সুতপা গুহ, আগরতলা: শুরু হয়ে গিয়েছে বাঙালির প্রাণের উত্সব দুর্গাপুজো। আজ ষষ্ঠী। শাস্ত্রমতে আজকের দিনেই দেবী সপরিবারে মর্তে আগমন করেন। রীতিনীতি মেনেই প্রতিটি মণ্ডপে দেবীর বোধন হবে। যদিও তার আগেই রাস্তায় জনজোয়ার। শুধু কলকাতা নয়, বাঙালির আর এক রাজ্য ত্রিপুরাতেও। জাঁকজমক এবং থিমের রমরমায় উত্তর-পূর্বের ছোট্ট রাজ্যটিও পিছিয়ে নেই। নজর কেড়েছে আগরতলার নেতাজি প্লে ফোরাম সেন্টার থেকে রামঠাকুর সংঘ, লালবাহাদুর ব্যায়ামাগারের থিম। যদিও ত্রিপুরাবাসীর কাছে পুজো মানেই দুর্গাবাড়ি... রাজবাড়ির দুর্গাপুজো। দশভুজা নন, দেবী এখানে দ্বিভুজা। তারই আরাধনায় মাতে আট থেকে আশি।
গোটা ত্রিপুরায় বনেদি বাড়ি এবং বিভিন্ন মন্দির ছাড়াও ২,৯৬৫টি মণ্ডপে পুজোর আয়োজন করা হয়েছে। সংখ্যাটা কম নয়। কিন্তু আগরতলায় উজ্জয়ন্ত প্রাসাদের সামনের দুর্গাবাড়ির কাছে সবই ফিকে। মাণিক্য রাজাদের আমলেই শুরু হয়েছিল এই পুজো। রাজাদের রাজধানী বদলের সঙ্গে সঙ্গে এই মন্দিরেরও স্থানবদল হয়েছে। প্রথমে ত্রিপুরার রাজাদের রাজধানী ছিল উদয়পুরে, দুর্গাবাড়িও ছিল সেখানে। এরপর অমরপুর এবং আগরতলার পুরাতন হাভেলিতে মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আগরতলায় দুর্গাবাড়ি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মহারাজা কৃষ্ণ কিশোর মাণিক্য বাহাদুর। কথিত আছে, একবার দুর্গাপুজোর সময় দেবীকে অন্নভোগ নিবেদন করা হয়। তখন মহারানি সুলক্ষণা দেখেন, মা দুর্গা দশ হাত দিয়ে অন্নগ্রহণ করছেন। সেই দৃশ্য দেখে অজ্ঞান হয়ে পড়েন তিনি। সে রাতেই মহারানি সুলক্ষণাকে দেবী স্বপ্নাদেশ দেন, পরের বছর থেকে যেন দু’হাতেই দুর্গা প্রতিমার পুজো করা হয়। সেই থেকেই দ্বিভুজা রূপেই মা পূজিতা হয়ে আসছেন দুর্গাবাড়িতে। যদিও প্রতিমার পেছনে আটটি হাত থাকে, সেটি দেখা যায় না। দশমীতে দেবীকে ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান দেখতে দেশ-বিদেশ থেকে ভিড় জমান অসংখ্য দর্শনার্থী। প্রতিমা বিসর্জন হয় এখনও কাঁধে করেই।
চতুর্থী থেকেই উদ্বোধন হয়ে গিয়েছে আগরতলার বিগ বাজেট পুজোগুলির। নেতাজি প্লে ফোরামে এবার কম্বোডিয়ার বৌদ্ধস্তূপের আদলে করা হয়েছে মণ্ডপ। তবে থার্মোকল নয়, ব্যবহার করা হয়েছে পরিবেশবান্ধব উপকরণ খোবলা পাতা। প্রতিমা তৈরি করেছেন কলকাতার রমেন পাল এবং রঞ্জিত পাল। দেবী দুর্গাকে যখন অসুরবধের জন্য সকল দেবদেবী অস্ত্র দিয়ে সজ্জিত করেছেন, সেই দৃশ্যটিই তুলে ধরা হয়েছে প্রতিমায়। রামঠাকুর সংঘের এবারের থিম ‘যন্ত্রের যন্ত্রণা, বিজ্ঞান অভিশাপ না আশির্বাদ’! প্রতিবছরের মতোই বাংলার নবদ্বীপের নাড়ুগোপাল দাস তৈরি করেছেন প্রতিমা। মণ্ডপসজ্জায় রয়েছেন নবদ্বীপেরই পরিমল ভৌমিক। বনমালিপুরের লালবাহাদুর ব্যায়ামাগারের এবারের ভাবনা ‘বসতি’। প্রকৃতিকে ভালোবেসে কিভাবে বিভিন্ন প্রতিকূল জায়গায়তেও বসতি গড়ে উঠেছে, সেটাই দেখানো হয়েছে মণ্ডপে। ত্রিপুরার দুই শিল্পী সুবল পাল এবং বিপ্লব দাস রয়েছেন প্রতিমা এবং মণ্ডপসজ্জায়।