• বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মায়ানমার ও নেপালের কিশোরদের হাতে তৈরি দুর্গার পুজো জলপাইগুড়ির হোমে
    বর্তমান | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: এ এক অন্যপুজো। এই পুজোর মণ্ডপে কোনও পেশাদার শিল্পীর হাতের ছোঁয়া নেই। কুমোরটুলি থেকে প্রতিমা এলেও ফোকাস অন্য এক মা দুর্গায়। নিজেদের মতো করে প্যান্ডেল তৈরির পাশাপাশি সেই মূর্তি গড়েছে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মায়ানমার ও নেপালের এক দল কিশোর! পিচবোর্ডের উপর কাঠের গুঁড়ো দিয়ে তাদের হাতে তৈরি ওই প্রতিমার পুজো ঘিরে উৎসব মুখর জলপাইগুড়ির কোরক হোম।  হোমের চার দেওয়ালের ভিতরে গত দু’মাস ধরে তিলে তিলে প্রতিমা গড়েছে সাহিল, মোমিন, প্রিন্স, রাজা (নাম পরিবর্তিত)। সবমিলিয়ে তাদের টিমে ছিল জনা কুড়ি বালক ও কিশোর। বাকিরা সামলেছে মণ্ডপ তৈরি সহ পুজোর অন্যান্য দায়িত্ব। এদের কারও পরিবার বলতে কিছুই নেই। পরিত্যক্ত জায়গা থেকে ঠাঁই হয়েছে হোমে। কেউ আবার পরিস্থিতির কারণে পরিবার-বিচ্ছিন্ন। সময়ের সঙ্গে ক্রমেই ঝাপসা হয়ে আসছে নিজের মায়ের মুখ। ফলে মা দুর্গার মূর্তি গড়ার মধ্যে দিয়েই নিজেদের জন্মদাত্রীকে খোঁজার চেষ্টা করেছে রাম-রহিমরা। আর ভিনদেশি ওইসব বালকদের হাতেই প্রাণ পেয়েছে হোমের উমা। শুধু সকাল-সন্ধ্যা রুটিন মেনে চলা নয়, হোমের জীবনকে একটু হলেও রঙিন করে তোলার চেষ্টায় খামতি রাখেনি কর্তৃপক্ষ। প্রশাসনের উদ্যোগে জলপাইগুড়ির ওই সরকারি হোমের আবাসিকদের হাতের কাজ শেখানো থেকে ছবি আঁকা, সবটাই ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর তারই ফলে ধীরে ধীরে ওরা এক-একজন হয়ে উঠেছে কার্যত শিল্পী!হোমের সুপার গৌতম দাস বলেন, এমন সব ছেলেরা মূর্তি গড়েছে, তারা হয়তো এর আগে কখনও দুর্গাপুজো দেখেনি। অথচ তারাই নিজেদের মনের ভাবনা থেকে চমৎকার দেবীমূর্তি তৈরি করেছে। ওদের শিল্পীসত্তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তিনি বলেন, জলপাইগুড়ির কোরক হোমে ন’বছর ধরে দুর্গাপুজো হলেও গতবারই এখানকার আবাসিকরা প্রথম মূর্তি গড়ে। বাইরে থেকে যাঁরা হোমে পুজো দেখতে এসেছিলেন, তাঁরা ছেলেদের হাতে তৈরি ওই মূর্তির প্রংশসা করেন। এতে ওরা উৎসাহিত হয়ে এবার পুজোর দু’মাস আগে থেকে প্রতিমা তৈরির কাজে লেগে পড়ে। শুধু হোমের আবাসিকদের হাতে তৈরি দুর্গার পুজো নয়, এখানকার বালক-কিশোররাও যাতে উৎসবের আনন্দে মেতে উঠতে পারে, তারও ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ। পুজোয় প্রত্যেকের নতুন জাম-প্যান্ট, জুতো। গাড়িতে করে জলপাইগুড়ি শহরের পুজো ঘুরিয়ে দেখানো। পুজোর ক’দিন মেনুতে ভালোমন্দ খাবার। তবে হোমে যেহেতু পুজো হয়েছে, খাবার সবটাই নিরামিষ। খাওয়ানো হয়েছে পোলাও, ফ্রায়েড রাইস, পনির, চাটনি ও মিষ্টি। যদিও পুজোয় অনেক খুশির মাঝেও কী যেন নেই ওদের। কাছে মা নেই যে! দূরেও বা আছে কি না জানে না অনেকে। তাই দেবীর সামনে অঞ্জলি দিয়ে একটাই প্রার্থনা ওদের, আসছে বছর প্যান্ডেলে উমা আসার আগে যেন হোমে মা আসে। পুজোটা যেন কাটে বাড়িতে!
  • Link to this news (বর্তমান)