স্টাফ রিপোর্টার: পাড়ার গণ্ডি ছাড়িয়ে থিমের লড়াই বাড়িতে বাড়িতেও। বিপুল বাজেট নেই। নেই ‘মহার্ঘ্য’ শিল্পী। তবে কল্পনাশক্তি ষোলোআনা। আবাসনের বাসিন্দারা বেঁধেছেন কোমর। রান্না করে, ঘর গুছিয়ে ছেলেমেয়েকে স্কুলে পাঠিয়ে সাজিয়েছেন পুজো অঙ্গন। জোর টক্কর আবাসনে।
দশ বছরে পা দিল রাজারহাটের সিলভার ওক এস্টেট রেসিডেন্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। পুজোর কর্মকর্তা সুদীপ্ত মাইতি জানিয়েছেন, এবারের পুজোর থিম ‘নগর বৃক্ষরোপণ’। শহর বাড়ছে পরিসরে। পুরনো জীর্ণ বাড়ি ছেড়ে স্মার্ট সিটির সংজ্ঞা এখন জিরাফের গলার মতো উঁচু উঁচু ফ্ল্যাট। সুদীপ্তর কথায়, সবুজ যেন না কমে। প্রতিটি ফ্ল্যাটের ব্যালকনিতে থাকুক সবুজ-সতেজ পাতা। সেই চিন্তা থেকেই এই থিম। সিলভার ওক এস্টেট রেসিডেন্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের পুজোপ্রাঙ্গণে এগারোশো গাছ। প্রতিমা তৈরি করেছেন প্রদীপ রুদ্র পাল। বিটপীর সমারোহ থেকে উঁকি দিচ্ছেন মা।
রাজারহাট মেন রোডের পূর্তি অ্যাকোয়া দুর্গাপুজো সেলিব্রেশন কমিটির পুজো এবার পা দিল ন’বছরে। তাদের পুজোর থিম স্বস্তিক। যে চিহ্নর অর্থ সুঅস্তি অর্থাৎ শুভ অস্তিত্ব। যার মধ্যে সকল ধর্মের মানুষের কল্যাণ নিহিত আছে। তাই এবার তুলে ধরা হচ্ছে এই পুজোয়। তিন বছরে পড়ল পিকনিক গার্ডেনের মেঘ মণি কমপ্লেক্সের পুজো। তাদের এবার থিম সকলের জন্য শিক্ষা। পেনসিল, স্লেট, চকে সেজে উঠেছে মণ্ডপ প্রাঙ্গণ। ষষ্ঠী থেকে দশমী দু’বেলা খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করেছে মেঘ মণি কমপ্লেক্সের বাসিন্দারা। এবার পুজোয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে স্মরণ করে মণ্ডপ সাজিয়েছেন আবাসনের বাসিন্দারা। পুজোর চারদিন নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সেজে উঠবে মণ্ডপ প্রাঙ্গণ। এ পুজোয় প্রতিমাশিল্পী তপন ভট্টাচার্য।
রাজারহাটে ভট্টাচার্য অর্থোপেডিক হাসপাতালের কাছে ইউনিমার্ক স্প্রিং ফিল্ড ক্লাসিক। চতুর্থ বছরে পা দিল এই পুজো। চারদিন রাজারহাটের এই আবাসনে কব্জি ডুবিয়ে খাওয়া দাওয়া। পঞ্চমীর দিন আবাসনের বাসিন্দারা আয়োজন করেছিল আনন্দমেলার। যেখানে আবাসিক নিজেদের রন্ধনসত্তা দেখানোর সুযোগ পান। যে যার নিজের হেঁশেলের খাবারের সম্ভার সাজান পুজোপ্রাঙ্গণের আশপাশে। পুজোর কর্মকর্তা রাজা চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ন্যূনতম বিনিময়মূল্য দিয়ে সে খাবার চাখেন আবাসের বাসিন্দারা। ফেলে দেওয়া খবর কাগজ, প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে এবার মণ্ডপ প্রাঙ্গণ সাজিয়েছে ইউনিমার্ক স্প্রিং ফিল্ড ক্লাসিক।
সার্দার্ন বাইপাসের অভিজাত আবাসন সাউথউইনডসে পুজো শুরু হয়েছে চতুর্থীর দিন থেকে। পুজোয় সাইবার অসুর নিয়ে সচেতন করছেন তাঁরা। রাজ্য সাইবার ক্রাইম বিভাগের ডিআইজি অঞ্জলি সিংকে দিয়ে এবার এই আবাসনের পুজো উদ্বোধন করা হয়েছে। পুজো কমিটির সভাপতি চিরদীপ সিনহা জানিয়েছেন, সাইবার অপরাধের সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে চলছে। সাইবার অপরাধীরা আড়ালে থেকে প্রযুক্তির অসৎ ব্যবহার করে সর্বস্বান্ত করে দিচ্ছেন মানুষকে। এর থেকে বাঁচতে হলে মানুষকে সচেতন হতে হবে। কামালগাজি গ্রিন পার্কে কমল রেসিডেন্সিতে সম্প্রীতির পুজো। এখানে পুজোর আয়োজন করেছেন হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। পুজো কমিটির সম্পাদক লিয়াকত হুসেইনের কথায়, এবারে থিম ‘সংস্কৃতি, সম্প্রীতি ও সহাবস্থান’। গল্ফগ্রিন সর্বজনীন দুর্গোৎসব ফেজ থ্রি, ফোর ও সিক্স এবার ৪৩ বছরের পা দিয়েছে। এখানে আবাসিকদের পুজোয় প্রাধান্য পেয়েছে বাঙালিয়ানা। পুজো কমিটির সন্দীপ মজুমদার জানিয়েছেন, সাবেকিয়ানায় পুজো হচ্ছে। ছৌ নাচ ও বাউল গানের মণ্ডপ। দক্ষিণ কলকাতার সাউথ সিটি গার্ডেনের অভিজাত আবাসনে দুর্গা রয়েছে মাটির একচালা ঘরে। এবার থিম ‘গ্রামবাংলা’। পঞ্চমী থেকে এখানে পুজো শুরু। উদ্বোধনের দিন আবাসনের সব মহিলা লালপাড় শাড়ি পরে প্রদীপ হাতে নিয়ে আবাসনের চারপাশ প্রদক্ষিণ করবেন। পুজো কমিটির সদস্য সোমপর্ণা মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, মণ্ডপসজ্জার জন্য বাইরে থেকে কোনও ডেকরেটর নিয়ে আসা হয় না। আবাসিকরা সকলে মিলে মণ্ডপসজ্জা ও প্রতিমার সাজ সরঞ্জাম নিজেরাই তৈরি করে থাকেন।