স্বামীর মৃত্যুর পর চপের দোকান ৮০ ছাড়ালেও লড়াই জারি
বর্তমান | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সংবাদদাতা, কৃষ্ণনগর: বয়স আশি পেরিয়েছে বহু আগেই। কিন্তু জীবনের সঙ্গে লড়াই থামেনি আজও। কৃষ্ণনগর শহরের মানিকপাড়ায় প্রতিদিন সন্ধ্যায় চপ-বেগুনি ভেজে চলেছেন। তিন দশকের কাছাকাছি সময় চপ-বেগুনির দোকানের উপর ভর করেই সংসার চালান সুমিতা ব্যাপারী।
পঁচিশ বছর আগে স্বামী মারা যান সুমিতাদেবীর। তখন থেকেই সংসারের হাল ধরেছেন তিনি। সামান্য পুঁজি নিয়ে রাস্তার ধারে খুলেছিলেন ছোট্ট দোকান। প্রথম দিকে লজ্জা-সঙ্কোচ ছিল। কিন্তু, কিন্তু লজ্জা যে পেট ভরাবে না, সেটা বুঝে গিয়েছিলেন দ্রুত। তারপরই ওই দোকানই হয়ে ওঠে সুমিতাদেবীর একমাত্র সম্বল। এখনও বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত নিরন্তর পরিশ্রম করে চলেছেন তিনি।
সুমিতাদেবী বলেন, ‘আমি এই দোকানের পাশে ভাঙা ঘরটাতে একাই থাকি। স্বামী মারা যাওয়ার পর জীবন বাঁচাতে এই ব্যবসা শুরু করি। আমার তিন ছেলে ও দুই মেয়ে। সবার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তিন ছেলের কেউই আমায় দেখে না। সঙ্গেও কেউ থাকে না। দুই মেয়ে মাঝে মধ্যে একটু খোঁজ নেয়। এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছে।’
প্রতিদিন দুপুর থেকেই আলু সেদ্ধ করা, চপের মশলা তৈরি করা, বেগুন কাটা সবই নিজের হাতে করে থাকেন সুমিতাদেবী। সরকার থেকে তেমন কোনও সাহায্য পান না। জমির কাগজে কিছু সমস্যা রয়েছে। বাংলা আবাসের ঘরও জোটেনি। সুমিতাদেবীর অবশ্য খুব আক্ষেপ নেই। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলছিলেন, ‘আর যে ক’টা দিন বাঁচব, ততদিন এই দোকানই আমার জীবনের ভরসা। এই দোকানই আমাকে কঠিন সময়ে রক্ষা করেছে। ছেলেমেয়েদের মানুষ করেছি। এখন পুজো চলছে। তারপর শীতকাল। এই সময়টা চপ-বেগুনির ভালো বিক্রি হয়। এবারও হবে।’ স্থানীয়রা বলছেন, ‘সুমিতাদেবীর হাতে যাদু রয়েছে। ওঁর চপ আর বেগুনির স্বাদই আলাদা।’