কোন্নগরের দত্তবাড়ির বন্ধ হওয়া পুজো ফের ফিরেছে নতুন প্রজন্মের হাত ধরে
বর্তমান | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো হলেও, বাংলার প্রথম বারোয়ারি পুজো শুরু হয়েছিল হুগলি জেলার বিন্ধ্যবাসিনী জগদ্ধাত্রী পুজোর হাত ধরে। হুগলির ডিস্ট্রিক্ট গেজেটের হিসেব অনুযায়ী, ১১৬৬ বঙ্গাব্দে শুরু হয় এই পুজো। গুপ্তিপাড়ায় ১২ জন ইয়ারি বা বন্ধু একযোগে শুরু করেছিলেন পুজো। সেই হিসেবে পাড়া-কালচারে বেড়ে ওঠা বারোয়ারি পুজোর বয়স তিনশো বছর পেরিয়েছে। কিন্তু আজ যে বারোয়ারি পুজোর রমরমা, তার সিকিভাগও ছিল না এক শতাব্দী আগেও, বলছেন ইতিহাসবিদরা। সেই সময় জমিদার বা সমাজের গণ্যমান্যদের বাড়িতেই অধিষ্ঠান করতেন দেবী দুর্গা। সেই পারিবারিক পুজোকে ঘিরেই উৎসবে মিলতেন এলাকাবাসী। ঘরোয়া পার্বণই পেত সামাজিকতার ছোঁয়া। হুগলির কোন্নগরে যে পারিবারিক পুজোগুলির মেয়াদ শতাব্দীর সীমারেখা ছুঁতে চলেছে, তার অন্যতম দত্তবাড়ির দুর্গাপুজো। শহরের পূর্ব দিকে বিশালাক্ষ্মী সড়ক এলাকার এই পুজোয় আন্তরিকতা এখনও অটুট।
পরিবারের সদস্য মধুসূদন দত্তের কথায়, দত্তবাড়িতে যখন পুজো শুরু হয়, তাকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসীর মধ্যে আবেগ ও উৎসাহ দেখা যেত। কিন্তু কিছু বছর পর সেই পুজোয় ছেদ পড়ে। এক দুর্ঘটনার কারণে পুজো বন্ধ করে দেয় পরিবার। বহু বছর পুজোর দিনগুলিতে ফাঁকা থেকেছে এই বাড়ির ঠাকুরদালান। ১৫ বছর আগে নতুন উদ্যমে কোমর বাঁধেন পরিবারের সদস্যরা। ফিরিয়ে আনা হয় পুজোর পরম্পরা। তারপর থেকে প্রতি বছর পুজোর দিনগুলিতে দত্তবাড়ির ঠাকুরদালান ভরে ওঠে উপাচারে। মধুসূদনবাবু জানিয়েছেন, নিয়ম মেনে প্রতি বছর রথের দিন কাঠামো পুজো হয়। ঠাকুরদালানেই দেবীর রূপ পান মা দুর্গা।
স্থানীয় কাউন্সিলার তথা দত্তবাড়ির অন্যতম সদস্য অঞ্জলি বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, পরিবারের সদস্যরাই পুজোর আয়োজন করেন। উপাচারে হাত লাগান প্রত্যেকে। আর তাকে ঘিরেই আনন্দের হাট বসে ঠাকুরদালানে। আমরা দেখে আসছি, ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত এই ক’দিন বাড়ির সদস্যরা সবাই একসঙ্গে উপভোগ করেন প্রতিটি মুহূর্ত। একযোগে খাওয়া দাওয়া থেকে শুরু করে নানা অনুষ্ঠানের ঘরোয়া আয়োজন করা হয় পুজোকে ঘিরে। দত্তদের পুরনো বিশাল বাড়ির মাঝের চওড়া ঠাকুরদালান যেন নতুন প্রাণ পায় শারোদৎসবে। পরিবারের সদস্যদের কথায়, এই বাড়ির আশপাশেই একাধিক বারোয়ারি পুজোমণ্ডপ আছে, যেগুলির জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। সেখানে দেবীদর্শনের মাঝেই বহু মানুষ আসেন দত্তবাড়ির পুজো দেখতে। পরিবারের সদস্যদের কাছে এ এক পরম পাওয়া।