• বঙ্গাধিকারী রাজবাড়ি ও লালবাগের ঘোষবাড়ি আজও প্রাচীন ঐতিহ্য মেনেই হয় পুজো
    বর্তমান | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, লালবাগ: উৎসব মুখর বাংলায় বারো মাসে তেরো পার্বণ। তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ পার্বণ দুর্গাপুজো। মাঝে আর মাত্র কয়েকটা দিন। সারা বছরের দীর্ঘ প্রতীক্ষার শেষে প্রবল উৎসাহ, উদ্দীপনা ও সমারোহের মধ্য দিয়ে বাংলা জুড়ে পালিত হবে দুর্গোৎসব। এদিকে দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে রাজবাড়ি, জমিদার ও বনেদি বাড়িগুলিতে পুজোর প্রস্তুতি তুঙ্গে। প্রতিমা তৈরি থেকে, মন্দির দালান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও রং করার কাজ চলছে। লক্ষ্য, দেবীর আহ্বান ও বন্দনায় যেন কোনও ত্রুটি না থাকে। 

    মুর্শিদাবাদের লালবাগ মহকুমায় বেশ কয়েকটি প্রাচীন পুজো আজও পুরনো ঐতিহ্য ও নিয়ম-নিষ্ঠা উপাচার ও বৈদিক মন্ত্রোচ্চারণের মধ্য দিয়ে হয়ে আসছে। তার মধ্যে রয়েছে ডাহাপাড়ার বঙ্গাধিকারী রাজবাড়ির ৩২১ বছরের এবং লালবাগের ঘোষবাড়ির পুজো ২০০ বছরের বেশি প্রাচীন। লালবাগ মহকুমার ডাহাপাড়ার রাজবাড়ির দুর্গাপূজা ১৭০৫ সালে বঙ্গাধিকারী দর্পনারায়ণ রায় শুরু করেছিলেন। প্রাচীন প্রথা মেনে রথের দিন দেবীর কাঠামোয় গঙ্গামাটির প্রলেপ দিয়ে পুজোর ঢাকে কাঠি পড়ে। কালের নিয়মে ডাহাপাড়া রাজবাড়ি আজ আর নেই। তবে দুর্গামন্দিরটি আজও ডাহাপাড়া রাজাদের ভিটেয় যথাস্থানে রয়েছে। কয়েক বছর আগে জীর্ণ মন্দিরটি সংস্কার করা হয়। 

    রায়বাড়ির পুজোর আগের মতো জৌলুশ না থাকলেও প্রতি বছর নিয়ম করে রাজভিটেয় অবস্থিত ওই মন্দিরে উমার আরাধনা হয়। এখন মন্দির রং ও প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে। রায়বাড়ির সদস্যরা কর্মসূত্রে অন্যত্র থাকলেও দুর্গাপুজোয় সকলে ডাহাপাড়ায় হাজির হন। পুজোর দিনগুলি উৎসবের মেজাজে কাটান তাঁরা।   লালবাগের ঘোষবাড়ির পুজো। প্রায় দুশো বছর আগে পুজো শুরু করেছিলেন রাজা গঙ্গানারায়ণ রায়। তাঁর ছেলে মহেন্দ্রনারায়ণ রায়ের সময় থেকে পুজোর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। মহেন্দ্রবাবুর মেয়ে চন্দ্রপ্রভার সঙ্গে রাজকুমার ঘোষের বিয়ে হয়। তাঁদের ছেলে ধরনীকুমার ঘোষ। পরবর্তীতে এই বাড়ির দুর্গাপুজো ধরনীকুমার ঘোষের পুজো নামে পরিচিতি লাভ করে। আগে ষষ্ঠী থেকে নবমী এই চারদিন মোষ ও পাঁঠা  বলি হতো। কিন্তু, ১৯৬৬ সালে খাঁড়ার কোপ ঠিকমতো না পড়ায় বলি হয়নি। সেই থেকে বলি প্রথা বন্ধ হয়ে যায়। তবে প্রতীকী বলি হয়। বলির খাঁড়াটি মণ্ডপে রাখা থাকে। মহালয়ার দিন সন্ধ্যায় মণ্ডপে প্রদীপ জ্বালানো হয়। সেই প্রদীপ কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো পর্যন্ত জ্বলতে থাকে। আগে দশমীর দিন ভাগীরথীতে নৌকা বাইচ করে মশালের আলোয় দেবীকে বিসর্জন দেওয়া হতো। এখন বাইচ হয় না। আতসবাজির মাধ্যমে দেবীকে বিসর্জন দেওয়া হয়। দুর্গাপুজো উপলক্ষ্যে লালবাগ ঘোষবাড়িতে প্রায় একমাস ধরে নাটক ও যাত্রা মঞ্চস্থ হতো। নাটক ও যাত্রা দেখতে নবাব পরিবারের সদস্য ও জমিদাররা আসতেন। কলকাতার নামীদামি নাটক ও যাত্রা দল আসত। নাট্যসম্রাট শিশির ভাদুড়ি ঘোষবাড়ির মঞ্চে শাহজাহান নাটক মঞ্চস্থ করেছিলেন। এই নাটকে ঔরঙ্গজেবের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ঘোষবাড়ির সদস্য অরুণ ঘোষ।
  • Link to this news (বর্তমান)