• ওন্দার দামোদরবাটিতে পূজিত নিমকাঠের দুর্গা, ১০ দিন ধরে ঠাকুরদালানে নহবৎ
    বর্তমান | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • রঞ্জুগোপাল মুখোপাধ্যায়, বাঁকুড়া: ওন্দার দামোদরবাটি গ্রামের চৌধুরী বাড়িতে পূজিতা হয় নিমকাঠের দুর্গা প্রতিমা। চৌধুরীরা একসময় জমিদার ছিলেন। তবে বর্তমানে জমিদারি আর নেই। জমিদারির সঙ্গে পুজোর আড়ম্বরে পড়েছে ভাটা। তবে নিষ্ঠার কোনও খামতি নেই। চৌধুরী পরিবারের সদস্যরা প্রাচীন রীতি মেনে আজও পুজো করেন। ৩৫০ বছরেরও বেশি পুরনো ওই দশভুজার আরাধনা এলাকায় বড় মেলার পুজো বলে পরিচিত।

    পরিবারের সদস্য পার্থপ্রতিম চৌধুরী বলেন, অতীতের আড়ম্বর না থাকলেও পুজো হয় সাবেককালের নিয়ম মেনেই। আমরা আচার পালনে কোনওরকম আপস করি না। দেবত্র সম্পত্তি থেকে পুজোর খরচ চলে। আমাদের ঠাকুরদালানে পুজো হয় বৈষ্ণব মতে। পরিবারের বেশিরভাগ সদস্য বর্তমানে বাইরে থাকেন। দুর্গাপুজোর সময় তাঁদের মধ্যে অনেকেই বাড়িতে আসেন। পুজোর কটা দিন আমরা হইচই করে কাটিয়ে থাকি। চৌধুরী বাড়ির পুজোকে কেন্দ্র করে এলাকার বাসিন্দারাও আনন্দে মেতে ওঠেন। 

    চৌধুরী বাড়ির সদস্যরা জানিয়েছেন, তাঁদের পূর্বপুরুষরা তৎকালীন পূর্ববঙ্গ অধুনা বাংলাদেশের যশোর জেলার বাসিন্দা ছিলেন। অত্যাচারিত হয়ে তাঁরা সেখান থেকে এরাজ্যে চলে আসেন। বিষ্ণুপুরের মল্লরাজাদের কাছে তাঁরা আশ্রয় চান। চৌধুরী বাড়ির সদস্যরা ওইসময় মল্লরাজাদের তালুক দেখাশোনার কাজ শুরু করেন। চৌধুরী উপাধি মল্লরাজাদেরই দেওয়া। তাঁদের কাজে রাজপরিবারের সদস্যরা খুশি হন। ফলে উপাধি প্রদানের পাশাপাশি মল্লরাজারা চৌধুরীদের বেশ কয়েকটি মৌজা দান করেন। পরিবারের পূর্বপুরুষদের মধ্যে দামোদর নারায়ণ চৌধুরী রাজাদের কাছ থেকে পাওয়া মৌজায় বসতি স্থাপন করেন। তাঁর নাম অনুসারেই ওন্দার ওই গ্রামের নাম হয় দামোদরবাটি। পরে চৌধুরী বংশেরই একজন স্বপ্নাদেশ পেয়ে পুজো শুরু করেন। 

    পার্থপ্রতিমবাবু বলেন, আমাদের এক পূর্বপুরুষ স্বপ্নাদেশ পেয়ে লাগোয়া বিড়াই নদী থেকে একটি ভাসমান নিমকাঠ সংগ্রহ করেন। নদীর জল থেকে তুলে আনা ওই নিমকাঠ দিয়ে বিষ্ণুপুরের দেবী মৃন্ময়ীর আদলে দুর্গাপ্রতিমা তৈরি করা হয়। তারপর থেকে কুলদেবী হিসেবে বাড়ির ঠাকুরদালানে শুরু হয় পুজোপাঠ। বছরভর নিত্যপুজোর পাশাপাশি দুর্গোৎসবের সময় বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়। আমাদের পুজো পঞ্চমী থেকেই শুরু হয়ে যায়। ওইদিন মায়ের বোধন হয়। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীর দিন চালকুমড়ো ও আখ বলি হয়। দশমীতে চ্যাং মাছ ও লেবু বলি হয়। তারপর কলাবউ বিসর্জন হয়। সাবেক দিনের রীতি মেনে এখনও প্রতিপদ থেকে দশমী পর্যন্ত ঠাকুরবাড়িতে দু’বেলা নহবৎ বসে। পুজোর দিনগুলিতে পুরোহিত তালপাতার পুঁথি পড়ে দেবদেবীদের আরাধনা করেন। ওই পুঁথি পড়েই করা হয় চণ্ডীপাঠ।
  • Link to this news (বর্তমান)