কান্দির আদি সিংহ বাড়ির পুজোয় মহাষ্টমীতে অর্পণ করা হয় ১০৮ অপরাজিতা, দেবীকে আবার বাপেরবাড়ি পাঠানোর আর্জি জানিয়ে পুজো শেষে মহেশ্বরকে লেখা হয় চিঠি
বর্তমান | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ইন্দ্রজিৎ কর্মকার, কান্দি: ‘বাবা পরের বছর আবার যেন মাকে পাঠাবেন’- দেবীর বিসর্জনের সময় এমনই একটি চিঠি লেখা হয় মহেশ্বরকে উল্লেখ করে। কান্দি শহরের আদি সিংহবাড়ির পুজোয় এই প্রথা বহু বছর ধরেই চলে আসছে। এখানে দেবীকে মহাষ্টমীতে ১০৮টি পদ্মের সঙ্গে ১০৮ অপরাজিতাও অর্পণ করা হয়।
কান্দি শহরের প্রভাকরপাড়ার সিংহ বাড়ির পুজোয় প্রায় ৪০০ বছরের বেশি প্রাচীন বলে দাবি পরিবারের সদস্যদের। প্রভাকর সিংহ এই পুজোর প্রচলন করেছিলেন। পুজো শুরু হয় বোধনের দিন থেকেই। বোধনের দিন সেখানে চণ্ডীপাঠও করা হয়। তবে পঞ্চমীর দিন থেকে প্রাচীন রীতি মেনে প্রতিমা পুজোর উদ্মাদনা শুরু হয়ে যায়। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, দেবীর পুজো হয় বৈষ্ণব মতে। দেবীকে একমাত্র ঘরের তৈরি মিষ্টি অর্পণ করা হয়। চেষ্টা করা হয় যাতে বাইরের কোন মিষ্টি দেবীকে না দেওয়া হয়। এখানকার পুজোয় দেখা যায় নানা নিয়ম।
অন্যান্য পুজোয় নবপত্রিকা বা কলাবউ দেবীর ডানদিকে রাখা হলেও এখানকার পুজোয় কলাবউ থাকেন দেবীর বাঁদিকে। মহাষ্টমীতে দেবীকে ১০৮টি পদ্মের সঙ্গে ১০৮টি অপরাজিতাও নিবেদন করা হয়। পরিবারের সদস্য চৈতালি সিনহা বলেন, আমাদের পুজোয় অনেক রীতি রয়েছে। তার মধ্যে দেবীর বিসর্জনে পাঁচ কড়াই ছড়ানো হয়। উদ্দেশ্য হল দেবী যে পথ দিয়ে ফিরছেন, সেই পথ দিয়েই যেন আগামী বছর ফিরে আসেন। কড়াই যেহেতু শ্যামলার প্রতীক। কড়াই ছড়ানোর উদ্দেশ্য হল দেবীর যাওয়ার পথে বৃক্ষ তৈরি হবে। পরের বছর ওই বৃক্ষ দেখে দেবী ফিরে আসার পথ চিনতে পারবেন। এছাড়া বিসর্জনের সময় দেবীকে পরিবারের তরফে একটি চিঠি লিখে দেওয়া হয়। সঙ্গে ভাড়া বাবদ ষোলআনা অর্থাৎ এক টাকা দেওয়া হয়।
পরিবারের ধ্রুবজ্যোতি সিনহা বলেন, বিসর্জনের সময় দেবীর মাধ্যমে ওই চিঠি বাবা মহেশ্বরকে পাঠানো হয়। বহুবছর ধরেই আমাদের পুজোয় এই প্রথা চলে আসছে।
এদিকে, পরিবারে প্রজন্ম বৃদ্ধির সঙ্গে সিংহ পরিবারের পুজোর সংখ্যাও বেড়েছে। বর্তমানে কান্দিতে সিংহ বাড়ির চারটি পুজো হয়। নবমীর দিনে প্রত্যেক পরিবারের সদস্যরা অন্য পরিবারের বাড়িতে ঢাক বাজিয়ে প্রতিমা দর্শন করতে যান। পরিবারের দেবারতি সিনহা বলেন, বাড়ির পুজোর আনন্দটা আলাদা। তাই পুজোয় বাইরের ঠাকুর দেখতে যাওয়া হয় না। বাড়িতে পাঁচটা দিন কীভাবে কেটে যায় বুঝতেই পারি না। -নিজস্ব চিত্র