এটা নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ? দুর্গাপুজোয় ইউনেস্কোর স্বীকৃতি নিয়ে মোদীর দাবি খারিজ করল তৃণমূল
আনন্দবাজার | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
কলকাতার দুর্গাপুজো কেন্দ্রের চেষ্টাতেই ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেয়েছে বলে দাবি করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই দাবিকে নস্যাৎ করল তৃণমূল। তারা একে ২০২৬-এর নির্বাচনী প্রচারের অংশ বলে কটাক্ষ করেছে। তাদের পাল্টা দাবি, ‘‘মিথ্যাচার করেছেন মোদী।’’
রবিবার ‘মন কি বাত’-এর ১২৬তম পর্বে দেশবাসীর উদ্দেশে বক্তৃতা করতে গিয়ে কলকাতার শারদোৎসবের ইউনেস্কোর স্বীকৃতি নিয়ে মোদী দাবি করেন, ‘আবহমান ঐতিহ্য’ স্বীকৃতি পাওয়ার নেপথ্যে কেন্দ্র সরকারের অবদান আছে। এই দাবির পরে তিনি আরও বলেন, ‘‘এ বার ছট পুজোকেও ইউনেস্কোর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’’ ষষ্ঠীতে প্রধানমন্ত্রীর সেই দাবির পাল্টা তৃণমূলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, স্বীকৃতির নেপথ্যে রয়েছে রাজ্য সরকার। তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের দাবি, ‘‘উনি (প্রধানমন্ত্রী) ডাহা মিথ্যা বলেছেন। বামফ্রন্ট সরকার পুজোর বিষয়ে কোনও নজর দেয়নি। মমতাদি সরকারে এসে পুজোর ঐতিহ্য, অর্থনীতি, কর্মসংস্থান ও বিশ্বায়নে নজর দিয়েছেন। সব ফাইল রাজ্যই তৈরি করে পাঠিয়েছিল।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘কোনও ক্ষেত্রে কেন্দ্র ডাক পিওনের ভূমিকা নিলে সেই কৃতিত্ব তাদের হয়ে যায় না।
রাজ্যের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, “২০২১ সালে বাংলার শারদোৎসব ইউনেস্কোর স্বীকৃতি অর্জন করেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরাসরি উদ্যোগেই সমস্ত নথি ও প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী তখন বহুবার বাংলায় এসেছেন। কিন্তু কোথাও তাঁকে এ নিয়ে মন্তব্য করতে দেখা যায়নি।’’ চন্দ্রিমার প্রশ্ন,‘‘ হঠাৎ ২০২৫ সালে এসে কেন তিনি এই দাবি করছেন? এটা কি ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ?” তাঁর দাবি, “বাংলার মানুষ জানেন শারদোৎসবকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলে ধরার কৃতিত্ব সম্পূর্ণরূপে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।” তৃণমূলের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী এই প্রসঙ্গ উত্থাপন করে আসলে ভোটমুখী রাজনীতির কৌশল নিয়েছেন। বিধানসভা নির্বাচনের আগে বাংলা ও বাঙালির আবেগকে ব্যবহার করাই তাঁর উদ্দেশ্য।
প্রসঙ্গত প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, “কয়েক বছর আগে ভারত সরকারের উদ্যোগেই কলকাতার দুর্গাপুজো ইউনেস্কোর বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তকমা পেয়েছে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মানে গোটা বিশ্ব ভারতের ঐতিহ্যকে চিনবে, বুঝবে এবং তার সঙ্গে যুক্ত হবে।" প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করেই শুরু হয়েছিল রাজনৈতিক বিতর্ক।
বিজেপির স্থানীয় নেতৃত্বের অবশ্য দাবি, আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের সংস্কৃতিকে স্বীকৃতি পাইয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে মোদী সরকারের অবদান অস্বীকার করা যাবে না। ছট পুজোর স্বীকৃতি নিয়ে কেন্দ্রের প্রচেষ্টা তারই প্রমাণ।
দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে বিজেপি ও তৃণমূলের ‘দাবি’ ফের জাতীয় রাজনীতির অঙ্গনে উঠে এল। কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে কৃতিত্বের এই দড়ি টানাটানি শারদোৎসবকে ঘিরে নতুন করে রাজনৈতিক বিতর্ক উস্কে দিল।