শবর গ্রামে প্রথম দুর্গাপুজো, কলেজ পড়ুয়াদের উদ্যোগে মাতৃশক্তির আরাধনা
দৈনিক স্টেটসম্যান | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
দুর্গাপুজো মানেই শুধু শহরের আলো, জমকালো পোশাক আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নয়, এবার সেই আনন্দ পৌঁছে গেল এক প্রত্যন্ত শবর গ্রামে। আর এই উদ্যোগ নিলেন কলকাতার মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজের ছাত্রছাত্রী, অধ্যাপকেরা।
পুরুলিয়ার ওন্দা ব্লকের রাজনয়া নামে এক ছোট্ট শবর গ্রামে এই প্রথমবার অনুষ্ঠিত হল দুর্গাপুজো। সাধারণত এই গ্রামে মহিষাসুরের পুজো হয়ে থাকে। তবে শুভ শক্তির আরাধনায় এই নতুন পথে পা রাখল গোটা শবর সমাজ, যার নেপথ্যে কলেজের সাংবাদিকতা ও গণজ্ঞাপন বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের একনিষ্ঠ উদ্যোগ।
ছাত্রছাত্রীরা নিজেরাই তৈরি করেছেন দেড় ফুটের একটি দুর্গা প্রতিমা। খড়, কাগজ ও মাটির সংমিশ্রণে তৈরি এই প্রতিমা নিয়ে তাঁরা পৌঁছে যান শবর গ্রামে। শুধু কলেজের পড়ুয়ারাই নন, তাঁদের সঙ্গে ছিলেন অধ্যাপক, কর্মী সহ প্রায় ৪০ জনের একটি দল। তবে শুধু প্রতিমা পৌঁছে দেওয়াই নয়, এই উদ্যোগের সঙ্গে ছিল বড়সড় সামাজিক বার্তাও। কলেজ পড়ুয়ারা নিজেরাই অর্থ সংগ্রহ করে প্রায় ২৫০ জন শবর শিশু ও মহিলার হাতে তুলে দেন নতুন জামাকাপড়। আয়োজিত হয় খাওয়া-দাওয়ারও।
এর পাশাপাশি কিছু শিশুকে বেছে নিয়ে তাদের সারা বছরের লেখাপড়ার খরচ বহনের দায়িত্বও নিচ্ছে কলেজের সাংবাদিকতা বিভাগ। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, এই ‘পুজো পরিক্রমা’ শুধু সাংবাদিকতা ও গণজ্ঞাপন বিভাগের উদ্যোগ নয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রসায়ন, ইংরেজি, সংখ্যাতত্ত্ব, কম্পিউটার সায়েন্স, ইতিহাসসহ কলেজের অন্যান্য বিভাগও। সবাই মিলে আর্থিক সহায়তা দিয়ে এই মহৎ উদ্যোগে সামিল হয়েছে।
সাংবাদিকতা ও গণজ্ঞাপন বিভাগের প্রধান বিশ্বজিৎ দাস জানিয়েছেন, ‘এই কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সামাজিক দায়িত্ববোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করি। পুজোর খরচ থেকে কিছুটা সরিয়ে রেখে যদি অন্য কাউকে আনন্দ দেওয়া যায়, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’এই উদ্যোগ ১৫ বছরে পড়ল এবারত। আগে শুধু জামাকাপড় বিতরণে সীমাবদ্ধ থাকলেও এবার তা পৌঁছেছে এক নতুন উচ্চতায়, একটি গোটা গ্রামে দুর্গাপুজো পৌঁছে দেওয়ার মধ্যে দিয়ে।
দুর্গাপুজো শুরুর আগে দ্বিতীয়ার দিন গ্রামের মাটিতে পুজো করা হয় থাইল্যান্ড থেকে আনা একটি বেলগাছকে। কলেজের এক প্রাক্তনী জানান, ‘নবপত্রিকার অন্যতম উপাদান বেলগাছ, তাই আমরা বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে দেবীর আরাধনা ও প্রকৃতি রক্ষার বার্তা দিতে চেয়েছি।’ এক ছাত্রী বলেন, ‘এই অভিজ্ঞতা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। শহরে অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কাজ করে, কিন্তু এই প্রত্যন্ত গ্রামে কেউ আসে না। আমরা চাই সবাই বুঝুক, পুজো সবার, আনন্দ সবার।’