‘তত্ত্বমসি’ থেকে ‘জীর্ণবাড়ি’ গ্রামীণ পাঁশকুড়াতেও চমক
বর্তমান | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: প্রত্যেকের মধ্যেই আছে ঈশ্বরের আভাস। একে অপরের পাশে দাঁড়ানোই আসল মানব ধর্ম। এরকম ভাবনাকে সামনে রেখে পাঁশকুড়ার মাংলই মৌচাক সেবাশ্রমের থিম তত্ত্বমসি অর্থাৎ ‘তুমি সেই’। এখানে পুজোর থিমের দেবী দুর্গার পিছনে পর পর দাঁড়িয়ে একজন গৃহবধূ, একজন কৃষক রমণী, একজন শিক্ষিকা এবং একজন মহিলা চিকিৎসক। দেবী দুর্গার জোড়া হাতে ত্রিশূল ছাড়া অন্য আটটি হাতে কাস্তে, চক ডাস্টার, স্টেথস্কোপ এবং গৃহস্থালির জিনিস রয়েছে। মানুষের মধ্যেই দেবতার অবস্থানকে তুলে ধরতে তত্ত্বমসি থিম।
মাংলই গ্রামের গৃহবধূরা সারাবছর ধরে নিজেদের জমানো অর্থ জড়ো করে শারদীয়া শক্তি আরাধনার নামে এখানে ৪৫বছর ধরে পুজো করছেন। স্থানীয় মৌচাক সেবাশ্রম তাঁদের পাশে দাঁড়ায়। এখানকার লক্ষ্মীর ভাণ্ডার উপভোক্তাদের অনেকেই এক-দু’মাসের টাকা পুজোয় অনুদান দেন। এভাবেই মাংলই গ্রামের পুজো হয়ে আসছে। পুজো কমিটির সভাপতি মুন্না চক্রবর্তী বলেন, নারী শক্তির মধ্যেও দেবীর অবস্থান রয়েছে। সেই ভাবনাকে থিমে ধরা হয়েছে।
রাতুলিয়া দুর্গোৎসব কমিটির থিম জীর্ণবাড়ি। জাতীয় সড়কে রাতুলিয়া বাসস্টপে ওই পুজো ঘিরে এলাকায় উৎসবের আবহ তৈরি হয়। ঘরে ঘরে আত্মীয়স্বজন হাজির হন। জীর্ণবাড়ির আদলে মণ্ডপ বেশ নজরকাড়া। পুজো কমিটির সভাপতি মানস মিশ্র বলেন, এবার পুজো ৩৮ বছরে পড়ল। প্রত্যেক দিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান রয়েছে।
পাঁশকুড়ার ঘোষপুর হাইস্কুল মাঠে হাউর ইউনাইটেড স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন কাঠের পুতুল ও পটচিত্রের সমন্বয়ে সুসজ্জিত মণ্ডপ তৈরি হয়েছে। পুজো উপলক্ষ্যে মেলা বসেছে। হাউর ও সংলগ্ন এলাকা থেকে প্রচুর দর্শনার্থী পুজোয় শামিল হন। কমিটির কোষাধ্যক্ষ অরিন্দম রায় বলেন, এবার আমাদের পুজো ১৬ বছরে পা দিল।
যশোড়া ব্রাইট স্টার ক্লাবের পুজো এবার তৃতীয় বছরে পড়ল। এলাকার মহিলারা জোট বেঁধে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের এক-দুই মাসের পাওনা টাকা পুজোয় অনুদান দিয়ে এখানে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। মৌসুমি মাজি, শিলা বেরা, ববিতা মাজি, মৌমিতা চক্রবর্তীরা পুজোর গুরুদায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। পুজো কমিটির সেক্রেটারি বিকাশ মাজি বলেন, বাড়ির মেয়েরা সক্রিয়ভাবে পুজোয় এগিয়ে আসায় আমাদের পক্ষে অনেক সুবিধা হয়েছে।
পুরুষোত্তমপুর যুবগোষ্ঠীর পুজো ঘিরে এলাকায় ব্যাপক উন্মাদনা তৈরি হয়েছে। রবিবার ঘটা করে পুজোর উদ্বোধন হয়। এখানকার পুজো ৪৭বছরে পড়ল। বাজেট প্রায় ১০ লক্ষ টাকা। ডাবুয়াপুকুর নবজাগরণ দুর্গোৎসব কমিটির পুজো এবার ১১ বছরে পা দিল। এই পুজোতেও মহিলারা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। বাজেট প্রায় আট লক্ষ টাকা।
চতুর্থী থেকেই আলোয় রোশনাইয়ে ভাসছে শহর পাঁশকুড়া। গ্রামীণ পাঁশকুড়াও নানা থিম ও আলোকসজ্জায় চমক রেখেছে। ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় দলবেঁধে মণ্ডপে মণ্ডপে ভিড় নামে। একঘেঁয়েমি জীবন থেকে সাময়িক অবসরে আনন্দ ও হুল্লোড়ে মেতেছেন পাঁশকুড়াবাসী।