• এবার পদ্মের দেদার জোগান, লাগাতার বৃষ্টিতে মহার্ঘ গাঁদা, অপরাজিতা
    প্রতিদিন | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নব্যেন্দু হাজরা: কখনও অতিবৃষ্টি, কখনও বন‌্যা, কখনও আবার ভোরের শিশির। প্রতিবছরই কোনও না কোনও কারণে ধাক্কা খায় পদ্মের চাষ। বিশেষত অতিবৃষ্টিতে পচন ধরে পদ্মে। ফলে অষ্টমীর দিন সন্ধিপুজোয় চাহিদা অনুযায়ী পদ্মের জোগান পাওয়া যায় না। আনতে হয় ভিনরাজ‌্য থেকে। দামও বেড়ে যায় অনেকটা। কিন্তু এবার সে সমস‌্যা নেই। নাগাড়ে বৃষ্টি হলেও পদ্মের ব‌্যাপক চাষে এবার ঘাটতি নেই। উলটে অন‌্য রাজ্যে পাঠানোর মতোও অবস্থা রয়েছে বলে জানাচ্ছেন ফুলচাষিরা।

    সন্ধিপুজোয় রাজ্যে চাহিদা এক কোটি পদ্মের। অন‌্যবার অন্তত ৩০ শতাংশ পদ্ম বাইরে থেকে আনতে হয়।  এবার অবশ‌্য পরিস্থিতি আলাদা। পদ্মের চাষ ভালো হওয়ায় এবার পুজোয় দাম ততটা বাড়ার সম্ভাবনা নেই।

    তবে দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে অন‌্যান‌্য ফুলের। কারণ নিম্নচাপজনিত অতিবৃষ্টি। ফুলচাষিরা জানাচ্ছেন, মূলত দোপাটি-গাঁদা-অপরাজিতা-রজনীগন্ধা-সহ বিভিন্ন ধরনের পাপড়িযুক্ত ঝুরো ফুলের মধ্যে বৃষ্টির জল ঢুকে গিয়ে পাপড়ি পচে ফুলের গুণমান নষ্ট হয়েছে। ওই ফুলে দাগ এসে যাওয়ার কারণে ওই ফুল বিক্রি হয়নি। বাইরের জেলা বা রাজ্যেও তা পাঠানোও যায়নি।

    এমনকী পুজোর সময় ওই চারদিনের ব্যাপক পরিমাণ ফুলের চাহিদা মেটানোর জন্য ওই ধরনের ফুল হিমঘরেও রাখতে পারেননি চাষি-ব্যবসায়ীরা। নিচু এলাকার কিছু ফুলের বাগানে ইতিমধ্যে জল জমে গিয়েছে। এছাড়াও খানিকটা রোদ্দুর বেরোলে নরম প্রকৃতির ফুল গাছগুলি মরে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে কারণে পুজোর ওই কয়েকদিনের বিপুল চাহিদা পূরণে ফুলের জোগানের সংকট দেখা দেবে। স্বভাবতই দাম বাড়বে।

    প্রতিবছর সন্ধিপুজোয় মায়ের পায়ে ১০৮টি পদ্ম লাগে। ওইদিন রাজ্যে পদ্মের চাহিদা থাকে এক কোটি। তবে কৃষকরা জানাচ্ছেন, গতবারের তুলনায় এবার পদ্মের চাষ বেশ ভালোই হয়েছে। ফলে জোগানে ঘাটতির কোনও সম্ভাবনা নেই। বরং অন‌্য রাজ্যেও রপ্তানি হতে পারে।

    জগন্নাথঘাটের ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ীদের কথায়, এ রাজ্যে বীরভূম ও বাঁকুড়া ও বর্ধমানে বড় বড় জলাশয়ে পদ্মের চাষ হয়। এছাড়াও হাওড়া ও পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন নয়ানজুলি ও জাতীয় সড়কের ধারে খালগুলিতে পদ্ম চাষ করেন অনেক ফুলচাষি। বৈশাখ থেকে ভাদ্র, এই সময়কালেই মূলত পদ্মের চাষ হয়। এবার পদ্ম চাষের মনোরম আবহাওয়া থাকায় ফুল যথেষ্ট ভালো হয়েছে। সেই সংখ‌্যাটা এক কোটি পারও করে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই ফুল হিমঘরে তুলে রাখা হয়েছে। গত বছর মহালয়ার পরে পিস প্রতি পদ্মের দর মিলেছিল ১৩ থেকে ১৫ টাকা। অষ্টমীর দিন ১৯-২০ টাকাও পিস প্রতি দাম মিলেছে। এ বার সেখানে এখন পর্যন্ত পিস প্রতি দর মিলছে মাত্র সাড়ে তিন থেকে পাঁচ টাকা। এমন চললে পুজোর সময়ে হয়তো টাটকা ফুলের দর আট থেকে দশ টাকা পাওয়া যাবে বলে জানাচ্ছেন ফুল ব‌্যবসায়ীরা।

    সারা বাংলা ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নারায়ণচন্দ্র নায়ক বলেন, “এবার প্রচুর পদ্মের চাষ হয়েছে। ফলে দাম ততটা না-ও বাড়তে পারে। কিন্তু অন্যান্য পাপড়িযুক্ত বিভিন্ন ঝুরো ফুলের সংকট দেখা দেবে। ফলস্বরূপ দামও বাড়বে।’’
  • Link to this news (প্রতিদিন)