• 'আই লাভ মহম্মদ' বিতর্কে উত্তেজনা, গ্রেপ্তার মুসলিম ধর্মগুরু, কড়া বার্তা যোগীর
    আজকাল | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: উত্তর প্রদেশের বরেলিতে একজন মুসলিম ধর্মগুরুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তৌকির রাজা খান নামে ওই ধর্মগুরু ইত্তেহাদ-ই-মিল্লত কাউন্সিলের প্রধান। শুক্রবার তাঁরই আহ্বানে জুম্মার নমাজের পর সাধারণ মানুষ পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিল বলে অভিযোগ। এদিকে, সামনেই দশেরা। তার আগে বরেলির পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রশাসন। পুলিশ শনিবার সকাল থেকে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করেছে। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের অফিস সূত্রে বলা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী পরিস্থিতি কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দিয়েছেন। ঘোষণা করেছেন, অপরাধ করে কেউ ছাড় পাবে না। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দশেরা আসছে। দুষ্টের দমনই দশেরার আসল বার্তা।

    শুক্রবার উত্তর প্রদেশের বরেলিতে 'আই লাভ মহম্মদ' প্রচারের সমর্থনে একটি প্রস্তাবিত বিক্ষোভ হঠাৎ করে স্থগিত করার পর হিংসা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর ফলে শহরের একটি মসজিদের বাইরে এবং শহরের বেশ কয়েকটি জায়গায় অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে।

    পুলিশ এখনও পর্যন্ত ১১টি এফআইআর দায়ের করেছে, যার মধ্যে ২,০০০ জনেরও বেশি লোকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। দু'টি মামলায় সরাসরি ধর্মগুরু এবং ইত্তেহাদ-ই-মিল্লাত কাউন্সিলের (আইএমসি) প্রধান মাওলানা তৌকির রাজা খানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। শুক্রবারের হিংসার ঘটনায় প্রায় ৪০ জনকে আটক করা হয়েছে।

    জুমার নামাজের পর তৌকির রাজার বাসভবন এবং কোতোয়ালি মসজিদের কাছে "আই লাভ মহম্মদ" পোস্টার নিয়ে বিশাল জনতা জড়ো হয়েছিল। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করলে, বিক্ষোভকারীরা পাথর ছুঁড়ে মারে বলে অভিযোগ। যার ফলে পুলিশকে হালকা বলপ্রয়োগ করতে বাধ্য হয়।

    দরগাহ-এ-আলা হযরত এবং ইসলামিয়া গ্রাউন্ডের কাছে বিক্ষোভকারীরা ইসলামিয়া ইন্টার কলেজ গ্রাউন্ডের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করলে হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। পাথর ছোঁড়া ও ভাঙচুরের ফলে যানবাহন ও দোকানপাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়, অন্যদিকে ছবিতে ভাঙা কাঁচ, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জুতা এবং পাথর রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায়। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় আলমগিরিগঞ্জ, সিভিল লাইনস, বড়া বাজার এবং বাঁশমন্ডির দোকানগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

    উল্লেখ্য, ২০১০ সালের বরেলি দাঙ্গার সময় তৌকির রাজাকে জেলে পাঠানো হয় এবং শহরকে ২৩ দিনের কারফিউ জারি ছিল। এবার, প্রাথমিকভাবে তাঁকে গৃহবন্দি করার পর, পুলিশ গভীর রাতে ফয়েজ এনক্লেভ থেকে তৌকির রেজাকে হেফাজতে নেয় এবং তাঁকে একটি অজ্ঞাত স্থানে স্থানান্তরিত করে।

    ধৃতের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। পুলিশ কর্তৃপক্ষ হিংসা বিক্ষোভে জড়িত থাকার বিষয়টি তদন্ত করার জন্য তাঁকে এবং তাঁর সহযোগিদের মোবাইল ফোনও পরীক্ষা করছে।

