৩০ হাজার ভক্তের ঠাসাঠাসি ভিড়, ৭ ঘণ্টা দেরিতে জনসভায় বিজয়! তামিলনাড়ুতে মৃত্যুমিছিল আরও বাড়ল
আজকাল | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: পদপিষ্ট হয়ে তামিলনাড়ুর কারুরে মৃত্যুমিছিল আরও বাড়ল। ভোটমুখী তামিলনাড়ুতে অভিনেতা, রাজনীতিক বিজয়ের জনসভায় ব্যাপক ভিড় হয়েছিল গতকাল। তামিলাগা ভেটরি কাজ়াগম অর্থাৎ টিভিকে দলের প্রতিষ্ঠাতার জনসভায় কাতারে কাতারে ভক্ত, অনুগামীদের ঠাসাঠাসি ভিড়। সেই জনসভায় পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুমিছিল। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। মৃতদের তালিকায় রয়েছে শিশুরাও।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, শনিবার তামিলনারুর কারুরে ঘটনাটি ঘটেছে। জানা গেছে, আগামী বছরে বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গতকাল
বিজয়ের জনসভায় অগণিত অনুগামীদের ভিড় জমেছিল। যা সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খেয়েছে পুলিশ। বেলা যত গড়িয়েছে তত ভিড় জমেছে র্যালিতে। এই জনসভাতেই পদপিষ্টের ঘটনা ঘটে। পায়ের তলায় চাপা পড়ে এখনও পর্যন্ত ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিহত ৩৯ জনের মধ্যে নয়জন শিশু, ১৭ জন মহিলা রয়েছেন। ওই জনসাভার জন্য সকাল ১০টা থেকে দুপুর তিনটে পর্যন্ত অনুমতি নেওয়া হয়েছিল। আগেই জানানো হয়েছিল বিজয় সাড়ে ১২টার নাগাদ আসবেন। গতকাল বেলা ১১টা থেকেই জনসভায় ভিড় জমতে শুরু করে। অন্যদিকে অভিনেতা বিজয় ওই জনসভায় পৌঁছন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ।
গতকাল আরও অনেকেই পদপিষ্ট হয়ে আহত হয়েছেন। অনেকেই গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। সকলকেই উদ্ধার করে কারুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় অনেকেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
পুলিশ আধিকারিক ডেভিডসন দেবাশির্বথম জানিয়েছেন, শনিবার রাত ৯টা পর্যন্ত অন্তত ৫০০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। জনসভায় ছয় ঘণ্টা দেরিতে পৌঁছন অভিনেতা বিজয়। ওই জনসভায় ৩০ হাজার মানুষের ভিড় জমেছিল। অতিরিক্ত ভিড়ে অনেকেই মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যান। তাতেই ঘটে পদপিষ্টের ঘটনাটি। রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী এম সুব্রহ্মণ্যন তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছন। পাশাপাশি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
দুর্ঘটনার পর এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্ট করে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন জানিয়েছেন, মৃতদের পরিবার পিছু ১০ লক্ষ টাকা এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য এক লক্ষ টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর থেকে।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরে আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর (RCB) প্রথম শিরোপা জয়ের উদ্যাপন যে ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ে পরিণত হবে, তা কেউই কল্পনা করতে পারেনি। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক পদপিষ্টের ঘটনায় ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে অধিকাংশই কিশোর এবং তরুণ। এই দুর্ঘটনার পর থেকেই স্টেডিয়ামের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কর্ণাটক সরকার একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বহু প্রশাসনিক আধিকারিককে অপসারণ করা হয়েছে এবং কর্ণাটক স্টেট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের (KSCA) সচিব ও কোষাধ্যক্ষও পদত্যাগ করেছেন।
জানা গিয়েছে, এই পরিস্থিতিতে কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে এখনই কোনও সিদ্ধান্ত নয়। এমনকি, সরকারের তরফে কোনও আলোচনাও হয়নি এই বিষয়ে। সবদিকে বিবেচনা করে তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার বেঙ্গালুরুর ক্রিকেট স্টেডিয়ামটি আরও নিরাপদ জায়গায় স্থানান্তরের বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে ভাবছে’। চিন্নাস্বামীর স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা প্রায় ৪০,০০০ হলেও, সেদিন ভিড় ছিল তার দ্বিগুণেরও বেশি। চিন্নাস্বামীর চতুর্দিকে ব্যস্ত রাস্তা, কাবন পার্ক এবং সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত জমি রয়েছে।
ফলে সুরক্ষা পরিকাঠামো বা জরুরি প্রস্থানের পথ তৈরি করা সম্ভব নয়। যদিও চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত এখনও নেওয়া হয়নি, মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের পর স্টেডিয়াম স্থানান্তর প্রসঙ্গে আলোচনার ঝড় উঠেছে। মূল শহরের আশেপাশেই কয়েকটি জায়গা ইতিমধ্যেই বিকল্প হিসেবে ভাবা হচ্ছে, যেখানে নিরাপত্তা ও পরিবহন ব্যবস্থা আরও উন্নত করা যাবে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ক্রীড়া পরিকাঠামোর নিরাপত্তা ও জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার একটি পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা শুরু হয়েছে বলে সরকার জানিয়েছে।