• বিজেপি সরকারের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ফুলের জীবন নিয়ে কর্মসূচি, সমালোচকদের দাবি—ভোটের রাজনীতিই আসল লক্ষ্য...
    আজকাল | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘোষণা অনুসারে সমাজসংস্কারক জ্যোতিবা ফুলের ২০০তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন ঘিরে কার্যক্রম চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দেশের ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়কে। নির্দেশটি দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ ড. আম্বেদকর ফাউন্ডেশন। তবে রাজনৈতিক মহল এবং সমাজকর্মীদের একাংশের অভিযোগ, বিজেপি সরকার এই উদ্যোগের মাধ্যমে মূলত ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতিই করছে।

    ঊনবিংশ শতাব্দীর মহারাষ্ট্রের সমাজসংস্কারক জ্যোতিবা ফুলে ও তাঁর স্ত্রী শিক্ষাবিদা সাভিত্রীবাই ফুলে ভারতের দলিত-শূদ্র-নারী শিক্ষার অগ্রদূত হিসেবে পরিচিত। তাঁদের সংস্কারমূলক কাজকে ভর করে গড়ে ওঠে পরে আম্বেদকরবাদী আন্দোলন। সমালোচকদের মতে, আরএসএস ও বিজেপি ঐতিহাসিকভাবে ফুলে বা আম্বেদকরের সমাজসংস্কারী আদর্শকে কখনওই সমর্থন করেনি। এমনকি গত ১৭ সেপ্টেম্বর রাজস্থানে বিজেপি সরকার রাজস্থান বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান সিলেবাস থেকে জ্যোতিবা ফুলে সম্পর্কিত একটি অধ্যায় বাদ দেওয়ায় প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে।

    পিপলস পার্টি অফ ইন্ডিয়া (ডেমোক্রেটিক)-এর সাধারণ সম্পাদক বি. ডি. বোরকার দ্য টেলিগ্রাফ–কে বলেন, “ডানপন্থী সংগঠনগুলির প্রতিবাদের জেরে ‘ফুলে’ চলচ্চিত্র থেকে সেন্সর বোর্ড বেশ কয়েকটি দৃশ্য বাদ দিয়েছিল। অথচ সেগুলি ছিল ইতিহাসনির্ভর এবং বাস্তব। বিজেপি ও আরএসএস কখনও ফুলে কিংবা আম্বেদকরকে যথাযথ সম্মান দেয়নি। আজ ভোটের আগে তাঁদের নাম ব্যবহার করা হচ্ছে।” 

    প্রসঙ্গত, ছবিতে দেখানো হয়েছিল কীভাবে সাভিত্রীবাই ফুলে যখন দলিত ও অস্পৃশ্য শিশুদের পড়াতে স্কুলে যাচ্ছিলেন, তখন উচ্চবর্ণের মানুষজন তাঁর গায়ে গোবর নিক্ষেপ করেছিল। ঐতিহাসিকভাবে সত্য এই দৃশ্যগুলোই সরিয়ে দেওয়া হয় সেন্সর বোর্ডের নির্দেশে।

    এই বছরের এপ্রিলে লোকসভায় বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী বিজেপি-আরএসএসের বিরুদ্ধে সরব হয়ে অভিযোগ করেছিলেন, “তারা প্রতিটি ধাপে দলিত-বহুজনের ইতিহাস মুছে ফেলতে চায়। যাতে জাতপাতের বৈষম্য ও অবিচারের প্রকৃত সত্য সামনে না আসে।” সমালোচকদের মতে, ফুলে-আম্বেদকর আন্দোলন বিজেপি-আরএসএসের মতাদর্শের প্রতি এক মৌলিক চ্যালেঞ্জ। তাই ওবিসি ও দলিত ভোটব্যাঙ্ককে টানার জন্যই ফুলেকে হঠাৎ করে সামনে আনা হচ্ছে।

    আগামী বিহার বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখেই এই পদক্ষেপ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭০ শতাংশ ওবিসি ও তফশিলি জাতিভুক্ত। এই বিশাল জনগোষ্ঠীকেই বিজেপি এখন টার্গেট করছে বলে দাবি বিরোধীদের। সমাজকর্মী বোরকারের কথায়, “আমরা সারা দেশে ফুলের ভাবধারা ছড়িয়েছি। আজ তিনি বহুজন সমাজের আইকন। বিজেপি সরকার প্রকৃত উদ্দেশ্য ছাড়া কেবল রাজনৈতিক লাভের জন্যই ফুলেকে সামনে আনছে।”

    সামাজিক ন্যায়বিচারের আন্দোলনে অগ্রণী জ্যোতিবা ও সাভিত্রীবাই ফুলে দীর্ঘদিন ধরেই দলিত-বহুজন সমাজে সম্মানের আসন পেয়েছেন। তাঁদের ভাবমূর্তি ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে সরকারি কর্মসূচি কতটা ঐতিহাসিক গবেষণার স্বার্থে এবং কতটা নির্বাচনী হিসাব-নিকাশের অঙ্গ, তা নিয়েই এখন দেশজুড়ে তীব্র বিতর্ক।
  • Link to this news (আজকাল)