• গ্রাম্য দেবতার আরাধনা করে পুজো শুরু জলপাইগুড়ি রাজবাড়িতে, মায়ের পরনে কলকাতার বেনারসি
    বর্তমান | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: গ্রাম্য দেবতার আরাধনা করে পুজো শুরু জলপাইগুড়ির রাজবাড়িতে। গতকাল, শনিবার রাতেই দেবীর বোধন হয়েছে। আজ, রবিবার সকালে বেলতলায় ষষ্ঠীপুজো হয়। এরপরই পুজো হয় বট-পাকুড়ের। রাজবংশী সমাজের রীতি মেনে একে একে পুজো হয় গ্রামের সব দেবতার। সন্ধ্যায় দেবীর আমন্ত্রণ, অধিবাস। এবার জলপাইগুড়ি রাজবাড়ির মা দুর্গার পরনে কলকাতার বেনারসি। লক্ষ্মী ও সরস্বতীর জন্যও বেনারসি এসেছে কলকাতার বড়বাজার থেকে। অসমের ধুতি-পাঞ্জাবিতে সেজেছে কার্তিক-গণেশ। রাজবাড়ির দুর্গা তিনটি শাড়ি পরেন। মহালয়ায় চক্ষুদানের সময় দেবীকে রাজপরিবারের তরফে দেওয়া একটি শাড়ি পরানো হয়। এরপর আরও একটি ছাপা শাড়ি পরানো হয়ে থাকে। সবশেষে বেনারসি পরেন দেবী। সবক’টি শাড়ি দেওয়া হয়ে থাকে রাজ পরিবারের তরফে। বিসর্জনের সময় বেনারসি খুলে রেখে দেওয়া হয় রাজবাড়িতে। পরে ওই বেনারসিতে বিয়ে হয় কোনও দুঃস্থ মেয়ের।আজ, রবিবার সকাল থেকেই জলপাইগুড়ি রাজবাড়ির ৫১৬ বছরের ঐতিহ্যবাহী পুজো দেখতে ভিড় জমিয়েছেন বাসিন্দারা। বহু দূর থেকে এসেছেন অনেকে। বহু মানুষ এমনও রয়েছেন যাঁরা, জলপাইগুড়ি রাজবাড়ির পুজো দিয়েই ঠাকুর দেখা শুরু করেন। তাঁদের কাছে, রাজবাড়ির প্রতিমা দর্শন না করলে যেন পুজো জমে না। রাজবাড়ির প্রবীণ সদস্য প্রণত বসু ও তাঁর পুত্রবধূ লিন্ডা বসু নিষ্ঠাভরে পালন করছেন পুজোর যাবতীয় রীতি। লিন্ডা বলেন, মহালয়ায় দেবীর চক্ষুদানের মধ্যে দিয়েই রাজবাড়িতে পুজোর আমেজ শুরু হয়ে যায়। ওইদিনই রাজবাড়ির অন্দরমহল থেকে নিত্যপূজিতা সোনার দুর্গা বৈকুণ্ঠনাথের মন্দিরে আসেন। প্রতিপদে ঘট বসে। ষষ্ঠী থেকে শুরু মৃন্ময়ী মায়ের আরাধনা। জলপাইগুড়ি রাজবাড়ির দেবী তপ্ত কাঞ্চনবর্ণা। এখানে মা দুর্গার বাহন হিসেবে উপস্থিত বাঘ ও সিংহ। সঙ্গে থাকে দুর্গার দুই সখী জয়া ও বিজয়া। পুজো হয় কালিকাপুরাণ মতে।জনশ্রুতি, নরবলি দিয়েই নাকি শুরু হয়েছিল জলপাইগুড়ি রাজবাড়ির পুজো! এখনও বলির রেওয়াজ আছে। তবে বলি দেওয়া হয় হাঁস, পায়রা, পাঁঠা, চালকুমড়ো ও আখ। সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী ও দশমীতে বলি দেওয়া হয় চারটি পাঁঠা। রাজবাড়ির কুলপুরোহিত শিবু ঘোষাল বলেন, অষ্টমীর মাঝরাতে চারজোড়া পায়রা বলির সময় মন্দির চত্বরে বাইরের লোকজন থাকতে দেওয়া হয় না। মন্দিরের চারদিক ঘিরে শুধুমাত্র রাজ পরিবারের সদস্য ও পুরোহিতের উপস্থিতিতে ওই বলি হয়। জলপাইগুড়ি রাজবাড়ির দেবীর ভোগে থাকে করলা নদীর বোয়াল, সঙ্গে মহাশোল, চিতল, ইলিশ, চিংড়ি, পুঁটি। দশমীতে খই-দই নিবেদনের পর পান্তাভাত, ইলিশ মাছের মাথা দিয়ে কচুশাক, পুঁটিমাছ ভাজা ও শাপলার ঝোল দেওয়া হয়। দেবীর বিসর্জন হয় রাজবাড়ির পুকুরেই।
  • Link to this news (বর্তমান)