• গোয়ায় বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে হুমকির অভিযোগে পুলিশের সতর্কবার্তা, পরিবেশ আন্দোলনকারীদের উপর হামলায় উত্তাল রাজ্য...
    আজকাল | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: গোয়ার রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পরিবেশ আন্দোলনকারীদের উপর ধারাবাহিক হুমকি ও হামলার ঘটনায়। দুই সপ্তাহ ধরে চলতে থাকা বিজেপি সরকারের সঙ্গে স্থানীয় কর্মী-সামাজিক কর্মীদের দ্বন্দ্ব নতুন মোড় নেয় ২৬ সেপ্টেম্বর, যখন রাজ্যের পুলিশ বিজেপির এক প্রভাবশালী নেতাকে সতর্কবার্তা দেয়।

    উত্তর গোয়ার প্রাক্তন বিজেপি জেলা সভাপতি মহনন্দ আসনোদকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন পরিবেশকর্মী স্বপ্নেশ শেরলেকর। তার দাবি, আসনোদকার ফোনে তাঁকে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং হুমকি দেন যাতে তিনি আর কখনো বিজেপি কর্মী ও তথাকথিত “জাতীয়তাবাদী”দের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন না। শেরলেকরের অভিযোগের ভিত্তিতেই গোয়া  পুলিশ সতর্কবার্তা জারি করে বিজেপি নেতাকে।

    এর আগেই ১৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে গোয়ার রাজধানী পানাজির উপকণ্ঠে আলোচিত পরিবেশকর্মী রামা কঙ্কোণকরের উপর ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটে। ছয়জন অজ্ঞাত দুষ্কৃতী ছুরি, লোহার রড ও স্টিলের তার দিয়ে তাকে আক্রমণ করে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, হামলাকারীরা কঙ্কোণকরকে মারধর করে রাস্তায় ফেলে দেয় এবং পরে তাঁর মুখে গোবর মাখিয়ে দেয়। বাইকে চেপে পালানোর আগে হামলাকারীরা চারপাশের সাধারণ মানুষকে ভয় দেখাতে অস্ত্রও প্রদর্শন করে।

    এই নৃশংস ঘটনার পরই গোয়া জুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিরোধী দলগুলি রাস্তায় নেমে বিজেপি সরকারকে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতির জন্য দায়ী করে এবং “জঙ্গল রাজ” প্রতিষ্ঠার অভিযোগ তোলে।

    গোয়া ফরওয়ার্ড পার্টি, আম আদমি পার্টি ও কংগ্রেস—প্রায় সব বিরোধী দলই একজোট হয়ে কঙ্কোণকরের উপর হামলার ঘটনায় প্রতিবাদ জানায়। গোয়ার বিরোধী দলনেতা ইউরি আলেমাও স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “আমরা এখানে গোয়ান হিসেবে দাঁড়িয়েছি, রাজনীতিক হিসেবে নয়। উত্তর গোয়ায় একটি গ্যাং সক্রিয়, তাদের মূল মাস্টারমাইন্ডকে চিহ্নিত করে শাস্তি দিতে হবে। এই সরকারকে বিদায় নিতে হবে, মানুষ গোয়ায় আর নিরাপদ নন।”

    তীব্র চাপের মুখে পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজের সাহায্যে হামলাকারীদের শনাক্ত করে। ইতিমধ্যেই পাঁচজন সরাসরি হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, পাশাপাশি আরও তিনজনকে এই মামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক করা হয়েছে।

    কঙ্কোণকর গোয়ায় দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশ রক্ষার আন্দোলন করে আসছেন এবং সরকারি দুর্নীতি ও দায়মুক্তির বিরুদ্ধে সরব ছিলেন। ২০১৭ সালে তিনি আম আদমি পার্টির হয়ে বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাঁর উপর নির্মম হামলার পর গোয়ার কর্মী সমাজ একত্রিত হয়ে ন্যায়বিচারের দাবি তুলেছে। এই প্রেক্ষাপটেই শেরলেকরের অভিযোগ নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

    পরিবেশকর্মীরা বলছেন, এ ধরনের হামলা ও হুমকির মাধ্যমে ভয় দেখিয়ে আন্দোলন থামানো যাবে না। অন্যদিকে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে প্রশ্ন উঠছে—গোয়ার মতো রাজ্যে যদি কর্মী ও আন্দোলনকারীরা নিরাপদ না হন, তবে সাধারণ মানুষ কতটা সুরক্ষিত? গোয়া এখন উত্তাল—একদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন, অন্যদিকে রাজ্য সরকারের উপর চাপ বাড়ছে দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত চালিয়ে অপরাধীদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করার।
  • Link to this news (আজকাল)