সংবাদদাতা, দেওয়াহাট: কোচবিহার রাজ আমলে শুরু হওয়া শতাব্দী প্রাচীন বড়দেবীর পুজোয় আজও নররক্ত উৎসর্গ করে অষ্টমীতে মধ্যরাতে গুপ্ত পুজো হয়। এছাড়াও অষ্টমীর পুজোয় মহিষ বলির পাশাপাশি পাঁঠা, পায়রা বলি দেওয়া হয়। রবিবার মহাষষ্ঠীতে বড়দেবীর পুজো দেখতে ভিড় করেন ভক্তরা। কোচবিহার শহরবাসী বড়দেবীর মুখদর্শন করেই সাধারণত পুজো পরিক্রমা শুরু করেন।
পাঁচশো বছরেরও বেশি প্রাচীন এই পুজোর সূচনা হয়েছিল কোচবিহারের মহারাজা নরনারায়ণের সময়ে। নরবলি বন্ধ হলেও নররক্ত উৎসর্গ করে গুপ্ত পুজোর প্রথা আজও হয়ে আসছে। মন্দিরের পুরোহিত দেবনাগরী ভাষায় তালপাতায় লেখা মন্ত্র পাঠ করে পুজো করেন।
অষ্টমীর সকাল থেকে বড়দেবীর পুজো দেখতে দেবীবাড়ি মন্দির চত্বরে কয়েক হাজার ভক্তের সমাগম হয়।
কথিত আছে, স্বপ্নাদেশ পেয়ে মহারাজা নরনারায়ণ বড়দেবীর পুজো শুরু করেন। প্রথম থেকেই দেবীবাড়িতে বড়দেবীর পুজো হয়ে আসছে। শুরুর দিকে নরবলির প্রথা ছিল। তা বন্ধ হয়ে যায়।
সেই সময় থেকে নরবলির জায়গায় নররক্ত উৎসর্গ করার রেওয়াজ শুরু হয়। বলি দেওয়া হয় চালের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি মানুষের প্রতীক একটি পুতুল। মহারাজা নরনারায়ণের আমলে ছাগল, মহিষ, কচ্ছপ থেকে পাখি বলিও হতো।
নবমীতে দেবীর অন্নভোগে থাকে বোয়াল মাছ দিয়ে রান্না করা খিচুড়ি। এখন রাজা বা রাজত্ব না থাকলেও আজও প্রাচীন এসব প্রথা মেনে পুজো হচ্ছে দেবীবাড়িতে।
শ্রাবণ মাসের শুক্লা অষ্টমী তিথি থেকে পুজোর সূচনা হয়। গুঞ্জবাড়ি ডাঙ্গোরাই মন্দিরে ময়নাকাঠ দিয়ে যূপচ্ছেদন পুজোর মাধ্যমে পাঁচশত বছরেরও বেশি প্রাচীন কোচবিহার রাজ আমলের বড়দেবীর পুজোর সূচনা হয়। রাধাষ্টমীতে ময়নাকাঠ নিয়ে আসা হয় বড়দেবীর মন্দিরে।
ময়নাকাঠের মহাস্নান ও বিশেষ পুজো হয়। তিনদিন ধরে বড়দেবীর মন্দিরে ময়নাকাঠকে হাওয়া খাওয়ানোর প্রাচীন প্রথা মেনে চলা হয়। এরপর ময়নাকাঠে দেবীর মূর্তি তৈরি করেন প্রতিমাশিল্পী। সাধারণত দুর্গার সঙ্গে লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক ও সরস্বতী থাকে। কিন্তু বড়দেবীর সঙ্গে থাকে জয়া এবং বিজয়া। বাহন হিসেবে থাকে বাঘ।
মন্দিরের পুরোহিত নীরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, রাজ আমলে শুরু হওয়া এই পুজোয় প্রাচীন রীতি মেনেই যুগযুগ ধরে পুজো হয়ে আসছে। অষ্টমীতে মহিষ, পায়রা বলির দেওয়া হয়। অষ্টমীর মধ্যেরাতে হয় গুপ্ত পুজো। ওই পুজোয় নররক্ত উৎসর্গ করা হয়।