• স্বাধীন রাজ্য লাদাখ কী ভাবে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠল? কেন এই জায়গা কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ?
    এই সময় | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • লাদাখিরা শান্ত স্বভাবের বলেই পরিচিত। কিন্তু রাজ্যের মর্যাদা এবং সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে এখন বিক্ষোভের আগুনে জ্বলছে লাদাখ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে লাদাখের এই প্রতিবাদের অন্যতম মুখ সোনম ওয়াংচুক। এই ক্ষোভের সূত্রপাত হয়েছিল ২০১৯-এর অগস্টে।

    সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন আইন, ২০১৯ পাশ করেছিল কেন্দ্র। এর ফলে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত হয়েছিল: জম্মু ও কাশ্মীর, পরবর্তী সময়ে যে অংশটি একটি বিধানসভা পেয়েছে এবং লাদাখ, যাদের বিধানসভা নেই।

    ১৮৩৪ সালে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের সঙ্গে একীভূত হয়েছিল লাদাখ। তার আগে পর্যন্ত এটি একটি স্বাধীন রাজ্য ছিল। তিব্বতের সঙ্গে ছিল গভীর সংযোগ। সেখান থেকে কী ভাবে লাদাখ স্বাধীন ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠল? কেনই বা লাদাখকে কৌশলগত ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে নয়াদিল্লি?

    ১৮১৯ সালে শিখ রাজারা কাশ্মীর দখল করেছিলেন। এর পরেই সম্রাট রঞ্জিত সিং-এর নজর পড়েছিল লাদাখের উপরে। তার আগে পর্যন্ত, ভুটান এবং সিকিমের মতোই লাদাখও হিমালয়ের কোলের এক স্বাধীন রাজ্য ছিল।

    ১৮৩৪ সালে শিখ শাসিত জম্মু ও কাশ্মীরের ডোগরার সামন্ত, গুলাব সিং লাদাখ জয় করে একে শিখ সাম্রাজ্যের অংশ করেছিলেন।

    ১৮৪৫-৪৬ সালের প্রথম অ্যাংলো-শিখ যুদ্ধের পরে শিখ সাম্রাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে লাদাখ-সহ জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য ব্রিটিশ শাসনের অধীনে এসেছিল।

    জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যকে ব্রিটিশরা একটি ‘বাফার জ়োন’ হিসেবে তৈরি করেছিল। এখানে তারা রুশদের সঙ্গে দেখা করতে পারত।

    স্বাধীনতার পরে জম্মু ও কাশ্মীরের অংশ হিসেবেই লাদাখও স্বাধীন ভারতের অংশ হয়েছিল।

    লাদাখ একই সঙ্গে কৌশল অর্থনৈতিক দিক থেকে এবং প্রতিরক্ষার দিক থেকে ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরূত্বপূর্ণ:

    ঐতিহাসিক সময় থেকেই লাদাখ মধ্য এশিয়া এবং কাশ্মীরের মধ্যে একটি বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছিল। যেমন লাদাখের মধ্য দিয়েই কাশ্মীরে আসত তিব্বতী পশম। একই সময়ে, কারাকোরাম গিরিপথ পেরিয়ে চিনের ইয়ারকন্দ এবং কাশগর থেকে বিভিন্ন পণ্য যেত তুরস্কে। ঐতিহাসিক জন ব্রের মতে, এটি একটি অত্যন্ত সম্বৃদ্ধ বাণিজ্যপথ ছিল।

    ১৯৫০ সালে তিব্বত দখল করেছিল চিন। এর পরে ১৯৫৯ সালে তিব্বতি বিদ্রোহ এবং দলাই লামার ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়া। তখন থেকেই এই অঞ্চলের উপরে আগ্রহ রয়েছে চিনের।

    ২০১৩ সাল পর্যন্ত, লাদাখে ভারতের সামরিক পরিকাঠামো ছিল না বললেই চলে। তার পর থেকে এই অঞ্চলে ভারত বেশ কিছু পরিকাঠামোগত উন্নয়নের প্রকল্প গ্রহণ করেছে।

    ২০১৫ সাল থেকে, লাদাখ ভারতের জন্য কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে পরিণত হয়েছে।

    এর পরে ২০২০ সালের জুন মাসে পূর্ব লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় রক্তাক্ত হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েছিল ভারত-চিন। এর ফলে ২০ জন ভারতীয় সেনা এবং অনির্দিষ্ট সংখ্যক চিনা সেনা নিহত হয়েছিল।

  • Link to this news (এই সময়)