নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কখনও বৃষ্টি, কখনও রোদ। তবে সব উপেক্ষা করে পঞ্চমীতে দুপুর থেকে রাত শুধুই জনপ্লাবন।
চতুর্থীতেই জনগণ জানিয়ে দিয়েছিল, বৃষ্টি হলে হোক ঠাকুর দেখা চলবেই। তা শনিবার সেই ছবিই অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেল। কলকাতায় খাপছাড়াভাবে বৃষ্টি হল। সঙ্গে চাঁদি ফাটিয়ে দেওয়া রোদ। মারাত্মক গরম। কোথাও আকাশে রোদ, তার মধ্যে বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছে গায়ে। শরতের পারফেক্ট উদাহরণ। তা সত্ত্বেও উত্তর, দক্ষিণ, মধ্য, পূর্ব কলকাতার সব জায়গায় পঞ্চমীর সকাল থেকেই উপচে পড়া ভিড়। একদিকে দক্ষিণের ত্রিধারা, বালিগঞ্জ কালচারাল কিংবা দেশপ্রিয় পার্ক যখন উপচে পড়ছে, তখন অন্যদিকে উত্তরের হাতিবাগান, কলেজ স্কোয়ার, আহিরীটোলা, কাশী বোস লেন, টালা প্রত্যয়ে তিল ধারণের জায়গা নেই। লেকটাউনের শ্রীভূমি স্পোর্টিংয়ের খবর শুনে অনেকেই সিদ্ধান্ত নিলেন, ‘একটা দিন রাখতে হবে শুধু শ্রীভূমির জন্যই।’
এ যদি হয় সকালের কথা তাহলে বিকেলের ছবিটা কিরকম? বিকেলের দিকে কলেজ স্কোয়ার, আহিরীটোলা, কুমোরটুলি দেখে এবার দক্ষিণে যাওয়ার পরিকল্পনা মধ্যমগ্রামের দে পরিবারের। মৌলালির সামনে থেকে গড়িয়াহাটের বাস ধরবেন বলে দাঁড়িয়ে, হঠাৎ নামল বৃষ্টি। লাফিয়ে উঠে পড়লেন বাসে। পার্ক সার্কাস পেরনোর সময় বৃষ্টি থামল। সুকোমল দে বললেন, ‘আজই গড়িয়াহাট, কসবাটা ঘুরে নেব। এরপর একদিন থাকবে বেহালার জন্য। অন্যদিন শ্রীভূমি। আর একদিন কল্যাণী’। বাস থেকে নেমেই দেখলেন গড়িয়াহাট ব্রিজের মুখে বসে আছে পুলিশ। সেই পুলিশকর্মী দেখিয়ে দিলেন, ওই দিকে গেলে একডালিয়া মিলবে। গড়িয়াহাট থেকে রাসবিহারীর দিকে বাস আর চলছে না তখন। রোদ কমলেও গরম কমেনি। তার মধ্যেই ঘাম মুছে ত্রিধারাতে প্রবেশ করছে কাতারে কাতারে মানুষ। তারপর রাত যত বেড়েছে বাদামতলা থেকে দেশপ্রিয় পার্ক শুধুই মানুষের মাথা। পিছিয়ে নেই বেহালা, পাটুলি, কসবাও। অনেক জায়গায় এদিনই বোধন হয়ে গিয়েছে বলে জানাও গেল।
বৃষ্টির দাপট এদিন অনেকটাই কম। তবে রোদের তেজ ভুগিয়েছে। দুপুরে অনেকেই ফুচকা-চাউমিন-রোল-বিরিয়ানিতে পেট ভরালেন। দুপুরেই রেস্তরাঁর বাইরে লম্বা লাইন। মণ্ডপের প্রবেশপথে খাবারের স্টলগুলি থেকে বিরিয়ানি, ফিস ফ্রাইয়ের গন্ধ ভেসে আসছে। সেখানে ভিড় কম নয়। সোনারপুরের বাসিন্দা অরুণিমা পাত্র খেতে খেতে বললেন, ‘রাস্তায় খাওয়ার মজাই আলাদা।’ জেলার বহু মানুষ দুপুরেই শহরে। তাঁদের হাতের মোবাইলে ম্যাপ খোলা। তা দেখে মণ্ডপের ঠিকানা খুঁজে চলল হাঁটা।
পঞ্চমীর সারাদিনের ছবি দেখে কে বলবে মাত্র কয়েক দিন আগে কলকাতা ভেসে গিয়েছিল জলে। এখনও শহরের অনেক রাস্তা সেই বিপর্যয়ের চিহ্ন নিয়ে দাঁড়িয়ে। তবে উত্সবের পিঠে চেপে বসেছে মানুষ। খুঁটে খুঁটে খাচ্ছে আনন্দ। আলোয় ভাসছে বাঙালির প্রাণখোলা হাসি। আর প্যান্ডেল থেকে দুর্গা দেখছেন ভক্তদের জনপ্লাবন।