• পুলিশ স্টেশন না কি বিজেপি অফিস? অগ্নিগর্ভ লাদাখে  পুলিশের বিরুদ্ধে বিজেপি অফিসের মতো আচরণের অভিযোগ!
    আজকাল | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: লেহ শহরের সোনাম নার্বু মেমোরিয়াল হাসপাতালে দাঁড়িয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন পদ্মা দোলকেস। তাঁর ভাই সোনাম চোসফেল—যিনি দীর্ঘদিন ধরে পিঠ ও হাঁটুর সমস্যার চিকিৎসাধীন—তাঁকে লাদাখ পুলিশ নির্বিচারে গ্রেপ্তার করেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন তিনি।দোলকেস জানান, গত বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) তাঁর ভাই বাড়ি ফেরার পথে কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী (CRPF)-এর জওয়ানরা তাঁকে মাটিতে শুয়ে পড়তে বলে এবং মারধর করে। হাত মাটিতে লেগে নোংরা হয়ে গেলে পুলিশ দাবি করে, চোসফেল নাকি পাথর ছুঁড়ছিলেন। পরদিন (২৫ সেপ্টেম্বর) হাসপাতালে থেকে ফোন আসে—চোসফেল অজ্ঞান হয়ে পড়েছেন এবং তাঁকে ইমারজেন্সি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।

    চোসফেল একটি ট্রাভেল এজেন্সি চালান। তিনি লাদাখ পুলিশের হাতে আটক প্রায় ৫০ জনের মধ্যে অন্যতম, যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের সময় হিংসায়  জড়িত থাকার। আন্দোলনের মূল দাবি ছিল লাদাখে ষষ্ঠ তফসিলের আওতায় সাংবিধানিক সুরক্ষা ও রাজ্যের মর্যাদা। “হত্যাকারী-ধর্ষকরা ঘুরে বেড়াচ্ছে, আর আমার ভাইকে ওষুধও দেওয়া হচ্ছে না”—ক্ষোভ প্রকাশ করেন দোলকেস। পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনীর দমন-পীড়নে লেহ শহরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। অন্তত চারজন বেসামরিক মানুষ পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন এবং প্রায় ১২০ জন আহত—যার মধ্যে ৩৫ জন নিরাপত্তা কর্মীও রয়েছেন।

    লাদাখ বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহম্মদ শফি লাসসু বলেন, “অনেক নিরপরাধ মানুষকে শুধু রাস্তায় পাওয়া গিয়েছে বলেই ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ। আদালতে তাদের জবাবদিহি করতে হবে। এভাবে দমন করলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।” শহরের বহু রাজনৈতিক নেতা ও সিভিল সোসাইটি কর্মী হয় আত্মসমর্পণ করেছেন, নয়তো জেলে বন্দি। শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় লাদাখ স্বায়ত্তশাসিত হিল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলের দুই কাউন্সিলর স্‌মানলা দর্জে নুর্বো ও ফুতসগ স্ট্যানজিন সেপাক পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। তাঁদের সঙ্গে আত্মসমর্পণ করেন লাদাখ বৌদ্ধ অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি সাভিন রিগজিন ও এক গ্রাম প্রধান।

    চলতি গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে লেহ শহরে প্রবল ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অনেক পরিবার হাসপাতালে ছুটে আসছে নিখোঁজ আত্মীয়দের খোঁজে। রিগজেন চোসগায়াল নামে এক গাড়িচালক অভিযোগ করেন, তাঁর ভাই সোনাম রিঞ্চেন—একজন শিল্পী—হাসপাতালে আহতদের রক্তদান করার পর ফেরার পথে সিআরপিএফ জওয়ানদের হাতে ধরা পড়েন এবং নির্মমভাবে মারধর খান। “ভাল কাজ করতে গিয়েছিল, তার অপরাধ কোথায়? প্রকৃত দোষীদের শাস্তি দিন, কিন্তু নিরপরাধদের কেন জেলে পুরছেন?”—আক্ষেপ চোসগায়ালের। গণআন্দোলনের কর্মীরা বলছেন, যদি এই দমন না থামে তবে আন্দোলনকারীরা ‘জেল ভরো আন্দোলন’-এ নামতে বাধ্য হবেন।

    লেহ শহরের দ্রুক লাদাখ হোটেলের মালিক লবজাং রিঞ্চেন জানান, পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনী বুধবার রাতে তাঁর হোটেলে হানা দেয়। তাঁদের খোঁজ ছিল তাঁর ভাইপো—উপর লেহ ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর ফুনসগ স্ট্যানজিন সেপাগের। রিঞ্চেন বলেন, “রাতের বেলা হোটেলের বিদেশি অতিথিদের রুম তল্লাশি করতে চাইছিল তারা। আমি বাধা দিলে আমাকে থানায় ডেকে নিয়ে গিয়ে হুমকি দিল যে বিজেপি কর্মীদের ভরা একটি চার্টার্ড প্লেন আসবে এবং তারা আমার হোটেল ও বাড়ি জ্বালিয়ে দেবে। তখন মনে হচ্ছিল আমি যেন থানায় নয়, বিজেপির দপ্তরে বসে আছি।”তিনি অভিযোগ করেন, থানায় তাঁকেও মারধর করা হয় এবং পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

    ঘটনার জেরে লাদাখে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। অন্তত দুটি ভবন আগুনে পুড়েছে, একাধিক সরকারি দপ্তরে ভাঙচুর হয়েছে। পদ্মা দোলকেস শেষ কথায় বলেন, “আমি এখনও মাকে বলিনি যে আমার ভাই জেলে। শুনলে হয়তো তিনি আর বাঁচবেন না। ও কোনো ভুল করেনি। যদি ছেড়ে না-ই দেয়, অন্তত আমাকে ওর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দিক।” লাদাখের আন্দোলন—যা প্রথমে শান্তিপূর্ণ দাবিদাওয়ার ভিত্তিতে শুরু হয়েছিল—এখন ক্রমেই এক দমনের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। পুলিশের নির্বিচার গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের অভিযোগ পরিস্থিতিকে আরও অগ্নিগর্ভ করে তুলছে।

     
  • Link to this news (আজকাল)