    সরকার বলছে অস্থিরতা তৈরির ষড়যন্ত্রজেলা ম্যাজিস্ট্রেট অবিনাশ সিং বলেছেন, "বিক্ষোভের জন্য পূর্ব লিখিত অনুমতির প্রয়োজন, বিএনএসএসের ১৬৩ ধারা বরেলি জুড়ে বলবৎ ছিল। এ সত্ত্বেও, কিছু লোক শুক্রবারের নামাজের পর শান্তি বিঘ্নিত করার চেষ্টা করেছিল। পুলিশ কঠোরভাবে ব্যবস্থা নিয়েছে এবং পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে।" ডিআইজি অজয় ​​কুমার সাহনি ঘটনাটিকে "পূর্বপরিকল্পিত" বলে অভিহিত করেছেন এবং "দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি" দেওয়ার বিষয়ে সতর্ক করেছেন।

    উত্তরপ্রদেশ সরকারের এক বিবৃতিতে হিংসাকে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে অস্থিরতা তৈরি এবং নয়ডা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রদর্শনী-সহ রাজ্যের বিনিয়োগের প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করার জন্য একটি "সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র" হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।

    যোগী আদিত্যনাথের সতর্কীকরণমুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ সকলকে সতর্ক করে বলেছেন, "গতকাল বরেলিতে, একজন মৌলানা ভুলে গিয়েছেন যে রাজ্যে ক্ষমতায় কে আছেন। তিনি ভেবেছিলেন তিনি ইচ্ছামত যা ইচ্ছে তাই বন্ধ করতে পারবেন, কিন্তু আমরা স্পষ্ট করে দিয়েছি যে অবরোধ বা কারফিউ হবে না। আমরা যে শিক্ষা দিয়েছি তা নিশ্চিত করবে যে ভবিষ্যত প্রজন্ম দাঙ্গায় লিপ্ত হওয়ার আগে দু'বার ভাববে।"

    পূর্ববর্তী সরকারগুলিকে কটাক্ষ করে যোগী বলেন, "২০১৭ সালের আগেও এই ধরনের বিশৃঙ্খলার ঘটনা নেহাতই সাধারণ বলে বিবেচিত হত, কিন্তু তারপর থেকে উত্তরপ্রদেশ কারফিউ জারি না করেই আইনশৃঙ্খলা বজায় রয়েছে। রাজ্যের উন্নয়নের গল্প এখান থেকেই শুরু হয়।"

    বড় বিতর্ক‘আই লাভ মহম্মদ’ বিতর্ক ৯ সেপ্টেম্বর কানপুরে শুরু হয়, যেখানে পুলিশ বারাওয়াফত মিছিলের সময় স্লোগান সম্বলিত ব্যানার প্রদর্শনের জন্য ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করে। হিন্দু গোষ্ঠীগুলি আপত্তি জানায়, এটিকে "ইচ্ছাকৃত উস্কানি" বলে অভিহিত করে। বিতর্কটি তখন থেকে উত্তরপ্রদেশের অন্যান্য জেলায়, পাশাপাশি উত্তরাখণ্ড, মহারাষ্ট্র এবং কর্ণাটকে ছড়িয়ে পড়েছে।

    বিষয়টি দেশব্যাপী তীব্র রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। অএআইএমআইএম প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসি প্রচারের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেছেন, "ভালবাসা কী দেশবিরোধী? আমরা কি ভালবাসার মাধ্যমে হিংসা প্রচার করি? নেতাদের জন্মদিনের পোস্টার অনুমোদিত, কিন্তু মহম্মগকে ভালবাসার পোস্চার নয় কেন?"

    আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদবও বলেছেন, "হিংসায় উস্কে দেওয়ার ক্ষেত্রে বিজেপি এক নম্বরে। যখনই উত্তরপ্রদেশ থেকে কোনও খবর আসে, তখনই এটি এই ধরণের হয়।"

    সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব বরেলি পুলিশের লাঠিচার্জের নিন্দা করে বলেছেন, “একটি সরকারের শক্তি প্রদর্শন তার দুর্বলতার লক্ষণ। সরকার লাঠিচার্জ নয়, সম্প্রীতি ও সদিচ্ছার মাধ্যমে কাজ করে।”

    সূত্রের খবর, বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব তাঁদের নেতাদের সংযম বজায় রাখার এবং এই বিষয়ে কোনও অপ্রয়োজনীয় বক্তব্য এড়িয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মন্ত্রী এবং দলীয় নেতাদের অনুমতি ছাড়া মন্তব্য না করার জন্য বলা হয়েছে।
  • Link to this news (আজকাল)