ভিড় উপচে পড়ছে প্যান্ডেলে, স্রেফ অসুর তৈরি করেই 'হিট' রাজ্যের এই দুর্গাপুজো ...
আজকাল | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: শারদ উৎসবের ঢাকে কাঠি পড়ে গিয়েছে। রবিবার সকালে দেবীর বোধন। তার আগে থেকেই রাজ্য জুড়ে একাধিক পুজো মণ্ডপের উদ্বোধন হয়ে গিয়েছে। দলে দলে মানুষ সেখানে ভিড় জমাচ্ছেন প্রতিমা দেখার জন্য। থিম থেকে শুরু করে সাবেকি ভাবনা, নানা চমক নিয়ে বিভিন্ন দুর্গাপুজো কমিটিগুলোর মধ্যে একে অন্যকে টেক্কা দেওয়ার প্রতিযোগিতা চলছে।
তবে ৫৯ তম বর্ষে মুর্শিদাবাদের বহরমপুর শহরে খাগড়া শ্মশানঘাট দুর্গাপুজো কমিটির প্রতিমা এমন চমক দিয়েছে যা জেলা বা রাজ্যের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবছর এই ক্লাবের দুর্গা প্রতিমা দেখতে এসে সকলের চোখ দুর্গা প্রতিমার পরিবর্তে প্রথমেই গিয়ে পড়ছে দেবীর পায়ের কাছে থাকা দুই অসুরের দিকে। শুনতে অবাক লাগলেও বহরমপুরের এই দুর্গাপুজোর মূল আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এক অসুর। আর সেই অসুরকে দেখতে পঞ্চমীর সকাল থেকে দলে দলে মানুষ ভিড় করছেন খাগড়া এলাকার এই প্রতিমা দেখার জন্য।
মুর্শিদাবাদ জেলার অন্যতম বিখ্যাত প্রতিমা শিল্পী অসীম পালের হাতে এই পুজো কমিটির প্রতিমার মৃন্ময়ী মূর্তি তৈরি হয়েছে। বহরমপুর পুরসভার চেয়ারম্যান নাড়ুগোপাল মুখার্জির হাত ধরে এই পুজোর উদ্বোধন হওয়ার পর থেকেই খাগড়া শ্মশানঘাট দুর্গাপুজো কমিটির 'বিশেষ' অসুরের কথা ঝড়ের গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে সমাজমাধ্যমে। সমাজমাধ্যমের মাধ্যমে সেই অসুরকে দেখেই প্রচুর লোক একবার চক্ষু-কর্ণের বিবাদভঞ্জন করার জন্যই মণ্ডপে আসছেন এই পুজোর অসুরকে চাক্ষুষ করতে। ৫৯ তম বর্ষে খাগড়া শ্মশানঘাট দুর্গাপূজা কমিটি যে প্রতিমা নির্মাণ করেছেন তা সাবেকি ধাঁচের। দেবী উমার সঙ্গে উপরের ধাপে রয়েছেন তাঁর দুই কন্যা, লক্ষী এবং সরস্বতী। নিচের ধাপে রয়েছেন কার্তিক এবং গণেশ।
দেবী দুর্গার পায়ের কাছে দু'জন অসুরকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। তার মধ্যে একজন দেবীর পায়ের কাছে পড়ে রয়েছেন। অন্যজন সিংহের পিঠে চেপে দেব সেনাপতি কার্তিকের সঙ্গে যুদ্ধরত অবস্থায় রয়েছেন। আর এই অসুরের মুখের সঙ্গে অনেকেই মিল খুঁজে পাচ্ছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। আর 'ট্রাম্পরূপী' এই অসুরকে একবার সচক্ষে দেখার জন্য এবং নিজেদের মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় বন্দি করার জন্য ভিড় জমছে এই পুজো প্যান্ডেলে।
ভারতীয় পুরাণ মতে অসুরেরা সবসময় দেবতাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে। মহিষাসুরের আগে দেবী দুর্গার হাতে মধু ও কৈটভ নামে দুই অসুর বধ হয়েছিলেন। ভগবত পুরাণ অনুসারে বিষ্ণুর দুই কানের ময়লা থেকে এই দুই অসুরের জন্ম। অত্যন্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও অত্যাচারী মধু ও কৈটভ, ব্রহ্মার থেকে বেদ হরণ করেছিলেন বলে বলা হয়। পুরাণ মতে, এদের সঙ্গে কয়েক হাজার বছর ধরে যুদ্ধ করেও স্বয়ং বিষ্ণু তাঁদের পরাজিত করতে পারেননি। তখন আদ্যাশক্তি মহামায়া রূপে দুর্গা অবতীর্ণ হন। এখানে দেবী নিজে অস্ত্র ধারণ করে মধু ও কৈটভকে হত্যা করেননি। তিনি দুই অসুরের সামনে মায়াজাল বিস্তার করে তাঁদের হত্যার পথ সহজ করেন। হিন্দু শাস্ত্রের এই ইতিহাসই এবছর খাগড়া শ্মশানঘাট দুর্গাপুজো কমিটির মূল থিম।
প্রতীক রায় নামে এই দুর্গাপূজা কমিটির অন্যতম এক সদস্য বলেন, '৫৯ তম বর্ষে এবছর আমরা অসুর হিসেবে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বেছে নিয়েছি। ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একসময় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দেশের বন্ধু ভাবতেন। এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি বন্ধু হিসাবে এসে ডোনাল্ড ট্রাম্প আমাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। তাই ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এবছর আমাদের পুজো কমিটি অসুর হিসেবে দেখছে এবং তাঁকে দেবী মূর্তির পায়ের সামনে রাখা হয়েছে।'
পুজো কমিটির অন্য সদস্যরা বলেন, 'ডোনাল্ড ট্রাম্প যেভাবে ভারতের বন্ধু হিসেবে নিজেকে দেখিয়ে শেষপর্যন্ত পিছন থেকে ছুরি মেরেছেন তা কারও কাছেই পছন্দ হয়নি। ভারতের উপর তিনি যে অতিরিক্ত শুল্ক চাপিয়েছেন সেই কারণে আমরা তাঁকে অসুর হিসেবেই দেখছি।'
খাগড়া শ্মশানঘাট দুর্গাপুজো কমিটির মণ্ডপে দাঁড়িয়ে বহরমপুরের একটি কলেজের অর্থনীতির ছাত্রী বিদিশা মৈত্র বলেন, 'আমরাও আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অসুর হিসেবেই দেখছি। তিনি অনৈতিকভাবে ভারতের উপর ৫০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক চাপিয়েছেন। তার ফলে দেশে ডলার এবং সোনার দাম হু হু করে বেড়ে চলেছে। আগামীদিন হয়তো এর খারাপ প্রভাব ভারতীয় অর্থনীতিতে পড়তে পারে।' আদিত্য দাস নামে অপর এক দর্শনার্থী বলেন, 'কার্তিকের সঙ্গে যুদ্ধরত অসুরের মুখের সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের যথেষ্টই মিল আমরা দেখতে পাচ্ছি। একটি সমাজমাধ্যমে অসুরের এই মুখটি ভাইরাল হওয়ার পর আমরা সমস্ত বন্ধু-বান্ধব এই পুজো প্যান্ডেলে ঠাকুর দেখতে এসেছি।'