আগামী চারদিন দুর্গারূপে পূজিত হবেন দেবী তারা ও নলাটেশ্বরী মা
বর্তমান | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
বলরাম দত্তবণিক, রামপুরহাট: তারাপীঠে কোনও দেবীর মৃন্ময়ী মূর্তি গড়ে পুজোর চল নেই। তাই বহু বছর ধরেই দেবী তারা-ই কুমারী দুর্গারূপে পুজিত হয়ে আসছেন এই সিদ্ধপীঠে। শুধু তাই নয়, দেবী কুমারী রূপে কোলাসুরকে বধ করেছিলেন। তাই নারীজাতির প্রতি শ্রদ্ধা ও নারীশক্তির জাগরণ ঘটাতেই বহু বছর থেকেই মা তারা কুমারী দুর্গারূপে পুজিত হয়ে আসছেন। মহাষ্টমী তিথিতে বিশেষ আকর্ষণীয় তারা অঙ্গে দেবী দুর্গার মহাযজ্ঞ। হয় কুমারী পুজোও। অন্যদিকে সতীর ৫১ পীঠের অন্যতম নলহাটির নলাটেশ্বরী কালী মা। তিনিও দেবী দুর্গা রূপে পুজিত হন। প্রাচীনকাল থেকেই এই রীতি চলে আসছে। নিষ্ঠা আর চিরাচরিত রীতিই এই দুই পুজোর মূল আকর্ষণ। তাই এই দুই পুজো ঘিরে এলাকাবাসীর বাড়তি আবেগ জড়িয়ে রয়েছে।
প্রাচীনকাল থেকেই সপ্তমী থেকে দশমী, দেবী তারাকে দুর্গারূপে পুজো হয়ে আসছে। মহাষ্টমী তিথিতে বিশেষ আকর্ষণীয় তারা অঙ্গে দেবী দুর্গার মহাযজ্ঞ। বছরের এই একমাত্র দিনে মায়ের সম্মুখে মহাযজ্ঞের আয়োজন হয়। সেইসঙ্গে চলে কুমারী পুজো। কথিত আছে, তারা অঙ্গে দুর্গাপুজো নাটোরের রাজ পুরোহিত থেকে হয়ে আসছে। ওইদিন গর্ভগৃহের সম্মুখের দরজা বরাবর নাটমন্দিরে কলাগাছ বসানো হয়। ন’জন ব্রাহ্মণ দ্বারকা নদ থেকে ৯টি ঘট ভরে নাটমন্দিরের যজ্ঞবেদির সামনে স্থাপন করে। এরপরই সকাল ১০টা নাগাদ বাজনা সহযোগে কারণবারি ও ঘৃতাহুতি সহযোগে শুরু হয় মহাযজ্ঞ। একদিকে চলে চণ্ডীপাঠ। অন্যদিকে চলে কুমারী পুজো। তারাপীঠের প্রবীণ সেবাইত প্রবোধ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, দেবী দুর্গাকে কুমারী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। কোলাসুর একসময় স্বর্গ ও মর্ত্যের অধিকার নেওয়ার ফলে দেবতাগণ মহাকালীর শরণাপন্ন হন। দেবগণের ডাকে সাড়া দিয়ে দেবী পুর্নজন্ম-এ কুমারীরূপে কোলাসুরকে বধ করেন। তাই অশুভ শক্তির বিনাশকারী কুমারী দেবী দুর্গার প্রতীক হিসেবে তারাপীঠ মন্দিরে পুজিত হন। মধ্যাহ্নে মাকে খিচুড়ি, পোলাও, পাঁচরকম ভাজা, তরকারি, মাছ, বলির পাঁঠার মাংস, পায়েস, মিষ্টি ও কারণবারি দিয়ে ভোগ নিবেদন করা হয়। মন্দির কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় বলেন, তারাপীঠে কোনও দুর্গাপুজো না হওয়ায় উৎসবের আনন্দ থেকে অনেক দূরে থাকতে হয়। কিন্তু আমরা তারা অঙ্গে দেবী দুর্গার পুজোর মাধ্যমে সেই আক্ষেপ মিটিয়ে নিই।
নলরাজাদের গড় হিসেবে পরিচিত এতিহ্যবাহী পাহাড়ের উপরে অবস্থিত নলাটেশ্বরী মায়ের প্রাচীন কালী মন্দির। জনশ্রুতি রয়েছে, নলাটেশ্বরী মায়ের পুরো নাম দেবী পার্বতী মাতা ঠাকুরাণি। বর্তমানে যেখানে মায়ের মন্দির সেখানে একটি বটবৃক্ষে বিশাল আকারের মৌমাছির বাসা ছিল। সেই মৌচাকের মধু পান করতেন দেবী পার্বতী। মন্দিরের সেবাইত আশিস চক্রবর্তী বলেন, দক্ষযজ্ঞের সময় এখানে মায়ের কন্ঠনালি পড়েছিল। পরবর্তীকালে এলাকার রামস্মরণ দেবশর্মা স্বপ্নাদেশ পেয়ে মৌচাক থেকে থেকে মায়ের নল উদ্ধার করে পুজো শুরু করেন। পরে রানি ভবানী মায়ের মন্দির নির্মাণ করেন। বহু যুগ পর সাধনার মাধ্যমে কুশলানন্দ ব্রহ্মচারী এখানে সিদ্ধিলাভ করেন। বছরের অন্যান্য সময় দেবী কালী রূপে পুজিতা হন মা নলাটেশ্বরী। কিন্তু দুর্গাপুজো তিথিতে মা নলাটেশ্বরীকে দুর্গা রূপে পুজো নিবেদন করা হয়। সপ্তমীর দিন মাকে পোলাও, পাঁঠার মাংস দিয়ে ভোগ নিবেদন করা হয়। অষ্টমীতে লুচি-পায়েস। নবমীতে প্রচুর ছাগ বলিদান হয়। দুপুরে মাকে খিচুড়ি পাঁচরকম ভাজা, পাঁচ তরকারি ও মাংস, চাটনি, পায়েস দিয়ে ভোগ নিবেদন করা হয়। দশমীর দিন অবশ্যই মায়ের ভোগে লাগে দই ও ক্ষির। পুজোর চারদিন মাকে ডাকের সাজ, সোনার মুকুট সহ নানা অলঙ্কারে সজ্জিত করা হয়।