• সঙ্গী সাবেকিয়ানা, ১০৭তম বর্ষে বাগবাজার সর্বজনীনের মাতৃবন্দনায় রঙ্গনাথস্বামী মন্দির
    বর্তমান | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • শুভদীপ রায়, কলকাতা; দক্ষিণের থিম বনাম উত্তরের সাবেকিয়ানা! কলকাতার দুর্গাপুজোয় এ লড়াই চিরন্তন। তবে ছক ভেঙে উত্তর কলকাতার অধিকাংশ পুজোই এখন থিমের দখলে। বেশিরভাগ মণ্ডপে ‘ভাবনা’ই মুখ্য। তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সেজে উঠছে প্রতিমা। উজ্জ্বল ব্যতিক্রম বাগবাজার সর্বজনীন। চলতি নিয়মটা এখানে উল্টো। অর্থাৎ এই পুজোর প্রধান আকর্ষণ মাতৃপ্রতিমা। এবার ১০৭ তম বর্ষে পা রাখল বাগবাজারের পুজো। প্রথা মেনে সাবেকি ধাঁচের মাতৃ প্রতিমা। সেই রাজকীয় সাজ, একচালার বিশাল মূর্তি। যেন প্রকৃতই অতসীপুষ্পবর্ণাভাং সুপ্রতিষ্ঠাং সুলোচনাম্‌, নবযৌবনসম্পন্নাং সর্ব্বাভরণ ভূষিতাম্! বাগবাজার সর্বজনীন দুর্গোৎসব ও প্রদর্শনীর সাধারণ সম্পাদক গৌতম নিয়োগী জানালেন, এই বছর মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে তামিলনাড়ুর রঙ্গনাথস্বামী মন্দিরের আদলে। অন্যবারের তুলনায় এবার মণ্ডপের ভিতরের উচ্চতা কিছুটা বেশি। ভিতরে থাকবে সুবিশাল ঝাড়বাতি। সরকারি নিয়ম মেনে মণ্ডপ তৈরিতে কোনও থার্মোকল ব্যবহৃত হচ্ছে না। এছাড়া প্রতিবারের মতো মেলা বসবে পুজোপ্রাঙ্গণে। 

    মেলায় ঘোরার সময় বাঁটুল কিংবা হাঁদা-ভোদার সঙ্গে দেখা হলে অবাক হবেন না। কারণ, বাগবাজারের কাছেই সদলবলে হাজির থাকছে নারায়ণ দেবনাথ সৃষ্ট এই অমর চরিত্ররা। এই বছর বিখ্যাত শিল্পী নারায়ণ দেবনাথের জন্মশতবর্ষ। তাই তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে মণ্ডপ গড়ছে কুমোরটুলি সর্বজনীন। থিমের নাম নারায়ণ-ই-নমোস্তুতে। সৃজন শিল্পী দেবজ্যোতি জানা। থিমের বিষয়ে জানালেন, মণ্ডপ জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকবে হাঁদা-ভোদা, বাঁটুল কিংবা বাচ্চু-বিচ্ছুরা। যেন ওরাই একটা দুর্গাপুজোর আয়োজন করছে। ঠাকুর আনতে কুমোরটুলিতে হাজির হয়েছে সবাই। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে সেখানেও গোলমাল পাকিয়েছে নন্টে-ফন্টে, হাঁদা-ভোদা কিংবা কেল্টু। ঠিক কেমন সেই গোলমাল তা দেখতে হলে কুমোরটুলি সর্বজনীনের মণ্ডপে ঢুঁ মারতেই হবে। ক্লাব সদস্যদের দাবি, এবারের মণ্ডপ ছোটদের তো ভালো লাগবেই, বড়রাও ফিরে পাবে হারিয়ে যাওয়া ছেলেবেলা। একটু অন্যরকম মাতৃমূর্তি দেখা যাবে মণ্ডপে। আদল অনেকটা বাড়ির প্রতিষ্ঠিত পিতলের বিগ্রহের মতো। প্রতিমা গড়ছেন দীপঙ্কর পাল। আলোর দায়িত্বে দীপঙ্কর দে। এছাড়া পুলক সরকার ও মৌজিশা চট্টোপাধ্যায়ের তৈরি আবহ সঙ্গীতে বিশেষ পরিবেশ তৈরি হবে মণ্ডপের অন্দরে। ক্লাবের অন্যতম সদস্য দেবাশিষ ভট্টাচার্য্য জানালেন, এই বছর অনেক বিখ্যাত বাঙালির শতবর্ষ। তবে নারায়ণ দেবনাথকে নিয়ে কেউ হয়তো কাজ করার কথা ভাববে না। তাই ৯৫তম বর্ষ বিখ্যাত এই শিল্পীকেই স্মরণ করছি আমরা। কথার ফাঁকে জানালেন, একসময় কুমোরটুলির মণ্ডপে এসেছিলেন নারায়ণ দেবনাথ। 

    কয়েক পা এগোলেই কুমোরটুলি পার্ক সর্বজনীন। এবছর থিম পত্রশোভা। শুকনো পাতা দিয়ে নানারকম নকশা থাকবে মণ্ডপজুড়ে। শুকনো পাতার উপর আঁকা হবে মণীষীদের মুখ। মণ্ডপের দায়িত্বে শিল্পী বাপাই সেন। মণ্ডপ সজ্জায় কোনও ফ্লেক্স ব্যবহার করা হচ্ছে না। সব কাজই ফেলে দেওয়া শুকনো পাতা দিয়ে তৈরি হচ্ছে। প্রতিটা কাজ নজর কাড়বে বলেই মনে করছেন ক্লাবের সদস্যরা। মণ্ডপের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রতিমা তৈরি করছেন শিল্পী মিন্টু পাল। 
  • Link to this news (বর্তমান)