‘বোঝা’ থেকে ‘ভুলভুলাইয়া’ পাঁশকুড়াজুড়ে মণ্ডপে নানা থিম
বর্তমান | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: মা-বাবার অনেক ত্যাগের বিনিময়ে সন্তানের জীবন আলোময় হলেও বার্ধক্যে তাঁদের ঠাঁই হয় বৃদ্ধাশ্রমে। সন্তানের কাছে তাঁরা হয়ে ওঠেন ‘বোঝা’। স্কুলে প্রথমদিন পা রাখা শিশুটিকে ভবিষ্যতের ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেন বাবা-মা। সন্তান যত বড় হয় স্কুলের ব্যাগ বইয়ের ভারে বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। নিখুঁত শিল্পভাবনায় মেচগ্রামের সমাজশিক্ষা কেন্দ্র ও ব্যবসায়ীবৃন্দের ‘বোঝা’ থিম এবার হিট। ভিড় টানার প্রতিযোগিতায় শামিল পাঁশকুড়ার আপজন ক্লাবের ‘ভুলভুলাইয়া’ থেকে নারায়ণদিঘির ‘মানত’ থিমও। একইভাবে দর্শনার্থীদের সামনে থিমের কোলাজ তুলে ধরেছে পাঁশকুড়া শহরের প্রতাপপুর সর্বজনীনের ‘স্বর্গ রাজ্যে মা’, চিলড্রেন পার্কের পিংলার পটচিত্র।
২৩ সেপ্টেম্বর মেচগ্রামের সমাজশিক্ষা কেন্দ্রের পুজোর ভার্চুয়াল উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরদিন আনুষ্ঠানিকভাবে দর্শনার্থীদের জন্য মণ্ডপ খুলে দেওয়া হয়। তখন থেকেই মণ্ডপজুড়ে জনজোয়ার। এখানকার বিগ বাজেটের ‘বোঝা’ থিম দেখতে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর ছাড়াও হাওড়ার বিভিন্ন জায়গা থেকে দর্শনার্থীরা আসছেন। বৃদ্ধাশ্রমে বাবা-মায়ের আকুতি, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার প্রতিযোগিতায় কীভাবে হাঁফিয়ে উঠছে কচিকাঁচারা, এসবই তুলে ধরা হয়েছে।
পাঁশকুড়ার পিডব্লুডি ময়দানে আপনজন ক্লাবের থিম ‘ভুলভুলাইয়া’। মণ্ডপের ভিতরে সারি সারি আয়না। যেদিকে তাকানো হবে, শুধু নিজেকে দেখতে পাওয়া যাবে। এভাবেই দর্শনার্থীরা ভুলভুলাইয়ার মধ্যে পড়ে যাবেন। পুজো কমিটির ক্যাশিয়ার দেবাশিস রায় বলেন, এবার পুজো আট বছরে পড়ল। বাজেট প্রায় ১০লক্ষ টাকা।
পাঁশকুড়ার নারায়ণদিঘি সর্বজনীনের থিম ‘মানত’। জীবনে নানা ইচ্ছা, বাসনা পূরণের লক্ষ্যে আমরা অনেকেই ঈশ্বরের শরণাপন্ন হই। দেবদেবীর কাছে মানত করি। আবার মানত পূরণ হলে পুজো দিই। এখানকার পুজো উদ্যোক্তারা মানতের বিভিন্ন সামগ্রী দিয়ে লাল রঙের মণ্ডপ সাজিয়েছেন। পাঁশকুড়া চিলড্রেন পার্ক আমরা সবাই ক্লাব রাজস্থানের এক মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি করেছে। তার মধ্যে থাকছে পিংলার নয়াগ্রামের পটচিত্রের কাজ। মণ্ডপ বেশ আকর্ষণীয় হয়েছে।
পাঁশকুড়ার প্রতাপপুর সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির থিম ‘স্বর্গ রাজ্যে মা’। কৈলাশ থেকে সন্তানদের নিয়ে চারদিনের জন্য মা মর্ত্যে আসেন। এই উপলক্ষ্যে সর্বত্র উৎসব, উন্মাদনা। মা নিজেও খুশি হন। এই ভাবনাকে থিমে তুলে ধরেছেন উদ্যোক্তারা। পাঁশকুড়া পুরপ্রশাসক বোর্ডের চেয়ারপার্সন তথা পুজো কমিটির সভাপতি নন্দকুমার মিশ্র বলেন, এখানকার পুজো ৬০বছরে পড়ল। মণ্ডপজুড়ে আভিজাত্যের ছোঁয়া রয়েছে। বাজেট প্রায় ন’লক্ষ টাকা। প্রতিদিনই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বসে আঁকো প্রতিযোগিতা, ক্যুইজ ও পুরস্কার বিলি অনুষ্ঠান রয়েছে।
পাঁশকুড়া অগ্রভূমি সঙ্ঘের পুজোয় দক্ষিণ ভারতের একটি মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে। পুজো উপলক্ষ্যে এখানে মেলা বসেছে। এখানকার পুজো ১০ বছরে পড়ল। পাঁশকুড়া বাজার চৌরঙ্গি মোড় পুজো কমিটিও মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি করেছে।