• দার্জিলিংয়ের বারোয়ারি দুর্গাপুজোয় নেপালি পুরোহিত, শিলিগুড়ি থেকে এসেছে প্রতিমা-ঢাকিরা
    প্রতিদিন | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: প্রতিমা পুজো বন্ধ করে পাথর পুজোর নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রয়াত জিএনএলএফ সুপ্রিমো সুবাস ঘিসিং। সেই রক্তক্ষয়ী জামানার অবসান হয়েছে অনেকদিন আগে। রাজনৈতিক সমীকরণের সঙ্গে পালটেছে অনেক কিছুই। এখন ওক, পাইনের শ্যামলীমা জড়ানো প্রাণোচ্ছল ঝলমলে শৈলশহর দার্জিলিং। পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে পাহাড়ের শারদ উৎসবে দেবীর আরাধনাতেও। সমতলের মুখাপেক্ষী না-থেকে এবারও নেপালি পুরোহিতেরাই নিজেদের মতো করে সামলে নেবেন দেবী আরাধনা।

    দুর্গাপুজোয় জুড়েছে পাহাড়ের নিজস্ব ‘ফুলপাতি’ উৎসব। এছাড়াও রয়েছে ভাইটিকা। মহালয়া থেকে এবারও পাহাড় মেতে উঠেছে শারদ উৎসবে। পুজোর দিনগুলোতে বিভিন্ন মণ্ডপে রাত আটটা পর্যন্ত সাউন্ডবক্সে এবারও শোনা যাবে নেপালি ভক্তিমূলক গান। এক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় মিলেছে বলেই দাবি গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) কর্তাদের। এবারও ম্যাল থেকে শুরু করে ৬,২০০ ফুট উঁচু সুনতালে গ্রাম অথবা গরুবাথান, মানজিংয়ের মতো দার্জিলিং ও কালিম্পং পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকায় পুজোর আয়োজন হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি অনুদান পেয়ে এবার দার্জিলিং ও কালিম্পং পাহাড়ে পুজো আয়োজনের সংখ্যা বেড়ে দুশোর বেশি হয়েছে।

    শান্ত উন্নয়নমুখী পাহাড়ে শারদ উৎসবের উচ্ছ্বাসে যেমন পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে একইভাবে পালটেছে দেবী পুজোর আদল। একসময় সমতলের পুরোহিতরা ছিলেন পাহাড়ে দেবী আরাধনার ভরসা। সুবাস ঘিসিং ফতোয়া জারির পর থেকে ভয়ে তাঁরা পাহাড়মুখী হননি। পরিস্থিতি সামাল দিতে নেপালি পুরোহিতরা হাত বাড়ান। সেই শুরু। বঙ্গীয় পুরোহিত ও যজমান সঙ্ঘের সভাপতি জয়ন্ত চক্রবর্তী বলেন, “পাথর পুজোর ফতোয়া জারির আগে দুর্গা পুজোর সময় সমতলের পুরোহিতরা পাহাড়ে পুজো করতেন। কিন্তু সুবাস ঘিসিং ও বিমল গুরুংয়ের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের জন্য পুরোহিতরা যাওয়া বন্ধ করে দেন। এখন পাহাড়ে পুজো সংখ্যায় বাড়লেও সমতলের পুরোহিতদের কেউ যায় না। নেপালি পুরোহিতরা নিজেদের রীতি মেনে পুজো দেন। এবারও সেটাই হবে।”

    অবশ্য শৈলশহরের বেদান্ত আশ্রম, রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম, জোর বাংলো ঠাকুরবাড়ি, দার্জিলিং থানার পাশে নৃপেন্দ্র নারায়ণ বাঙালি হিন্দু হলে আয়োজিত পুজোয় এখনও বাঙালিয়ানার ছোঁয়া রয়েছে। তাদের নিজস্ব পুরোহিত দেবীপুজো করেন। নৃপেন্দ্র নারায়ণ বাঙালি হিন্দু হলে পুজোর দিনগুলোতে বাংলা গানে মেতে ওঠে প্রাঙ্গণ। সন্ধ্যায় ঢ্যাং কুড়কুড় ঢাকের বোলের ছন্দে চলে আরতি। সেখানে ভিড় জমান পর্যটকরা। এখানে শিলিগুড়ি থেকে প্রতিমা আসে। ঢাকিরা উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকার। কার্শিয়াং শহরে রাজরাজেশ্বরী হলের পুজোতেও অম্লান বাঙালি ঐতিহ্য। এখানেও পুরোহিত নিজেদের। সন্ধ্যায় থাকে বিভিন্ন অনুষ্ঠান।

    জিটিএ কর্তারা জানান, সময়ের সঙ্গে পাহাড়ের অনেক কিছুই পালটেছে। একসময় টয় ট্রেনের কামরায় তুলে শিলিগুড়ি থেকে প্রতিমা আনা হত। ঢাকিরা আসত সুদূর নদিয়া থেকে। বিকেলের মধ্যে মণ্ডপ ফাঁকা হয়ে যেত। এখনও সমতল থেকে প্রতিমা আসে। নেপালিভাষীরা যেখানে পুজোর আয়োজন করছেন সেখানে ঢাকি থাকে না। কিছু বাঙালি ঘরানার পুজোতেই ঢাক বাজে। অন্য পুজো মণ্ডপে সন্ধ্যা আটটা পর্যন্ত সাউন্ড বক্স বাজে। ভিড় থাকে। আদতে জিটিএ পাহাড়ের দুর্গাপুজোকে পর্যটনের অন্যতম অঙ্গ হিসেবে দেখছে। ওই কারণে মহাসপ্তমীতে ‘ফুলপাতি’ উৎসব এবং দশমীতে ভাইটিকাকে জুড়ে দেওয়া হয়েছে।” ম্যাল দুর্গা পুজো কমিটির অন্যতম কর্তা সুমন লোকান্দ্রি জানান, পুজোর দিনগুলোতে মণ্ডপে পর্যটকদের ভিড় বেশি থাকে। তাঁদের কথা ভেবে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যর পরিবেশে বিভিন্ন আয়োজন থাকে।
  • Link to this news (প্রতিদিন)