেষত্ব। পরিবারের সদস্যদের দাবি, প্রাচীন প্রথা মেনে পুজোর আয়োজন হয়।পরিবারের বর্তমান পুজো উদ্যোক্তারা জানান, মোঘল সম্রাট সেলিম অর্থাৎ জাহাঙ্গির এখানে পুজো পাঠাতেন। আসলে কাঁকসার সিলামপুরে রাজ্যপাট ছিল সম্রাটজাহাঙ্গিরের। এই এলাকা একসময় ছিল তাঁরই পরগনার অধীনে।
লায়েকবাড়ির দেবী মূর্তি অন্য প্রতিমার চেয়ে আলাদা। দেবী এখানে ব্যাঘ্রবাহিনী রূপে পূজিতা হন। দেবীর মূর্তি রণংদেহী। দেবীর সব সাজ মাটির তৈরি। তবে স্বর্ণমুকুট পরিহিতা অবস্থায় দেবীর আরাধনা করা হয়। রণংদেহী মূর্তি হওয়ায় শাড়ির বদলে মায়ের পরনে থাকে ঘাঘরা। তাছাড়া দেবীর দু’টি হাত শরীরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হলেও বাকি আটটি হাত শরীরের তুলনায় ছোট ও সরু। রীতি মেনে এলাকার রানিসায়র থেকে নবপত্রিকা আনা হয়। তবে দেবীর বিসর্জন পরিবারের নিজস্ব পুকুরেই হয়।
পরিবারের সদস্য কাঞ্চন লায়েক বলেন, পূর্বপুরুষদের মুখে শুনেছি, একসময় নরবলির প্রথা ছিল। এখনও বলি হয়। কিন্তু তাতেও রয়েছে বিশেষ নিয়ম। অষ্টমীর দিন শ্বেত ছাগ বলি হয়। নবমীর দিন দু’টি ছাগ বলি হয়। এদিন ছাগের রং নিয়ে কোনও নিয়ম নেই। দেবীকে এখানে শাক্তমতে পুজো করা হয়। নিয়ম রয়েছে, একবার পুরোহিত পুজোর আসনে বসলে, পুজো সম্পূর্ণ না করে উঠতে পারবেন না।
পরিবারের সদস্য তপন লায়েকের কথায়, পুজোয় প্রতিদিনই ৮০ কেজি চালের নৈবেদ্য নিবেদন করতে হয় দেবীকে। ভোগে দেওয়ার জন্য ৩২ থালা নাড়ু তৈরি করতে হয় পরিবারের সদস্যদের। এই নাড়ু বাজার থেকে কেনা হলে চলবে না। নারকেল, সিঁড়ি, খৈ, বন্দে নাড়ু দেবীকে নিবেদন করা হয়। পুজোর চারদিন মায়ের অন্ন ভোগ হয় না। লুচি, চিঁড়ে, দুধ ইত্যাদি দিয়ে দেবীকে ভোগ নিবেদন করতে হয়।
মায়ের প্রতিমা বিসর্জনেও প্রাচীন নিয়ম মানা হয়। দেবীকে এখানে গ্রামের অর্ধেক অংশ প্রদিক্ষণ করানো হয়। এই ঘটনার পিছনেও রয়েছে ইতিহাস। একবার বিসর্জনের দিন গ্রামে আগুন লেগেছিল। ঘটনা পরবর্তীতে এই এলাকা পোড়া গ্রাম নামেই পরিচিত হয়ে যায়। সেই থেকে লায়েক পরিবারের প্রতিমা গ্রামের আর্ধেক ঘোরানো হয়।