নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: মহাষষ্ঠীর সন্ধ্যা নামতেই উৎসবের আমেজে মাতোয়ারা হয়ে উঠল নদীয়া। সকাল থেকে শুরু হওয়া দর্শনার্থীর ভিড় সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গেই রূপ নিল জনস্রোতে। চারদিকে আলোর ঝলক, ঢাকের তালে তাল মেলানো মানুষের উচ্ছ্বাস আর ঢেউয়ে মতো ছড়িয়ে পড়া ভিড়— সব মিলিয়ে এক অপূর্ব আবহে মেতে উঠল গোটা জেলা। কৃষ্ণনগর থেকে রানাঘাট, কল্যাণী থেকে নবদ্বীপ— প্রতিটি প্রান্ত যেন হয়ে উঠল বাংলার সবচেয়ে বড় উৎসবের মহামিলনক্ষেত্র।
কৃষ্ণনগরের প্রায় সব পুজোই পঞ্চমীর মধ্যে উদ্বোধন হয়ে গিয়েছে। যদিও কল্যাণী এবং রানাঘাটের ক্ষেত্রে বড় বাজেটের পুজোগুলি শুরু হয়ে গিয়েছে তৃতীয়া থেকেই। ফলে টানা জনজোয়ার দেখা যাচ্ছে দক্ষিণ নদীয়ার শহর দু’টিতে। ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় যা জন সুনামিতে পরিণত হয়। যা আন্দাজ করেই ভিড় সামলাতে মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী। প্রতি বছরের মতো এবছরেও রানাঘাট, কল্যাণী, তাহেরপুর, বাদকুল্লা এলাকায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। নির্দিষ্ট রুট ও পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে পুলিশ ও পূরসভাগুলি।
এদিন দুপুর থেকেই কালীগঞ্জের পলাশী আদি বারোয়ারি, জুড়ানপুরের হিজুলি রাজোয়ারপাড়া, পশ্চিমপাড়া এবং নাকাশিপাড়ার ধর্মদা যুব সঙ্ঘের পুজোতে উপচে পড়ে ভিড়। কৃষ্ণগঞ্জের নাঘাটা ও মাজদিয়া গ্রাম বারোয়ারিও মেতে ওঠে ষষ্ঠীর বোধনের সঙ্গে সঙ্গেই। পিছিয়ে নেই কৃষ্ণনগরের পুজোগুলিও। পাত্রবাজার ও ঘূর্ণির বিভিন্ন মণ্ডপ যেন মানুষের মাথা গোনা দায় এদিনের সন্ধ্যায়। তাহেরপুর, বীরনগর, বাদকুল্লায় ষষ্ঠীর ভিড় ছাপিয়ে যায় পঞ্চমীকে। তাহেরপুরের ক্লাব সম্মিলনীর প্যান্ডেল দীঘার জগন্নাথ মন্দিরের আদলে নির্মিত। যা দর্শনার্থীদের কাছে হয়ে উঠেছে বিশেষ আকর্ষণ। বামেদের শেষ দুর্গ তাহেরপুর অঞ্চলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের তৈরি এই স্থাপত্য মণ্ডপে উপস্থাপিত হওয়ায় উৎসবের মাঝেও চলেছে রাজনৈতিক তরজা। কল্যাণীর আইটিআই মোড়ের লিউমিনাস ক্লাব, রথতলা সর্বজনীন আর নাইন এ স্কোয়ার নিয়ে মানুষের উন্মাদনা বেড়ছে ষষ্ঠীতে। যেখানে মানুষ ভিড় জমিয়েছেন কলকাতা থেকে এসেও। রানাঘাট শহরের পূর্ব ও পশ্চিমপ্রান্তের বড় বাজেটের পুজোগুলিতে ষষ্ঠীর রাতেই ঢল নামল অগণিত মানুষের। সড়কপাড়া সর্বজনীন আর ব্রতী সংঘের ধারাবাহিক জনপ্রিয়তার পাশাপাশি শহরের পূর্ব প্রান্তের কয়েকটি অভিনব থিম-ভিত্তিক পুজো এবারও দর্শনার্থীদের কাছে হয়ে উঠেছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। তুলনায় পিছিয়ে পশ্চিম রানাঘাট।
এদিকে, ষষ্ঠীর সকাল থেকেই বৈষ্ণবতীর্থ নবদ্বীপের প্রতিটি পুজো মণ্ডপে ভিড় উপছে পড়ে। সেই ছবি ছিল মধ্যরাত পর্যন্ত। নবদ্বীপ টাউন ক্লাব পরিচালিত আনন্দময়ী মহিলা সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি, শ্রীশ্রী যোগমায়া মহিলা সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি, বোসপাড়া মহিলাবৃন্দের পুজো, অফিসঘাট রোডের নারী শক্তি পুজা কমিটি ও শিবশক্তি দুর্গাপুজো কমিটি, শ্রীশ্রী কৃষ্ণকালী বারোয়ারি সমিতি ও স্মৃতি সঙ্ঘের সহযোগিতায় রূদ্রাণী মহিলা দুর্গোৎসব কমিটি, নবদ্বীপ সর্বজনীন শ্রী শ্রী দুর্গোৎসব কমিটি, পোড়ামাতলা, নবদ্বীপ পোড়াঘাট গৌরগঙ্গা স্পোর্টিং ক্লাব, আগমেশ্বরী বাজার বারোয়ারি, ষষ্ঠীতলা চারপল্লি দুর্গোৎসব কমিটি সহ প্রতিটি পুজা মণ্ডপে ভিড় হয়েছে। তেহট্ট ও পলাশী পাড়ার বড় পুজোগুলি সপ্তমী থেকে পূর্ণমাত্রায় শুরু হলেও ষষ্ঠীর সন্ধ্যা থেকেই নাজিরপুর বাগাডোবা ইয়ং সোসাইটি, দেবনাথপুর, বেতাই নেতাজি স্মৃতি পাঠাগার সহ একাধিক মণ্ডপ জমে উঠল দর্শনার্থীর পদচারণায়। শান্তিপুরের বাঘআঁচড়া রামকৃষ্ণ সারদা আশ্রমে পুজে।