এ যেন অন্ধকার কাটিয়ে আলোর ঝলকানি! দীর্ঘ অনিশ্চয়তার অবসান। এক রাতে কার্যত গোটা পরিবার হারানো, ট্যাংরার দে পরিবারের কিশোর সরকারি হোম ছেড়ে আদৌ কোনও দিন চেনা চৌহদ্দিতে ফিরতে পারবে কিনা— এক সময়ে সেটাই বড় প্রশ্ন ছিল। অবশেষে আইনি জটিলতা কাটিয়ে পুজোর আগেই হোম ছেড়ে পরিবারের কাছে ফিরল ওই কিশোর। পছন্দের মানুষের সঙ্গেই কাটছে তার এ বছরের পুজোর দিনগুলি।
গত ফেব্রুয়ারির এক রাতে তছনছ হয়ে গিয়েছিল ট্যাংরার দে পরিবারের বছর ১৪-র ওই কিশোরের জীবন। মা-কাকিমা এবং বোনের মৃত্যু কার্যত চোখের সামনে হতে দেখেছিল সে। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে একটি গাড়ি ‘দুর্ঘটনায়’ আহতদের উদ্ধার করতে গিয়ে ট্যাংরার বাড়িতে পরিবারের বাকি তিন জনের দেহ পড়ে থাকার কথা জানতে পেরেছিল পুলিশ। দুর্ঘটনায় আহত কিশোরের বাবা প্রণয় দে, কাকা প্রসূন দে পুলিশকে এ কথা জানায়। এর পরে ট্যাংরা থানার পুলিশ গিয়ে তেতলা বাড়ি থেকে ওই কিশোরের মা সুদেষ্ণা, কাকিমা রোমি এবং বোন প্রিয়ম্বদার নিথর দেহ উদ্ধার করে। পরিবারের তিন সদস্যকে খুনের অভিযোগে পরবর্তী কালে গ্রেফতার হয় কিশোরের বাবা প্রণয় এবং কাকা প্রসূন।
বাবা-কাকার গ্রেফতারির পরে কার্যত অনাথ ওই কিশোরের ঠাঁই হয়েছিল সরকারি হোমে। প্রায় পাঁচ মাসেরও বেশি সময় সেই সরকারি হোমই ছিল তার ঠিকানা। অবশেষে সেখান থেকে কিশোর ফিরল তার পছন্দের ঠিকানায়। রাজ্য শিশু অধিকার ও সুরক্ষা কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই কিশোর বরাবরই তার কাকিমার মা-বাবার কাছে ফিরতে চেয়েছিল। তাঁরাও রাজি হওয়ার পরে এ নিয়ে আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়।
তা শেষ করে দিন কয়েক আগে সরকারি হোম থেকে ওই কিশোরকে তাঁর দাদু-দিদিমার (কাকিমার বাবা-মা) কাছে পাঠানো হয়েছে। কমিশনের উপদেষ্টা অনন্যা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘দিন তিনেক আগেই ও দাদু-দিদিমার সঙ্গে বাড়ি ফিরেছে। ওর পরবর্তী জীবনের জন্য যাতে কোনও ধরনের অনিশ্চয়তা না থাকে, তার জন্য আমরা সব রকম ভাবে ওই কিশোরকে সাহায্য করব।’’
সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, সরকারি হোম থেকে দাদু-দিদিমার সঙ্গে ফেরার দিন বেশ হাসিখুশিই ছিল কিশোর। যাওয়ার আগে হোমের আর সকলের সঙ্গে দেখা করে কথাও বলে সে। গাড়িতে ওঠার আগে কিশোরের চোখে-মুখে ছিল পরিজনকে ফিরে পাওয়ার আনন্দ। নতুন বাড়িতে ফিরে পুজোয় সে কী করবে, তার পরিকল্পনাও হোমের বাকিদের জানিয়েছিল সে। এমনকি, এত দিন হোমে থেকে যে কয়েক জন বন্ধু তার হয়েছে, তাদের সঙ্গে দেখা করতে মাঝেমধ্যে সে সেখানে আসবে বলেও জানিয়ে গিয়েছে।
সূত্রের খবর, দাদু-দিদিমার সঙ্গে ফিরে ওই কিশোর আনন্দেই আছে বলে জানতে পেরেছেন কমিশনের কর্তারা। সেখান থেকেই সে যাতে স্কুল করতে পারে, সেই প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। নতুন ঠিকানায় কমিশনের কয়েক জন প্রতিনিধি গিয়ে ওই কিশোরের সঙ্গে ইতিমধ্যে দেখা করে এসেছেন। আপাতত সব অন্ধকার পিছনে ফেলে নতুন শুরুর অপেক্ষায় দিন গুনছে ট্যাংরার ওই কিশোর।