এবার পুজোর আনন্দটাই নেই ওদের ভিটে-মাটি গিলেছে নদী, বাঁধের উপর বসবাস
বর্তমান | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সংবাদদাতা, মানিকচক: রাজ্য জুড়ে দুর্গাপুজোর আনন্দে মাতোয়ারা ৮ থেকে ৮০। মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে পুজোর্চনা। কিন্তু মালদহের মানিকচকের ভূতনির রিং বাঁধে আশ্রয় নেওয়া বহু পরিবার এই আনন্দ থেকে অনেকটা দূরে। বন্যা পরিস্থিতি, গঙ্গা নদীর ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে দু’মাস ধরে তাঁরা বাঁধের উপর বসবাস করছেন। এই অবস্থায় তাঁদের কোনও পুজো নেই। বর্তমানে জল কমছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাঁরা কোথায় যাবেন, সেই দুশ্চিন্তা তাঁদেরকে গ্রাস করেছে।
ভূতনির উত্তর চণ্ডীপুর অঞ্চলের রিং বাঁধে গত দু’মাস ধরে বসবাস করছেন কালুটোন টোলা, বসন্তটোলা, কেশরপুর এলাকার বহু পরিবার। গঙ্গা ভাঙনে বসন্তটোলা ও কালুটোন টোলা গ্রাম প্রায় নিশ্চিহ্ন। কেশরপুর বিস্তীর্ণ এলাকায় ভাঙন হওয়ায় ভূমিহীন বহু পরিবার। সেখানে বসবাসের জায়গা থেকে বাড়ি সমস্তটাই গ্রাস করেছে গঙ্গা। আর বসবাসকারীরা বর্তমানে ঠাঁই নিয়েছেন ভূতনির নতুন রিং বাঁধের উপর। দু’মাস ধরে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রশাসনের দেওয়া ত্রাণের খাবার খেয়ে দিন কাটছে তাঁদের। বর্তমানে গঙ্গার জলও কমেছে, বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে ছন্দে ফিরছে ভূতনি। চারদিকে শুরু হয়েছে পুজার আমেজ, দিকে দিকে হরেক রকম সাজে সেজে উঠেছে পুজো মণ্ডপ। নতুন জামা কাপড় পরে মণ্ডপের উদ্দেশে যাচ্ছে আবালবৃদ্ধবণিতা। কিন্তু সেই আমেজ অদৃশ্য ভূতনির রিং বাঁধের উপর আশ্রয় নেওয়া দুর্গতদের মধ্যে। পরিবারগুলি দুই বাই চার ফুটের ঘিঞ্জি ত্রিপলের ঘরের নীচে প্রশাসনের দেওয়া এক বেলা খাবার খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। রাতে নেই পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা। এমনই এক দুর্গত বীরবল মাহাত। পরিবারে স্ত্রী ছাড়াও রয়েছে দুই নাবালক সন্তান। পুজো কীভাবে কাটছে এবিষয়ে প্রশ্ন করতেই তিনি আক্ষেপের সুরে বলেন, আমাদের পুজো বলে এবার কিছু নেই। নদীর জল কমেছে, কিন্তু বাড়ি ফিরতে পারছি না। যাব কোথায়! জায়গা বাড়ি সমস্তটাই নদীতে। জানি না কতদিন বাঁধে থাকতে হবে। আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ নতুন জামাকাপড় কিনে দিতে পারেনি সন্তানদের। প্রশাসন আমাদের স্থায়ী বাসস্থানের ব্যবস্থা করুক।
যদিও রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কালুটোন টোলার ৪৬ জন বাসিন্দাদের পাট্টার জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে পাট্টা নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভাঙন কবলিত এলাকার একেবারে পাশে রাজ্য সরকার জমি চিহ্নিত করায় নিতে অস্বীকার করেছেন কালুটোন টোলার বাসিন্দারা। তারপর প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিকল্প কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি। তাই পুজোর আনন্দ ভুলে আগামী দিন কোথায় যাবেন, কী করবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না তাঁরা। এবিষয়ে স্থানীয় গৃহবধূ অঙ্গুরী মাহাত বলেন, পুজোর আনন্দ আমাদের শেষ করেছে গঙ্গা। ভাঙনের স্থায়ী সমাধান না হওয়ায় গঙ্গা প্রতি বছর আমাদের ঘরছাড়া করছে। সরকার আমাদের ভূতনি ছাড়া অন্য জায়গায় পাট্টা জমির ব্যবস্থা করুক। আমাদের জমি বলে কিছু নেই। তাই রাজ্য সরকারের সাহায্যই শেষ ভরসা। জমি পেলেই সেটাই আশীর্বাদ ভেবে আমরা এই উৎসবের আনন্দে মাতব।
ভিটে-মাটি হারিয়ে রিং বাঁধে বসবাস। - নিজস্ব চিত্র।