‘কারেন্ট অফ, জল নেই, সরু রাস্তা’, বিজয়ের ব়্যালিতে কীসের থেকে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা? প্রত্যক্ষদর্শীরা জানালেন…...
আজকাল | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: কারুর রাজনৈতিক সভায় ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৩৯ জনের। আহতের সংখ্যা বহু। শনিবার সন্ধ্যায় তামিলাগা ভেট্ট্রি কাজাগম (TVK) প্রধান বিজয়ের সভায় ঘটে গিয়েছে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। উৎসবের আবহ মুহূর্তেই পরিণত হল রাজ্যের অন্যতম ভয়াবহ রাজনৈতিক দুর্ঘটনায়। প্রত্যক্ষদর্শী, নিহতদের পরিবারের সদস্য ও ঘটনাস্থলের চিত্র মিলিয়ে উঠে আসছে আতঙ্ক ও বিশৃঙ্খলার রূপকথা। বিনোদ কুমার, যিনি এক নিহতের ভগ্নিপতি, জানিয়েছেন, চারজনের একটি পরিবার সারাদিন অপেক্ষা করছিল শুধুমাত্র বিজয়কে একবার দেখার জন্য।
তিনি জানিয়েছেন, ‘অনেক রাত হয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু ওরা বিজয় স্যারকে দেখতে চেয়েছিল। সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৭:৩০ পর্যন্ত বিদ্যুৎ চলে যায়। ঠিক তাঁর আগমনের আগে হঠাৎ ভিড়ের মধ্যে চাপাচাপি সৃষ্টি হয়। আমার শ্যালিকা ও তাঁর দুই সন্তান ১১ ও ৭ বছরের সেখানেই শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যায়। সন্তানরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করছিল, কিন্তু মায়ের থেকে আলাদা হয়ে যায়’। ময়নাতদন্তে নিশ্চিত হয়েছে শ্বাসরোধে মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে, জয়ন্তী (৪৫) নামে এক মহিলা তাঁর ছেলে অশ্বিন কুমারনের সঙ্গে সভায় গিয়েছিলেন। অশ্বিন অভিযোগ করেন, পুলিশ ও TVK কর্মীরা কার্যত ভেঙে পড়েছিলেন।
তাঁর অভিযোগ, ‘কেউ আমাদের জানাচ্ছিল না অ্যাম্বুলেন্স কোথায়। ভিড়ের মধ্যে জল ছিল না, রাস্তাও ছিল খুব সরু।’ ঘটনাস্থলে পড়ে ছিল জুতো, ভাঙা খুঁটি, ছেঁড়া পতাকা, বোতল আর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সামগ্রী। অনেককে ধাক্কা খেয়ে পাশের নর্দমায় পড়ে যেতে হয়। কেউ কেউ আশ্রয় নিতে ছাদে উঠতে গিয়ে পড়ে যান। পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এক বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি বলেন, ‘মানুষ বিজয়ের নাম ধরে চিৎকার করছিল। অনেকে বুঝতেই পারেনি যে পদপিষ্ট হয়ে যাচ্ছেন অন্যরা। যারা পড়ে যাচ্ছিল, তাদের ওপরেই অন্যরা হুড়মুড় করে পড়ে যাচ্ছিল।’
ভোরে স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে এসে অবাক হয়ে যান ধ্বংসযজ্ঞ দেখে। কারুর সরকারি হাসপাতালে আহতদের ভিড়ে হাহাকার শুরু হয়। মর্গের সামনে সারারাত ভেসে আসে শোকাহত পরিবারের কান্না। দুর্ঘটনার পর সামাজিক মাধ্যমে শোকবার্তা দেন বিজয়। তিনি লেখেন, ‘অসহনীয় ও বর্ণনাতীত বেদনায় ভেঙে পড়েছি। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।’ ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিনও। আহতদের চিকিৎসা ও মৃতদের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন তিনি।
রবিবার বিজয় তাঁর সমর্থকদের উদ্দেশে আবেগঘন বার্তায় বলেন, কারুর ট্র্যাজেডিতে তিনি ‘অত্যন্ত ভারাক্রান্ত’। নিহতদের পরিবারকে ২০ লক্ষ টাকা এবং আহতদের প্রত্যেককে ২ লক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তার ঘোষণা করেন তিনি। বিজয় আরও বলেন, ‘এই ক্ষতি অপুরণীয়, কোনও অর্থই এই ব্যথা লাঘব করতে পারবে না। তবে TVK সবসময় নিহতদের পরিবারের পাশে থাকবে।’