কোলসড়া গ্রামে ঘোষালবাড়ির দুর্গাপুজো কলাবাগানে বালিকাবেশে দেখা দিয়েছিলেন দেবী
বর্তমান | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
গণেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, বর্ধমান: জন্মাষ্টমী তিথিতে বিশেষ পুজো ও অর্চনার মাধ্যমে জামালপুরের কোলসড়া গ্রামের ঘোষালবাড়ির দুর্গা প্রতিমার গায়ে গঙ্গামাটি দেওয়া হয়। মহালয়ার পরদিন অর্থাৎ প্রতিপদে দেবীর বোধন হয়। ওইদিন থেকে নবমীর দিন পর্যন্ত প্রতিদিন বিশেষ পূজার্চনা ও ভোগ আরতি হয়। এই পুজোর বিশেষত্ব হল, প্রতিদিনের ভোগ কেবলমাত্র গঙ্গাজলে হয়। মহালয়ার দিন তর্পণ করতে গিয়ে এই বংশের সদস্যরা ট্রাকে করে প্রায় ২০টিন গঙ্গাজল ত্রিবেণী থেকে নিয়ে আসেন। দেবীদুর্গা কলাবাগানের মধ্যে প্রথম দেখা দিয়েছিলেন বলে পুজোর নৈবেদ্য হিসেবে থোর, কলা ও মোচা দেওয়া হয়। পুজোর সময় দরিদ্রদের বস্ত্র বিতরণ করা হয়। দশমী তিথিতে কুমারী পুজো হয়। আগে বলিদান চালু থাকলেও বর্তমানে তা আর নেই। এবছর ৩৭১তম বর্ষ উদ্যাপিত হবে।
জামালপুর থানার আবুজহাটি–২ পঞ্চায়েতের কোলসড়া হল জৌগ্রাম ও মেমারির স্টেশনের মধ্যবর্তী একটি গ্রাম। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে থেকে গ্রামটির দূরত্ব তিন কিলোমিটার। জানা গিয়েছে, ১৯০৮ সালে আবুজহাটি গ্রামের এক পরিবারের সঙ্গে ঘোষালদের বিবাদ হয়। সেবছর সন্ধিক্ষণের কিছু আগে ওই পরিবারের তরফে জোরালো বোমা ফাটানো হয়। সেই শব্দ শুনে বলিদান হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তারপরই বর্ধমানের সর্বমঙ্গলা মন্দিরের কামানের তোপধ্বনির আওয়াজ শোনা গিয়েছিল। তখন সকলেই বুঝতে পারেন, সন্ধিক্ষণের নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বলিদান হয়ে গিয়েছে। পুজোয় এহেন ব্যাঘাত ঘটায় সকলেই ভীত হয়ে পড়েন। সেবছর ঘোষাল বাড়ির দুর্গাপুজোর পুরোহিত বলেছিলেন যে, ঠাকুর যদি ক্ষতি করে তবে তাঁর উপর দিয়েই যেন যায়। ঘোষাল পরিবারের যেন কোনও ক্ষতি না হয়। আশ্চর্যের বিষয়, ওই বছর দুর্গাপুজো শেষ হওয়ার সাতদিন পর ওই পুরোহিত হৃদরোগে মারা যান। সেকারণে ১৯০৮ সালের পর থেকে পুজোয় বলিদান পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বলিদানের খাঁড়াটিকে ঘোষাল বাড়িতে রেখে দেওয়া আছে।
জানা গিয়েছে, ভূ-কৈলাসের রাজ বংশের বংশধর দিগম্বর ঘোষাল ছিলেন শেরশাহের এক বিশ্বস্ত কর্মচারী। রাজস্ব সংক্রান্ত ব্যাপারে এবং জিটি রোড নির্মাণের কাজে দিগম্বর ঘোষাল প্রায়ই বাংলায় আসতেন। একদিন নৌকায় কংস নদীপথে কোলসড়া গ্রামে এসে পৌঁছন। সেই রাতে মা সিদ্ধেশ্বরী তাঁকে স্বপ্নাদেশ দেন। স্বপ্নাদেশে মাকে এই গ্রামে প্রতিষ্ঠা করে তাঁকে পুজো করতে বলেন। তখন দিগম্বর ঘোষাল শেরশাহের কাছে স্বপ্নাদেশের কথা জানান। শেরশাহ তখন তাঁকে পাঁচশত বিঘার একটি পাঞ্জা সহ দলিল দেন। দিগম্বর ঘোষাল ১৫৪০ সালে কোলসড়া গ্রামে সিদ্ধেশ্বরী কালীর পুজোর প্রচলন করেন।
আরও জানা গিয়েছে, দিগম্বরের নাতি রামচন্দ্র ঘোষাল ১৬৫০ সালে বাণেশ্বরনাথ শিবমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। ১৬৫৫ সালে তাঁর পুত্র ঈশ্বরচন্দ্র ঘোষাল কংস নদীর পাড়ে কলাবাগানের মধ্যে একটি সুন্দরী ছোট্ট মেয়েকে দেখতে পান। মেয়েটির কাছে যেতেই সে অদৃশ্য হয়ে যায়। ওই রাতেই তাঁকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য দেবী দুর্গার স্বপ্নাদেশ পান ঈশ্বরচন্দ্র ঘোষাল। সেই বছর থেকে কোলসড়া গ্রামের ঘোষাল বাড়িতে আটপুরুষ ধরে দেবীদুর্গার পুজো হয়ে আসছে।