• জামবনীর পানিগ্ৰাহী পরিবারে দেবীর স্বপ্নাদেশেই বন্ধ ছাগবলি
    বর্তমান | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্ৰাম: জামবনীর বিজরাবাঁধি গ্ৰামের পানিগ্ৰাহী পরিবারে দেবী দুর্গা পটেই পূজিত হন। এইপুজো তিনশো বছরের পুরনো। দেবীর স্বপ্নাদেশেই ছাগ বলি বন্ধ হয়েছিল। তারপর থেকে শুধু চ্যাং মাছ,আখ ও চালকুমড়ো বলি হয়।

    জামবনী ব্লকের পড়িহাটি প্রাচীন জনপদ। এখানে ভগ্ন বহুজৈন মন্দির, বৌদ্ধস্তূপ আছে। ধর্ম প্রচার ও রাজ্যবিস্তারের পাশাপাশি আবার কখনও বাণিজ্যের কারণে বাইরের মানুষ এই এলাকায় এসেছেন। 

    বছরের পর বছর এখানেই থেকেছেন।  স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে বাইরের সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটেছে। পানিগ্ৰাহী পরিবারের পূর্বপুরুষরা মূরভঞ্জ রাজার জমিদারির কাজে উড়িষ্যা থেকে পড়িহাটি এসেছিলেন। স্থান বদল হলেও এই পরিবারে দেবী দুর্গার আরাধনা বন্ধ হয়নি। পুজোয় ছাগ বলির প্রচলন ছিল। পরিবারের সদস্যরা জানান, একবার হাঁড়িকাঠে ছাগ বলির রক্ত দেখে বাড়ির পুরোহিতও হাহাকার করে ওঠেন। দেবী দুর্গার স্বপ্নাদেশ পাওয়ার কথা বলেছিলেন তিনি।নিরীহ পশু হত্যা এরপরেই বন্ধ হয়। শুধু এখন চ্যাং মাছ, আখ ও চালকুমড়ো বলি  হয়। 

    প্রায় ৭ ফুট উচ্চতার দেবী দুর্গার পট মন্দিরের ভিতর ঝোলানো হয়।প্রথামতো পটে দেবী দুর্গার ডানে লক্ষ্মী, গণেশ ও বামে সরস্বতী,কার্তিক রয়েছেন। চালচিত্রে শিবের বসে থাকা অবস্থার ছবি রয়েছে। প্রথা মেনেপুজোর পর পটের দুর্গার বিসর্জন হয়না। কাপড় ও কাগজে সযত্নে মুড়িয়ে তা মন্দিরে রাখা হয়। একই দেবীর পটে পরের বছর ফের পুজো হয়। 

    বাড়ির সদস্য বিকাশ পানিগ্ৰাহী বলেন,ময়ূরভঞ্জ রাজার জমিদারির কাজে আমাদের পূর্বপুরুষরা এখানে এসেছিলেন। পরবর্তীতে এই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যান তাঁরা। আদি বাড়ির পুজো এখানে নতুন করে শুরু করেন। তিনশো বছর ধরে পুজো হয়ে চলেছে।বাড়ির কুলপুরোহিত দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয় ছাগ বলি বন্ধ করতে বলেছিলেন।পুজোয় আত্মীয়,স্বজনরা দূরদূরান্ত থেকে বাড়ি আসেন।

    পরিহাটি পঞ্চায়েতের উপপ্রধান শেখ সাজাদ আলি বলেন, পানিগ্ৰাহী বাড়ির পুজো বহু প্রাচীন।পুজো,পরব, উৎসবের বৈচিত্র্যে ঐক্য গড়ে উঠেছে আমাদের এলাকায়।গবেষক ও প্রত্নতাত্ত্বিক সুশীলকুমার বর্মন বলেন, ঝাড়গ্রাম মিশ্র সংস্কৃতির ভূমি। 

    রাজ পরিবারের এখানে ক্ষমতার বদল হয়েছে। নানা ধর্মীয় আন্দোলনের ঢেউ বয়েছে। স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে বাইরের সংস্কৃতিরমিশ্রণ ঘটেছে। দেবীর পটে অস্ত্র, ঘট, হাতি ও ঘোড়ার শৈলীতে সেই ছবিইধরা পড়ে। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)