• ৪ হাজার গ্রামীণ চিকিৎসককে ৫২ সপ্তাহের ‘ডাক্তারি’ পাঠ!
    বর্তমান | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • বিশ্বজিৎ দাস, কলকাতা: প্রায় চার হাজার গ্রামীণ চিকিৎসককে মূল স্রোতের অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসার সাহায্যকারী হিসেবে পোক্ত করে তুলতে অভিনব উদ্যোগ নিল পশ্চিম মেদিনীপুর। রবিবার রবিবার করে ৫২ সপ্তাহ ধরে তাঁদের ট্রেনিং দেবে পশ্চিম মেদিনীপুর স্বাস্থ্য প্রশাসন। তা শেষ হলে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হবে সার্টিফিকেট। স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে এই খবর জানা গিয়েছে। 

    প্রসঙ্গত, গত কয়েকবছর ধরেই গ্রামীণ চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দিতে নানা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেওয়ার চেষ্টা করছে স্বাস্থ্যভবন। তা নিয়ে বিতর্কও কম হচ্ছে না। আইএমএ বরাবরই সাড়ে পাঁচবছরের এমবিবিএস বাদে অন্য যেকোনও সময়সীমার পাঠ্যক্রমকে চিকিৎসকদের ট্রেনিং প্রোগ্রাম বলে মানতেই নারাজ।   

    স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রের খবর, তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে তাঁদের ট্রেনিং। প্রথমত, ইমার্জেন্সি কেয়ার। দ্বিতীয় ধাপে মা ও শিশুর স্বাস্থ্য। শেষ ধাপ হল জনস্বাস্থ্য বা পাবলিক হেলথ। জেলার মেডিসিন, গাইনি, অর্থোপেডিকস, সার্জারি প্রভৃতি শাখার এমডি বা এমএস পাশ করা বিশেষজ্ঞরা এই ট্রেনিং দেবেন। থাকবেন মেডিকেল কলেজের এক প্রাক্তন শিক্ষক চিকিৎসকও। 

    প্রতি রবিবার বিকেল নাগাদ একঘণ্টা ধরে চলবে এই ট্রেনিং। তা হবে ভার্চুয়াল মোডে জুম ক্লাসের মাধ্যমে। প্রথম পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে দাসপুর দুই ব্লকের গ্রামীণ চিকিৎসকদের ট্রেনিং দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। ধাপে ধাপে জেলার ২১ ব্লকের গ্রামীণ চিকিৎসকদের নিয়ে পালিত হবে কার্যক্রম।

    জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক ডাঃ সৌম্যশংকর সারেঙ্গি বলেন, অস্বীকার করার উপায় নেই, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের বহু মানুষ গ্রামীণ চিকিৎসকের কাছে যান। কেউ সুস্থ হন, কেউ সুস্থ হন না। অনেকে আবার বড় বিপদে পড়েন। এমনকি মারাও যান। এমন ট্রেনিংয়ের উদ্দেশ্য হল গ্রামীণ চিকিৎসকদের ভুল কমিয়ে আনা  এবং তাঁদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা  এবং রেফার সিস্টেমের সহায়ক করে তোলা। ডাক্তার করে তোলা নয়।  

    প্রথম ধাপে ইমার্জেন্সি ও ফাস্ট এইড প্রশিক্ষণে কীভাবে ব্যান্ডেজ বাঁধতে হয় থেকে শুরু করে জলে ডোবা বা অন্যান্য মেডিকেল ইমার্জেন্সিতে চটজলদি কী করণীয় তা শেখানো হবে। হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের লক্ষণ কী কী? কোন লক্ষণগুলি দেখে টেনেকটেপ্লেজ ইঞ্জেকশন দিয়ে রোগীকে বড়ো বিপদের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব, সবই বলা হবে ভার্চুয়াল ট্রেনিংয়ে। পরের ধাপ হল মা এবং শিশুর স্বাস্থ্য। সন্তান হওয়ার আগে ও পরের চেকআপ, বাচ্চাদের গুরুতর কিছু অসুখ-বিসুখ চেনা, গর্ভধারণকালে  কোন কোন লক্ষণগুলি উদ্বেগে, সন্তানের কোন কোন বিপদ যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত, কখন উচ্চতর হাসপাতালে রেফার করতে হবে, মা ও শিশুর জন্য সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবায় কী কী সুবিধা পাওয়া যায় প্রভৃতিও বলা হবে।

    তৃতীয় পর্যায়ে হলো জনস্বাস্থ্য। জেলার ৮-৯টি সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে। যেমন ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, র‍্যাবিস বা জলাতঙ্ক, যক্ষ্মা ইত্যাদি রোগের বিপদ লক্ষণগুলি কী,  কী কী সরকারি সুবিধা আছে?  জাতীয় কর্মসূচিতে কী কী বলা হয়েছে এইসব থাকবে সিলেবাসে।  যক্ষ্মাসহ বিভিন্ন রোগে রোগীকে চিহ্নিত করা, নিয়মিত ওষুধ খেতে উৎসাহিত করা, মবিলাইজার হিসেবে কাজ করলে রোগীপিছু কেন্দ্রীয় সরকারি আর্থিক অনুদান গ্রামীণ চিকিৎসকরাও যাতে পান, সেদিকেও লক্ষ্য রাখছে জেলা প্রশাসন।
  • Link to this news (বর্তমান)